বার্তাকক্ষ ,,বাংলাদেশ শিক্ষাতথ্য ও পরিসংখ্যার ব্যুরোর (বেনবেইজ) তথ্যমতে, বর্তমানে দেশে ৯ হাজার ৪৬০টি আলিয়া মাদ্রাসা রয়েছে। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করে ২০ লাখেরও বেশি শিক্ষার্থী। এসব মাদ্রাসায় এসএসসির সমমান দাখিল, এইচএসসির সমমান আলিম, ডিগ্রির সমমান ফাজিল ও মাস্টার্সের সমমান কামিল কোর্স পড়ানো হয়। তবে এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সরকারি বিধিনিষেধ অমান্য করা এবং অফিস শৃঙ্খলা না মানার অভিযোগও দীর্ঘদিনের। দীর্ঘদিনেও এসব বিষয়ে সুরাহা হচ্ছে না। অভিযোগ রয়েছে, আর্থিক দুর্নীতিসহ বিভিন্ন অভিযোগে ব্যবস্থা নেওয়া হলেও শৃঙ্খলা ফিরছে না বেসরকারি মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠানগুলোতে।
মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদফতর বলছে, আইন মানতে বাধ্য করার জন্য কঠোর হওয়া ছাড়া বিকল্প নেই। ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট শিক্ষক-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এমপিও স্থগিত করা হয়েছে অনেক শিক্ষকের। সাময়িক বরখাস্তও করা হয়েছে বেশ কিছু শিক্ষককে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত বছর নভেম্বর অনুষ্ঠিত আলিম ইংরেজি বিষয়ের পরীক্ষার দিন পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার কালিকাপুর নূরিয়া ফাজিল মাদ্রাসা কেন্দ্রে কক্ষ পর্যবেক্ষক ওই প্রতিষ্ঠানের সহকারী মৌলভী মো. আলামিন এবং উপজেলার এন জেড আলিম মাদ্রাসার উপাধ্যক্ষ মো. মাহমুদুল হাসান পরীক্ষার্থীদের অসদুপায় অবলম্বনে সরাসরি সহায়তা করছিলেন। বিষয়টি হাতেনাতে ধরা পড়ায় এক বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. মহিউদ্দিন আল হেলাল।
অন্যদিকে উপজেলার কল্যাণ কলস নেছারিয়া আলিম মাদ্রাসার ইংরেজি বিষয়ের প্রভাষক মো. রফিকুল ইসলাম শিক্ষার্থীদের অসদুপায় অবলম্বনে সহায়তায় ধরা পড়লে পালিয়ে যান। পরে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করতে থানার ওসিকে নির্দেশ দেন। পালিয়ে যাওয়া প্রভাষক রফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে কল্যাণ কলস নেছারিয়া আলিম মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আব্দুল জলিল বলেন, ‘আমি নতুন এসেছি। জেনে পরে জানাবো।’এদিকে আলিমের ইংরেজি বিষয় পরীক্ষার দিন অসদুপায় অবলম্বনে সহায়তার সময় হাতেনাতে ধরা পড়েন পটুয়াখালীর দুমকি উপজেলার পাঙ্গাসিয়া নেছারিয়া কামিল মাদ্রাসায় কর্মরত অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর আবদুস সাকুর। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. আল ইমরান তাকে দুই বছরের কারাদণ্ড দেন।
এসব ঘটনায় মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড গত ১২ ফেব্রুয়ারি স্থায়ীভাবে এমপিও বন্ধের জন্য নোটিশ করেন। নোটিশে এসব শিক্ষক-কর্মচারীর এমপিও কেন স্থায়ীভাবে বন্ধ করা হবে না তা চিঠি পাওয়ার সাত কর্মদিবসের মধ্যে জানাতে বলা হয়।
এদিকে, ঈদুল আজহার পর গত বছর ১৪ জুলাই ছুটি শেষ হলেও ২১ জুলাই পর্যন্ত রাজধানীর সবুজবাগের মানিকদিয়া এলাকার এম আই দাখিল মাদ্রাসা বন্ধ ছিল। এই সময় মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক পরিদর্শনে গিয়ে দেখেন মাদ্রাসা বন্ধ। আর মাদ্রাসা সুপারও প্রতিষ্ঠানে নেই। এই পরিস্থিতিতে মাদ্রাসা সুপারকে গত বছর ২০ জুলাই কারণ দর্শানোর নোটিশ করে মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদফতর।
নোটিশে বলা হয়, সরকারের সিদ্ধান্ত অমান্য করে এক সপ্তাহ বাড়িয়ে ছুটি দিয়ে মাদ্রাসা বন্ধ রাখা হয়েছে, যা বেআইনি, বিধিবহির্ভূত এবং সরকারি আদেশ অবজ্ঞা করার শামিল। সরকারি আদেশ অমান্য করে এক সপ্তাহ মাদ্রাসা বন্ধ রাখা এবং সুপারের অনুপস্থিত থাকার কারণে মাদ্রাসার এমপিও স্থগিতসহ কেন অন্যান্য শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, তিন কর্মদিবসের মধ্যে জানাতে হবে।
গত বছর ঈদুল আজহার ছুটি শেষ হয় ১৪ জুলাই। অথচ রাজধানীর সবুজবাগের বাসাবো এলাকার মাদ্রাসায়ে মোহাম্মদিয়া আরাবিয়া ফাজিল মাদ্রাসা বন্ধ রাখা হয় ২১ জুলাই পর্যন্ত। মাদ্রাসা পরিদর্শনের ধারাবাহিকতায় মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক পরিদর্শনে গিয়ে জানতে পারেন, মাদ্রাসা বন্ধ ছিল ২১ জুলাই পর্যন্ত। ২৩ জুলাই মাদ্রাসা খোলা হলেও উপস্থিত শিক্ষার্থী ছিল মাত্র কয়েকজন।
এই ঘটনায় গত বছর ২৪ জুলাই অধ্যক্ষকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয় মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদফতর। এতে বলা হয়, সরকারের সিদ্ধান্ত অমান্য করে এক সপ্তাহ বাড়িয়ে ছুটি দিয়ে মাদ্রাসা বন্ধ রাখা হয়েছে, যা বেআইনি, বিধিবহির্ভূত এবং সরকারি আদেশ অবজ্ঞা করার শামিল। নোটিশে মাদ্রাসার এমপিও স্থগিতসহ কেন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে না তা জানতে চেয়ে পরবর্তী দিন কর্মদিবসের মধ্যে (২৬ জুলাই) জবাব দিতে বলা হয়।
এদিকে, বিধিবহির্ভূতভাবে প্রভাষক পদে পুনর্নিয়োগের জন্য অনলাইনে আবেদন করেন দিনাজপুরের বিরল উপজেলার বুনিয়াদপুর সিনিয়র আলিম মাদ্রাসার এক শিক্ষক। তার আবেদন অগ্রায়ন করে প্রতিষ্ঠান প্রধান পাঠান জেলা শিক্ষা অফিসারের কাছে। জেলা শিক্ষা অফিসারও এই আবেদন অগ্রায়ন করেছেন। এই ঘটনায় গত ১৩ ফেব্রুয়ারি জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারকে কারণ দর্শানো নোটিশ করেছে মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদফতর।এছাড়া মাদ্রাসায় আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ প্রায়ই অধিদফতর থেকে কারণ দর্শানো হচ্ছে, ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে। কিন্তু গত এক বছরেও পরিস্থিতির তেমন উন্নতি হয়নি।
জানতে চাইলে মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদফতরের উপপরিচালক (প্রশাসন) মো. জাকির হোসাইন বলেন, ‘অপরাধ প্রমাণিত হলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। আমরা এমপিও স্থগিত বা স্থায়ীভাবে বন্ধ করতে পারি। কিন্তু বরখাস্ত করার বিষয়টি ম্যানেজিং কমিটি বা গভর্নিং বডির রয়েছে। চূড়ান্ত বরখাস্ত অনুমোদন দেবে ইসলামিক আরবি বিশ্ববিদ্যালয়। আমরা মাদ্রাসাগুলোয় শৃঙ্খলায় আনতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছি।’
