আজ ১৮ মে আন্তর্জাতিক জাদুঘর দিবস। ইন্টারন্যাশনাল কাউন্সিল অব মিউজিয়ামের আহ্বানে ১৯৭৭ সালে প্রথম বিশ্বব্যাপী দিবসটি পালিত হয়। সেই থেকে প্রতিবছর দিবসটি পালিত হয়ে আসছে। ১৯৪৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ইন্টারন্যাশনাল কাউন্সিল অব মিউজিয়াম (আইসিওএম)। এর সদস্য হিসেবে বর্তমানে বাংলাদেশসহ বিশ্বের মোট ১৮০টি দেশের ২৮ হাজার জাদুঘর যুক্ত রয়েছে।প্রতি বছরের মতো এবারও অন্যান্য দেশের সঙ্গে বাংলাদেশেও পালিত হচ্ছে দিনটি। বর্তমানে আমাদের দেশে সর্বমোট প্রায় ১০৩টি জাদুঘর রয়েছে। জাতীয় জাদুঘর, বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর, আহসান মঞ্জিল জাদুঘরসহ পুরো বাংলাদেশে ছড়িয়ে আছে এই জাদুঘরগুলো। যা শিক্ষা, গবেষণার পাশাপাশি ইতিহাস সংরক্ষণ এবং বিনোদনের খোরাক মেটাচ্ছে বাঙালির। তবে জানেন কি বাংলা অর্থাৎ ভারত উপমহাদেশে জাদুঘরের উৎপত্তি কীভাবে?
এ উপমহাদেশে জাদুঘরের ধারণাটি এসেছে ব্রিটিশদের মাধ্যমে। ভারতীয় এশিয়াটিক সোসাইটির সদস্যরা এ অঞ্চলের জাতিতাত্ত্বিক, প্রত্নতাত্ত্বিক, ভূতাত্ত্বিক এবং প্রাণীবিষয়ক নমুনা সংগ্রহ করে সেগুলোকে যথাযথভাবে সংরক্ষণ ও প্রদর্শনের ব্যাপারে উদ্যোগী হন। লর্ড ওয়ারেন হেস্টিংস, যিনি এশিয়াটিক সোসাইটির পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। তিনি কলকাতার পার্ক স্ট্রিটে জমির ব্যবস্থা করেন। ১৮০৮ সালে সেখানে জাদুঘরের জন্য ভবন নির্মাণ শেষ হয়। এ প্রক্রিয়ায় ১৮১৪ সালে উপমহাদেশের প্রথম জাদুঘর ‘এশিয়াটিক সোসাইটি মিউজিয়াম’-এর জন্ম ও প্রতিষ্ঠা হয়।
১৯১০ সালের এপ্রিলে দিঘাপতিয়া রাজপরিবারের সার্বিক পৃষ্ঠপোষকতায় শরৎকুমার রায়ের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত ‘বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর’ হচ্ছে বাংলাদেশের প্রথম জাদুঘর। এটি নির্মাণ শেষ হয় ১৯১৩ সালে। বাংলাদেশে শতাধিক জাদুঘর আছে। তবে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরই দেশের প্রধান জাদুঘর হিসেবে বিবেচিত।
বিশ্বের জনপ্রিয় ও বড় বড় জাদুঘর প্রদর্শনের জন্য আসছে মানুষ। তবে অতীতে কিন্তু এই সুযোগ ছিল না। সে সময় জাদুঘর হতো তিন ধরনের- কোন ব্যক্তির নিজস্ব, পরিবার বা কোনো প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে গড়ে তোলা। পরবর্তীকালে অবশ্য এই সব উদ্যোগের পাশাপাশি সরকারের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে এবং উদ্যোগে বিভিন্ন দেশে জাদুঘর গড়ে উঠতে শুরু করে।
জাদুঘরের উদ্ভব ও বিকাশ হয়েছিল ৩টি যুগে-
প্রাচীন যুগ
পৃথিবীর সবচেয়ে প্রাচীন মিউজিয়াম গড়ে উঠেছিল মেসোপটেমিয়াতে ৫৩০ খ্রিঃ পূর্বাব্দে। যার নাম ছিল-‘ইনিগালদি নান্নার সংগ্রহশালা’। প্রাচীন যুগে গ্রিসের এথেন্সে দার্শনিক প্লেটো পুস্তকের একটি গ্রন্থাগার বা সংগ্রহশালা গড়ে তুলেছিলেন। তবে প্রাচীন যুগে মিউজিয়ামের সবথেকে উল্লেখযোগ্য বিকাশ ঘটেছিল চীনে। চীনের সি হুয়াংতি এবং অন্যান্য সম্রাটরা দুর্লভ নানান বস্তু সামগ্রী সেখানে জমা রাখতেন।
মধ্য যুগ
মধ্য যুগে ভূমধ্যসাগরীয় বাণিজ্য ও কুরুসেডের সূত্রে বহু দুর্লভ বস্তু ইতালি এবং ইউরোপের অন্যান্য দেশগুলোতে প্রবেশ করে। এর ফলে মধ্যযুগের শেষ দিকে বিশেষত পঞ্চদশ শতকে নবজাগরনের সময় ব্যক্তিগত এবং রাজকীয় উদ্যোগে নানা জাদুঘর গড়ে ওঠে। এর মধ্যে অন্যতম ছিল-ক্যাপিটোলাইন জাদুঘর, ভ্যাটিকান জাদুঘর। এছাড়াও এসময় ইউরোপের বিভিন্ন রাজাদের উদ্যোগে অনেক রাজকীয় সংগ্রহশালাও গড়ে উঠেছিল।
আধুনিক যুগ
সপ্তদশ শতাব্দী থেকে অষ্টাদশ শতাব্দীর মধ্যে পৃথিবীর গুরুত্বপূর্ণ আধুনিক জাদুঘরগুলোর অধিকাংশই প্রতিষ্ঠিত হয়। তবে ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষদিকে থেকে শুরু করে বিংশ শতাব্দীর প্রথম ভাগ পর্যন্ত সময়কালে, পৃথিবীর বেশিরভাগ আধুনিক জাদুঘরগুলো গড়ে ওঠে। এইজন্য এই সময়কালকে বলা হয় ‘জাদুঘরের যুগ’।
তবে প্রাচীন ও মধ্য যুগের জাদুঘরের সঙ্গে আধুনিক যুগের জাদুঘরের একটি মৌলিক পার্থক্য ছিল। তা হচ্ছে- সেসময় ব্যক্তি মালিকানা, পারিবারিক বা কোনো প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে গড়ে ওঠা জাদুঘরগুলোতে সাধারণ মানুষের প্রবেশ নিষেধ ছিল। তবে আধুনিক সময়ে এসে এই জাদুঘর হয়ে উঠেছে সাধারণ মানুষের বিনোদনের অন্যতম মাধ্যম। সেখানে যেমন অবসর সময় কাটাতে পারছেন সেই সঙ্গে তারা জানতে পারছেন অতীত পৃথিবীর ইতিহাস।
