বার্তাকক্ষ
রাজধানীর পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা আহসান মঞ্জিলে ঈদের তৃতীয় দিনে দর্শনার্থীর উপচেপড়া ভিড় ছিল। পরিবার-পরিজন ও বন্ধু-বান্ধব নিয়ে অনেকে ঘুরতে এসেছেন বুড়িগঙ্গার তীরঘেঁষা নান্দনিক এ স্থাপনায়। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত কয়েক হাজার দর্শনার্থীর পদচারণা ছিল সেখানে। সোমবার (২৪ এপ্রিল) বিকেলে সরেজমিন ঘুরে এমন চিত্রই দেখা গেছে।
পুরান ঢাকার ইসলামপুরের কুমারটুলী এলাকায় বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে অবস্থিত আহসান মঞ্জিল একসময় ছিল ঢাকার নবাবদের আবাসিক প্রাসাদ ও জমিদারির সদর কার্যালয়। বর্তমানে প্রাসাদটি ব্যবহার হচ্ছে জাদুঘর হিসেবে। বছরের নানা সময়ে বিশেষ দিনে বা উৎসব ঘিরে সেখানে দর্শনার্থীদের ভিড় জমে
ঈদুল ফিতর উপলক্ষে গত বুধবার (১৯ এপ্রিল) থেকে টানা পাঁচদিন সরকারি ছুটি ছিল। সোমবার থেকে খুলেছে সরকারি সব অফিস-আদালত। তবে রাজধানীর ব্যস্ততম সড়কগুলো আজও অনেকটা ফাঁকা ছিল। ফলে মানুষের চলাচলেও ছিল স্বস্তি।
ঈদের তৃতীয় দিন সোমবার বিকেলে নগরবাসীর অনেকেই বের হয়েছিলেন রাজধানীর বিনোদনকেন্দ্রগুলোতে সময় কাটাতে। আহসান মঞ্জিল গত দুদিন বন্ধ থাকায় আজ দর্শনার্থীর চাপ ছিল চোখে পড়ার মতো। আহসান মঞ্জিল সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আজ সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার দর্শনার্থীর আগমন ঘটে সেখানে।
দর্শনার্থীদের সঙ্গে কথা হলে তাদের অনেকে জানান, ঢাকার মতো আবদ্ধ ও কোলাহলপূর্ণ নগরীতে মানুষ উৎসবের দিনগুলোতেও একটু ফাঁকা জায়গা পায় না। ঢাকায় পর্যাপ্ত বিনোদনকেন্দ্রও নেই। তাই ঈদের ছুটিতে যে কয়টি দর্শনীয় স্থান রয়েছে সেখানে অনেকেই পরিবার নিয়ে ঘুরতে আসেন। পাশাপাশি শিশুদের একটু সুন্দর সময় উপহার দিতেও অনেক অভিভাবক বিনোদনকেন্দ্রে যান।
আহসান মঞ্জিলের প্রতিষ্ঠাতা নওয়াব আবদুল গনি। তিনি তার পুত্র খাজা আহসানুল্লাহর নামানুসারে স্থাপনাটির নামকরণ করেন। ১৮৫৯ সালে মঞ্জিলের নির্মাণকাজ শুরু হয়ে শেষ হয় ১৮৭২ সালে। এখানেই ১৯০৬ সালে এক বৈঠকে মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠার ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত হয়। বর্তমানে স্থাপনাটি বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর কর্তৃক পরিচালিত হচ্ছে।
ঈদের তৃতীয় দিনে আহসান মঞ্জিলে ঘুরতে আসা দর্শনার্থীরা জানিয়েছেন, বছরজুড়েই ব্যস্ত সময় কাটে। ঈদ কিংবা অন্য কোনো উৎসব উপলক্ষে মানুষ একটু অবসর পায়। এই সুযোগে অনেকে চার দেয়ালের বন্দি জীবন ছেড়ে কিছুটা সময়ের জন্য হলেও প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যে নিজেদের মিলিত করতে চায়। আর সেই চাওয়া থেকেই মানুষ বিনোদনকেন্দ্রে ভিড় করে। তবে আহসান মঞ্জিলের ঐতিহাসিক আবেদন রয়েছে। ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে এই স্থাপনা।
অভিভাবকদের অনেকে জানিয়েছেন, ছেলেমেয়েরা বইপুস্তকে নবাবদের ইতিহাস পড়ে। কিন্তু বাস্তবে সংরক্ষণ করা তাদের ইতিহাসের নানা নিদর্শন তাদের দেখা হয় না। এ কারণেই অনেকে ঈদের ছুটি কাজে লাগিয়ে সন্তানদের আহসান মঞ্জিলে ঘুরতে নিয়ে এসেছেন।
এদিন অনেককে দেখা গেছে, শেষ বিকেলে হেলে পড়া রোদের মতো আহসান মঞ্জিলের সবুজ ঘাসে গা এলিয়ে দিতে। তাদের গায়ে লাগছে বুড়িগঙ্গার তীর ডিঙিয়ে আসা খানিক শান্তির সুবাতাস। অনেকে মঞ্জিলের সামনের মাঠে শীতলপাটির বিছিয়েও আড্ডায় মেতেছিলেন।
আহসান মঞ্জিল জাদুঘরের নিরাপত্তা পরিদর্শক মো. হাসিবুল হোসেন বলেন, ঈদের পর আজই আহসান মঞ্জিলে সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত সাড়ে পাঁচ হাজার দর্শনার্থী প্রবেশ করেছেন। কয়েকদিন বন্ধ থাকায় আজ দর্শনার্থীর সংখ্যা তুলনামূলক বেশি ছিল। নির্ধারিত সময়ে দর্শনার্থীরা এসে টিকিট কেটে অনায়াসে জাদুঘর পরিদর্শন করতে পারছেন। জাদুঘরে আসা দর্শনার্থীদের জন্য রয়েছে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
