বার্তাকক্ষ
ঢাকা: সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইড কমিটির চেয়ারম্যান ও হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম বলেছেন, আইন ধনীদের জন্য বেশি এগিয়ে চলে। এর কারণ হলো ধনীদের অর্থ আছে।
তারা ভালো আইনজীবী রাখতে পারে। ভালো অর্থ আইনজীবীর পেছনে খরচ করতে পারে। এর কারণে আইন ধনীদের দিকে বেশি ধাবিত হয়। এটাই বাস্তব। আর গরিবের অর্থ না থাকার ফলে আইন তাদের পক্ষে অনেক সময় থাকে না। কারণ তারা ভালো আইনজীবী রাখতে পারেন না। ফলে তারা ভালো আইন উপস্থাপন করতে পারেন না। কিন্তু যারা অর্থ ও সম্পদশালী তারা ভালো আইন, ভালো নজির ও শুনানি উপস্থাপন করতে পারেন।এ কারণেই সরকার অসহায়, দুস্থ ও গরিব বিচারপ্রার্থীদের আইনি সেবা দেওয়ার জন্য ২০০০ সালে লিগ্যাল এইড প্রতিষ্ঠা করেছে।বৃহস্পতিবার (৬ অক্টোবর) জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘লিগ্যাল এইড ইন বাংলাদেশ: সার্ভ হিউম্যানিটি অ্যান্ড সেভ সোসাইটি’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম এ কথা বলেন। লায়ন্স ক্লাব ইন্টারন্যাশনাল জেলা-৩১৫ এই সেমিনারের আয়োজন করে। এ সময় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন হাইকোর্টের বিচারপতি মো. বশির উল্লাহ।সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন তেজগাঁও কলেজের ভাইস প্রিন্সিপাল অধ্যাপক আঞ্জুমান আরা। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন লায়ন ইঞ্জিনিয়ার মো. আব্দুল ওয়াহহাব ।অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য দেন লায়ন জালাল আহমেদ, লায়ন মোহাম্মদ হানিফ, লিগ্যাল এইড কর্মকর্তা অতিরিক্ত জেলা জজ ফারাহ মামুন, অ্যাডভোকেট আব্দুর রহমান, অ্যাডভোকেট হোসনে আরা বাবলী, অ্যাডভোকেট মুনমুন নাহার, সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল ফারজানা শম্পা ও তামান্না ফেরদৌস প্রমুখ।সেমিনারে বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম বলেন, লিগ্যাল এইড আইন প্রণয়নের পর আজ ২২ বছর পেরিয়ে গেছে। কিন্তু দেশের মানুষের মধ্যে লিগ্যাল এইড নিয়ে ধারণা কম। গ্রামের মানুষ এখনো জানে না লিগ্যাল এইড কিভাবে কাজ করে। অনেকে মনে করে লিগ্যাল এইডের কাছে এলেই মনে হয় রায় পাওয়া যায়। অনেকে মনে করে লিগ্যাল এইড একটি মাধ্যম, টাকা পয়সা খরচ করতে হয়। কিন্তু লিগ্যাল এইডের দায়িত্ব রাষ্ট্র নিজেই নিয়েছে। এখানো কোন বিচারপ্রার্থীর একটি পয়সাও খরচ করার সুযোগ নাই। এজন্য লিগ্যাল এইডের ধারণা দেশের মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে গণমাধ্যমের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। গণমাধ্যম প্রতিনিয়তই সেই ভূমিকা পালন করে চলেছেন।তিনি আরো বলেন, সংবিধানের ২৭ অনুচ্ছেদে বলা আছে আইনের চোখে সবাই সমান। সবাই আইনের আশ্রয় লাভের অধিকারী। কিন্তু আমার মনে পীড়া দেয় আদৌ কি আমরা ইক্যুয়াল প্রটেকশন পাচ্ছি, এটা আপনারা ভেবে দেখবেন। অসহায়, দুস্থ বিচারপ্রার্থীদেরকে কি ঠিকমতো লিগ্যাল সাপোর্ট দিতে পারছি? আমার মতে, পারছি না। এজন্য সম্মিলিতভাবে আমাদের সবাইকে নিজ নিজ স্থান থেকে কাজ করে যেতে হবে। যদি এটা করতে পারি তাহলে অসহায় ও দুস্থ মানুষকে সহায়তা করতে পারব। তিনি বলেন, গরু-মহিষ নিয়ে শ্বশুর ও জামাইয়ের দ্বন্দ্ব সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত গড়িয়েছে। সমাজের কিছু কিছু অবক্ষয়ের কারণেই এ ধরনের হয়েছে। এ ধরনের ঘটনা রোধে শিক্ষিত জনগণকে এগিয়ে আসতে হবে। বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম বলেন, আমি সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইড কমিটির চেয়ারম্যান। চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নিয়েই আমি কেন্দ্রীয় কারাগার পরিদর্শন করেছি। সেখানে গিয়ে বন্দিদের বক্তব্য শুনেছি। যাদের লিগ্যাল এইড দেওয়া দরকার তাদের নিয়ে কাজ করছি। এছাড়া কিশোর সংশোধনাগারে গিয়েছি। অপরাধে জড়িয়ে শিশুরা সেখানে বন্দি। এ বয়সে যাদের বাবা-মায়ের কাছে থাকার কথা ছিল। কিন্তু সমাজ সচেতন না হওয়ার কারণে শিশুদের এই দুরাবস্থা।
তিনি বলেন, শিশুর তো কোন দোষ নেই। আমরাই বাবা-মা সন্তানদের অসুস্থ প্রতিযোগিতার মধ্যে ঠেলে দিচ্ছি। বাচ্চা যেটা পারবে না সেটা তার ওপর চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছি। এজন্য বাবা-মা দায়ী। তিনি আরো বলেন, আইনজীবী থাকাকালে আমি মহিলা সমিতিতে লিগ্যাল এইডের কাজ করেছি। যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারপতি হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছি। সেখানেও মানবতার বিষয়টি এসেছে। ১৩ বছরের জজিয়তি জীবনে সুপ্রিম কোর্টের লিগ্যাল এইডের চেয়ারম্যান হয়েছি। সব সময় চেষ্টা করি মানবিক হতে। মানুষের দুঃখ কষ্ট যেন বুঝতে পারি।
