বার্তাকক্ষ
আট মাসে জবির কাউন্সিলিং সেন্টারে সেবা নিয়েছেন ৪০০ শিক্ষার্থবিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের মাঝে আত্মহত্যার প্রবণতা রোধ, বিষণ্ণতা, পরীক্ষা ভীতি থেকে মুক্তির লক্ষ্যে গত ৩ জানুয়ারি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে প্রতিষ্ঠিত হয় কাউন্সিলিং সেন্টার। প্রতিষ্ঠার পর গত আট মাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪০০ শিক্ষার্থী এ সেন্টার থেকে সেবা নিয়েছেন। কাউন্সিলিং সেন্টার সূত্রে জানা যায়, সেবা গ্রহীতা অধিকাংশ শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে উৎকণ্ঠা, প্রেমে ব্যর্থ, দুশ্চিন্তা, পরীক্ষা ভীতি, বিষণ্ণতা, হতাশাগ্রস্তসহ নানা রকমের মানসিক সমস্যা লক্ষ্য করা গেছে। কাউন্সিলিং সেন্টার প্রতিষ্ঠার পরে আট মাসের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে ঢাকা পোস্টের সঙ্গে কথা হয় কাউন্সিলিং সেন্টারের আহ্বায়ক মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. নূর মোহাম্মাদের। তিনি বলেন, করোনা মহামারির পরে শিক্ষার্থীরা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। এমনকি অনেক শিক্ষার্থী আত্মহত্যার পথও বেচে নেয়। এ থেকে পরিত্রাণের জন্য আমাদের কাউন্সিলিং সেন্টারটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এ গুরুত্ব আরও দেখা যায় গত আট মাসে এখান থেকে সেবা নেওয়া শিক্ষার্থীদের সংখ্যার দিকে লক্ষ্য করলে। আমরা ইতোমধ্যে ৪০০ শিক্ষার্থীকে কাউন্সিলিং দিতে সক্ষম হয়েছি। কাউন্সিলিং নিতে আসা শিক্ষার্থীদের মধ্যে কোন ধরনের সমস্যা বেশি লক্ষ্য করা যায়? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, উদ্বেগ- উৎকণ্ঠা, দুশ্চিন্তা, পরীক্ষা ভীতি, বিষণ্ণতা, হতাশাগ্রস্তসহ নানা রকমের মানসিক সমস্যা নিয়ে এখানে আসেন শিক্ষার্থীরা। তার মধ্যে হতাশাগ্রস্তদের সংখ্যা বেশি। এ হতাশার অনেকগুলো কারণ আছে, তার মধ্যে প্রেমঘটিত আর পরীক্ষা ভীতির সংখ্যা বেশি।তিনি আরও বলেন, বর্তমানে আমাদের তত্ত্বাবধানে বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীদের দ্বারা এ কাউন্সিলিং দেওয়া হয়৷ যেহেতু এ সেন্টারের জন্য এখনও ফান্ড তৈরি হয়নি সেহেতু আমরা নিজেদের অর্থায়নে এ কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। এছাড়াও এখানে দুজন সাইকোলজিস্ট এবং সাইকোথেরাপিস্ট নিয়োগের জন্য ফাইল জমা দেওয়া আছে। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) থেকে অনুমোদন দেওয়া হলেই আমরা দুজন সাইকোলজিস্ট এবং সাইকোথেরাপিস্ট নিয়োগ দেব। বর্তমানে এ সেন্টারে কাউন্সিলিং দিচ্ছেন এমন দুজন কাউন্সিলরের সঙ্গে কথা হয় ঢাকা পোস্টের। তারা বলেন, আমরা গত আট মাস ধরে এ সেন্টারে কাউন্সিলিং দিয়ে আসছি। এখানে আমরা শিক্ষার্থীদের মাঝে নানা রকমের মানসিক লক্ষণ পেয়েছি। তাদের এ লক্ষণগুলোর ধরনের উপর তাদের সেশনের মাধ্যমে কাউন্সিলিং দিয়ে থাকি। কারো এক সেশনেই হয়ে যায়, আবার কারো বেশি সেশন লাগে। আবার কাউকে আমরা উন্নত কাউন্সিলিংয়ের জন্য রেফার করি। এ সেন্টারে কাউন্সিলিং নিয়েছেন এমন কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা হয়েছে এ প্রতিবেদকের সাথে। তার মধ্যে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক শিক্ষার্থী বলেন, আমি প্রায় চার মাসের ধরে হতাশায় ভুগছিলাম। মাঝে মাঝে মনে হতো আত্মহত্যা করি। এ অবস্থা দেখে আমার এক বন্ধু কাউন্সিলিং সেন্টারে নিয়ে আসে। তারপর এখানকার কাউন্সিলররা আমাকে তিনটা সেশনে কাউন্সিলিং করেন। এরপর থেকে আমি স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে থাকি। আরেক শিক্ষার্থী বলেন, করোনা মহামারির পর নানা কারণে আমার মধ্যে হতাশা কাজ করছিল। পরিবার থেকে শুরু করে কারো কাছেই কিছু শেয়ার করতে পারিনি। এরপর আমি কাউন্সিলিং সেন্টারে যোগাযোগ করলে তারা অনেক চেষ্টা করে আমাকে সে হতাশা থেকে মুক্ত করেন। কাউন্সিলিং সেন্টারের সার্বিক বিষয় নিয়ে সেন্টারের সদস্য সচিব সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. আয়েশা সিদ্দিকা ডেইজি ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা কাউন্সিলিং সেন্টারটি প্রতিষ্ঠা করেছিলাম করোনার মধ্যে শিক্ষার্থীদের মাঝে যে হতাশা সৃষ্টি হয়েছিল সেখান থেকে বের করে আনতে। প্রতিষ্ঠার সময়ই উপাচার্য বলেছিলেন, এখানে দুজন কাউন্সিলর নিয়োগ দেবেন এবং আমাদের জন্য একটি ফান্ডিংয়ের ব্যবস্থা করবেন। এ কাজগুলো বর্তমানে প্রক্রিয়াধীন। আশা করি, শিগগিরই এগুলো সমাধান হয়ে যাবে। এ বিষয়ে কথা বলতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. ইমদাদুল হকের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
