হারুন-অর-রশীদ, অভয়নগর :
যশোরের অভয়নগর উপজেলার বহুল আলোচিত ও অসংখ্যবার গণমাধ্যমের শিরোনাম হওয়া নাউলি-গোপিনাথপুর মিলনী দাখিল মাদ্রাসার সুপার মাওলানা আব্দুর রশীদের একের পর এক নাটকিয়তার কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছেন ওই মাদ্রাসার শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। মাদ্রাসা সুপারের অব্যাহত মামলার ঘানি টানতে হচ্ছে প্রতিষ্ঠানটিকে। সেই সাথে চলছে নানা বিশৃঙ্খলা। ফলে প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষাব্যবস্থা মুখ থুবড়ে পড়েছে। জটিলতা থেকে বাঁচতে তিনি ইতঃপূর্বে অপহরণ নাটক সাজিয়ে মামলা করলেও শেষ রক্ষা হয়নি।
সর্বশেষ গোপনে সভাপতি নির্বাচন করে কমিটি পাস করিয়ে আনার অভিযোগও উঠেছে তার বিরুদ্ধে। আর এ সভাপতিকে স্বীকৃতি দিতে তিনি এবার ভিন্ন নাটকীয়তার আশ্রয় নিয়েছেন। তিনি একটি কাগজে সভাপতিকে বৈধ দাবি করে স্বীকৃতিপত্র তৈরি করে ওই স্বীকৃতিপত্রে সকল শিক্ষককে স্বাক্ষর করতে বাধ্য করছেন। অন্যথায় শিক্ষকরা বেতন পাবেন না বলে হুশিয়ারি দিয়েছেন সুপার আব্দুর রশীদ। শিক্ষকদের অভিযোগ, আমাদের বেতন না পেলে পরিবার পরিজন নিয়ে বিপাকে পড়তে হবে
তাই কেউ কেউ স্বাক্ষর করেছি। এদিকে সম্প্রতি গঠিত ওই মাদ্রাসার কমিটিকে অবৈধ দাবি করে আদালতে দায়ের করা মামলা তুলে নিতে মামলার বাদী ওই মাদ্রাসার শিক্ষক তাহমিনা বেগমকে হুমকি দেয়া হয়েছে। তাহমিনা বেগমের অভিযোগ, প্রকাশ্যে অফিস কক্ষে তাকে মামলা তুলে নিতে হুমকি দেয়া হয়েছে। অন্যথায় তাকে দেখে নেয়া হবে। এদিকে অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর পদ শূন্য ঘোষণা করে ওই পদে নিয়োগ দিয়ে মহা বিপাকে রয়েছেন তিনি। দ্বিমুখী মামলায় রীতিমত হাঁসফাঁস অবস্থা তার। তবুও নাটকীয়তার পর নাটকীয়তা চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। মাদ্রাসার শিক্ষক তাহমিনা বেগমের অভিযোগ, অবৈধ পন্থায় গঠিত কমিটির বিরুদ্ধে মামলা করায় তাকে নানাভাবে হয়রানি করা হচ্ছে। দেয়া হচ্ছে হুমকি। এমনকী আজ রবিবার ওই মামলায় আদালতে হাজিরার নির্দেশ থাকলেও তাকে ছুটি দেননি মাদ্রাসা সুপার। দরখাস্ত নিয়ে এেেকর পর এক ছুটির জন্য অনুরোধ করলেও তিনি তা কর্ণপাত করেননি। উপরোন্ত মামলা তুলে নিতে চাপ সৃষ্টির পাশাপাশি গোপনে নির্বাচিত করা সভাপতিকে স্বীকৃতি দিতে একটি স্বীকৃতিপত্রে স্বাক্ষর দিতে চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে।
মাদ্রাসার শিক্ষক বিলকিস আক্তার বলেন, তাকে স্বীকৃতিপত্রে স্বাক্ষর করতে অনেকবার পীড়াপীড়ি করা হয়েছে তবুও তিনি স্বাক্ষর করেননি। একই কথা বলেন মাদ্রাসার শিক্ষক রাশিদা বেগমসহ আরও দুইজন শিক্ষক। নাম প্রকাশ না করার শর্তে মাদ্রাসার এক শিক্ষক বলেন, জটিলতার পর জটিলতার কারণে মাদ্রাসাটি ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছে। বেতনের জন্য চাকরি করি। তাই ওই কাগজে স্বাক্ষর করতে বাধ্য হয়েছি। মাদ্রাসার শিক্ষক প্রতিনিধি ফজলুর রহমান ওরফে বাবুল অভিযোগ করে বলেন, আমি এবং আমার এলাকার আরেক ভাই কামাল মুন্সি কমিটির সদস্য হওয়া সত্বেও কখন/কিভাবে সভাপতি নির্বাচিত হয়েছে তা আমরা জানিনা। নিজের বিবেককে বিসর্জন দিয়ে তো ওই সভাপতিকে স্বীকৃতি দেয়া পত্রে স্বাক্ষর করতে পারিনা। যদিও স্বাক্ষর করতে অনেক পীড়াপিড়ি করা হয়েছে। এমনকী স্বাক্ষর না করায় বেতন পাবো না বলেও জানিয়ে দিয়েছেন মাদ্রাসা সুপার।
মাদ্রাসার সহকারী সুপার সিরাজুল ইসলাম বলেন, আমি সুপারের নির্দেশ পালন করেছি মাত্র। তাছাড়া জটিলতা সৃষ্টি হতে হতে মাদ্রাসাটি বেহাল অবস্থায় রয়েছে। যে কারণে নিজেদের বেতনের সুবিধার জন্য এ পন্থা নেয়া হয়েছে। তিনি নিজে ওই পত্রে স্বাক্ষর করেছেন জানিয়ে বলেন, যেভাবেই কমিটি বা সভাপতি নির্বাচন করা হোক না কেন তা কাগজপত্রে নিয়ম মেনেই করা হয়েছে। এক প্রশ্নে সহকারী সুপার বলেন, ক্লার্ক পদে যাকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে তিনি বৈধভাবেই নিয়োগ পেয়েছেন আবার যিনি ক্লার্ক পদে ছিলেন তিনিও ইস্তফা দেননি বলে দাবি করে মামলা করেছেন। ফলে এক পদে দুইজন থাকায় কাউকে যোগদান করানো হয়নি। বর্তমানে ক্লার্কের অভাবে মাদ্রাসার কার্যক্রম ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
মাদ্রাসটিতে ইতঃপূর্বে পদ শূন্য দেখিয়ে নিম্মমান সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর পদে নিয়োগ দেওয়া দেওয়া হয়েছে। এ অভিযোগে মাদ্রাসা পরিচালনা পর্যদের সভাপতি, সুপার, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাসহ ১৮ জনের নামে মামলা হয়েছে। মাদ্রাসার নিম্মমান সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর এস এম খালিদ জাহাঙ্গীর শাহিন বাদী হয়ে মামলাটি করেন। অপরদিকে ওই পদে নিয়োগ পাওয়া মিন্টু বিশ্বাস যোগদান করতে না পেরে তিনি আদালতের স্মরণাপন্ন হয়েছেন। এছাড়া মাদ্রাসার পরিচালনা কমিটিকে অবৈধ দাবি করে আদালতে মামলা করেছেন তাহমিনা খাতুন নামে এক শিক্ষিকা। মামলা চলমান থাকা অবস্থায় গোপনে সভাপতি নির্বাচিত করে কমিটি পাশ করানো হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে তার। তাছাড়া, শূন্য পদ দেখিয়ে নিয়োগ দিয়ে চাপে পড়ে নিয়োগপ্রাপ্তকে নাজেহাল করতে অপহরণ ও চাঁদাবাজির নাটক সাজিয়ে অফিস সহকারী মিন্টু বিশ্বাসসহ পাঁচজনকে আসামি করে মামলা করেছেন মাদ্রাসা সুপার আব্দুর রশীদ।
এ ব্যাপারে মাদ্রাসার সুপার মাওলানা আব্দুর রশীদ বলেন, সবকিছু নিয়মতান্ত্রিকভাবেই করা হয়েছে। ভিলেজ পলিটিক্সের এসব জটিলতার সৃষ্টি হচ্ছে। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, কোন স্বীকৃতিপত্রে স্বাক্ষর করাতে চাপ সৃষ্টি করা হয়নি। কাউকে হুমকিও দেয়া হয়নি। তবে শিক্ষকরা এরকম একটা স্বীকৃতিপত্র তৈরি করে সকল শিক্ষকের স্বাক্ষর নিচ্ছেন বলে শুনেছি।
অভয়নগরে নাউলি-গোপীনাথপুর মিলনী দাখিল মাদ্রাসা, সুপারের নাটকীয়তার কাছে জিম্মি শিক্ষক-শিক্ষার্থী-অভিভাবকরা!
Published on