সাতক্ষীরা সংবাদদাতা :
নাম তার কানু রায়। ৪০ বছর ধরে খেয়া পারাপার করছেন। খেয়া পারাপার করায় এখন তিনি সবার কাছে কানু মাঝি নামেই পরিচিতি। সব কিছুর দাম বাড়লেও তার ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন হয়নি। মাত্র ২ টাকায় খেয়া পারাপার করেন তিনি। ফলে দিন শেষে তার আয় হয় ১২০-১৫০ টাকা। সামান্য টাকায় সাত সদস্যের পরিবার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাকে।
কানু মাঝি সাতক্ষীরার তালা উপজেলার চর গ্রামের সরকারি জায়গায় বসবাস করেন। তিন মেয়েসহ তার পরিবারের সদস্য সাতজন। সামান্য আয়ে সংসার চালাতে হিমশিম খেলেও মায়ায় পড়ে বাপ-দাদার রেখে যাওয়া পেশা বদলাতে পারেননি তিনি।
স্থানীয়রা জানায়, তালায় সেতু হওয়ার আগে এই খেয়াঘাটি ছিল মানুষের পারাপারের একমাত্র মাধ্যম। এক সময় শত শত মানুষ খেয়াঘাট দিয়ে নিয়মিত যাতায়াত করতেন। সেতু হওয়ার পর এখানকার মাঝিদের জীবনে নেমে আসে দুর্ভোগ। বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া কেউ নৌকা দিয়ে নদী পার হয় না। নদীর ওপারে একটি সামাজিক বনায়ন থাকায় কিছু মানুষ কানু রায় নৌকায় সেখানে ঘুরতে যায়। তাছাড়া নদীর ওপারে অল্প কিছু সংখ্যক জনবসতি থাকায় তারা নিয়মিত যাতায়াত করে। সবমিলে দিনে ৫০-৬০ জনের মতো যাত্রী পারাপার করেন তিনি। তাতে তার আয় হয় ১২০-১৫০ টাকা।
কানু মাঝি বলেন, ৪০ বছর ধরে এই পেশায় আছি। বাপ-দাদার পেশা ছাড়তে পারিনি। অন্য পেশাতে গেলে তেমন কাজও করতে পারি না। যাত্রী পারাপার করে জনপ্রতি দুই টাকা পাই। তাই দিয়ে কোনো রকমে সংসার চালায়। খুব অভাব-অনটনের মধ্য দিয়ে জীবনযাপন করতে হয়। মোটা কাপড় ও মোটা চালের ভাত খেয়ে জীবনের অর্ধেক সময় কাটিয়ে দিয়েছি।
তিনি আরও বলেন, পৃথিবীর সব কিছুর দাম বেড়েছে, শুধু আমার পারিশ্রমিক বাড়েনি। পারাপারের দাম বাড়ালে মানুষ আর আমার নৌকয়ে উঠতে চায় না। তখন বিকল্প পথে যাতায়াত করে। তাই বাধ্য হয়ে পারাপার খরচ দুই টাকায় রেখেছি। ১০ বছর আগেও মানুষের কাছ থেকে দুই টাকা নিতাম, এখনো দুই টাকা নিই।
তালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রশান্ত কুমার বিশ্বাস বলেন, খেয়াঘাট ইজারার সময় মাঝিরা প্রথম সারিতে আবেদন করতে পারে। এটা তাদের জন্য একটা বড় সুযোগ। তাছাড়া সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তাদেরও দাম বাড়ানো দরকার। তারা আমাদের জানালে, তাদের নতুন প্রজন্মকে সরকারিভাবে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা যেতে পারে।