বার্তাকক্ষ
অনেক প্রতীক্ষার পর প্রযুক্তিবাজারে আইফোন ১৪ সিরিজ, নতুন স্পোর্টস স্মার্টওয়াচ ও এয়ারপড উন্মোচন করেছে কুপারটিনোভিত্তিক প্রযুক্তি জায়ান্ট অ্যাপল। বিভিন্ন ফিচারের মধ্যে উন্নত ক্যামেরা ও স্যাটেলাইট কানেক্টিভিটি গ্রাহকদের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে। খবর রয়টার্স ও বিবিসি।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তি জায়ান্টটি বাজারে ১৪ সিরিজের অধীনে চারটি স্মার্টফোন উন্মোচন করেছে। এগুলো হলো আইফোন ১৪, ১৪ এস, আইফোন ১৪ প্রো ও ১৪ প্রো ম্যাক্স। কুপারটিনোর সদর দপ্তরে এ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণের পর এই প্রথম ইভেন্টে গ্রাহক ও দর্শনার্থীরা সরাসরি অংশ নিতে পেরেছে।
আইফোন ১৪ সিরিজের পাশাপাশি প্রযুক্তি জায়ান্টটি এক্সট্রিম স্পোর্টস ওয়্যারেবল ওয়াচ আল্ট্রাও উন্মোচন করেছে। পুরো ইভেন্টে পরবর্তী প্রজন্মের আইফোন, ঘড়ি ও এয়ারপড পণ্যের ওপর আলোকপাত করা হয়েছে। ১৪ সিরিজের আইফোনগুলোর দাম ৭৯৯ ডলার থেকে শুরু। বিশ্বজুড়ে চলমান মূল্যস্ফীতির মধ্যে গ্রাহকদের কাছ থেকে ডলার আয় করা প্রতিষ্ঠানটির জন্য এখন অন্যতম চ্যালেঞ্জ।
আইফোন ১৪-এর দুটি ভার্সন আনা হয়েছে। একটি হলো ১৪, আরেকটি ১৪ প্লাস। এ সেলফোনগুলো জরুরি মুহূর্তে বা প্রত্যন্ত অঞ্চলে থাকা অবস্থায় স্যাটেলাইট কানেক্টিভিটি ব্যবহারের মাধ্যমে জরুরি সহায়তার জন্য যোগাযোগ করতে পারবে। ফিচারটি ব্যবহারের আগে পৃথিবীর কক্ষপথে বা আশপাশে থাকা স্যাটেলাইটগুলোর অবস্থান দেখাবে এবং সেটি ব্যবহারের নির্দেশনা দেবে। স্যাটেলাইট ব্যবহারের মাধ্যমে কোনো মেসেজ পাঠাতে ১৫ সেকেন্ড থেকে কয়েক মিনিট পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। নতুন সিরিজের ডিভাইসগুলোয় একটি সফটওয়্যার আপডেটের মাধ্যমে ফিচারটি ব্যবহার করা যাবে। ব্যবহারকারীরা প্রথম দুই বছর বিনামূল্যে এটি ব্যবহার করতে পারবে। প্রথম পর্যায়ে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় ফিচারটি চালু করা হবে এবং পর্যায়ক্রমে বাকি দেশগুলোয় চালু করা হবে।
আইফোন ১৪ ও ১৪ প্লাসে এ১৫ বায়োনিক চিপ ও প্রো মডেলগুলোয় এ১৬ চিপ ব্যবহার করা হয়েছে। সিসিএস ইনসাইটের প্রধান গবেষক বেন উড বলেন, স্যাটেলাইট কানেক্টিভিটি পরিষেবা সরবরাহকারী গ্লোবস্টারের সঙ্গে বাণিজ্যিক চুক্তি সম্পাদন ও জরুরি পরিষেবা প্রদানকারীদের কাছে মেসেজ পাঠানোর অবকাঠামো তৈরিতে অ্যাপলকে কয়েক বছর সময় ব্যয় করতে হয়েছে।
আইফোন ১৪-তে ৬ দশমিক ১ ইঞ্চির ডায়াগনাল অলস্ক্রিন ওলেড ডিসপ্লে দেয়া হয়েছে, যেখানে ১৪ প্লাসে ৬ দশমিক ৭ ইঞ্চির ডিসপ্লে রয়েছে। ডিভাইস দুটিতে ১২ মেগাপিক্সেলের প্রধান ও আল্ট্রা ওয়াইড ক্যামেরা দেয়া হয়েছে। প্রধান ক্যামেরাটি আগের ভার্সনগুলোর তুলনায় কম আলোয় ৪৯ শতাংশ বেশি ভালো ছবি তুলতে পারবে বলে দাবি জানিয়েছে অ্যাপল। এছাড়া ডিভাইসের ফ্রন্ট ক্যামেরায় প্রথমবারের মতো অটোফোকাস দেয়া হয়েছে।আইফোন ১৪ প্রো ও প্রো ম্যাক্সের ডিজাইনে বেশ পরিবর্তন আনা হয়েছে। বিশেষ করে ডিভাইসের ডিসপ্লেতে পিল আকৃতির ডিজাইন দেয়া হয়েছে। ডায়নামিক আইল্যান্ড নামের নতুন ফিচারের মাধ্যমে ব্ল্যাক নচ ডিজাইন সরিয়ে দেয়া হয়েছে। নতুন ফিচারটি প্রয়োজন অনুযায়ী আকার পরিবর্তনে সক্ষম। ব্যবহার না করা অবস্থায় ডিসপ্লের আলো ও রিফ্রেশ রেট কমে যাবে। কালো, সিলভার ও সোনালি রঙে ডিভাইসটি পাওয়া যাবে। এর দাম ৯৯৯ ডলার।
আইফোনের পাশাপাশি অ্যাপল ওয়াচ ৮ সিরিজও উন্মোচন করেছে। এতে বেশকিছু নতুন ফিচার যুক্ত করা হয়েছে, যার মধ্যে গাড়ি দুর্ঘটনা শনাক্তকরণ প্রযুক্তি, তাপমাত্রা পরিমাপকের পাশাপাশি নারীদের মাসিক সময় শনাক্তকরণ ফিচারও রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে গর্ভপাত আইনে পরিবর্তন আনার পর থেকে ব্যবহারকারীরা বেশ চিন্তিত ছিল। কারণ নতুন আইনে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে এসব তথ্য ব্যবহারের সুবিধা দেয়া হয়েছে। অ্যাপল জানায়, তাদের ডিভাইসে ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষিত থাকবে এবং শুধু পাসওয়ার্ড বা বায়োমেট্রিকের মাধ্যমে প্রবেশ করা যাবে।গাড়ি দুর্ঘটনা শনাক্তকরণ প্রযুক্তি ওয়াচ ৮-এর নতুন সংযোজন। ঘড়িটি বর্তমানে মারাত্মক দুর্ঘটনা শনাক্ত করতে পারবে এবং পরিধেয় ব্যক্তির অবস্থা সম্পর্কে জরুরি পরিষেবা প্রদানকারীদের জানাবে। এক্ষেত্রে হতাহতের নির্দিষ্ট অবস্থান জানানোর পাশাপাশি তার পরিবার-পরিজনকেও অবহিত করা হবে। এর দাম ৩৯৯ ডলার থেকে শুরু।ওয়াচ ৮-এর সঙ্গে ওয়াচ আল্ট্রাও উন্মোচন করেছে অ্যাপল। গারমিন, পোলার ও অন্যান্য স্পোর্টস স্মার্টওয়াচ বাজারজাতকারীদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে এটি নিয়ে এসেছে প্রযুক্তি জায়ান্টটি। বর্ন টু রানের আল্ট্রা ম্যারাথনবিদ স্কট জুরেক ওয়াচটি উপস্থাপনের সময় উপস্থিত ছিলেন। সব ওয়াচে ১ ঘণ্টার চার্জে ৩৬ ঘণ্টা পর্যন্ত ব্যাটারি ব্যাকআপ এবং ৬০ ঘণ্টা পর্যন্ত এক্সটেন্ডেড ব্যাটারি লাইফ থাকবে। অ্যাপল জানায়, এর মাধ্যমে সাঁতার, সাইক্লিং, দৌড়সহ যেকোনো ট্রায়ালথন সম্পন্ন করা যাবে। এর দাম ৭৯৯ ডলার থেকে শুরু।
আইফোন, ওয়াচের পাশাপাশি এয়ারপডও উন্মোচন করেছে অ্যাপল। আগের ভার্সনের তুলনায় আরো উন্নত ফিচার যুক্ত করে এটি আনা হয়েছে। কোনো একটি এয়ারপড হারিয়ে গেলে অন্যটির মাধ্যমে খুঁজে পাওয়া যাবে। এয়ারপডের কেসিংয়ে আলাদা স্পিকার রয়েছে। ফাইন্ড মাই অ্যাপ ব্যবহার করে হারানো পেয়ার খোঁজার সময় এটি জোরে শব্দ করবে। এর দাম ২৪৯ ডলার থেকে শুরু।
