বার্তাকক্ষ
ঈদে পরিবারের সঙ্গে আনন্দ উদযাপন করতে রাজধানী ঢাকা ও বিভিন্ন জেলা শহর থেকে গ্রামে ছুটে যান কোটি কোটি মানুষ। তাদের ছুটির সেই সময়টাকে প্রাণবন্ত করে তুলতে তৎপর থাকেন ফায়ার সার্ভিস, চিকিৎসক, সাংবাদিক, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, পরিবহন শ্রমিক ও পরিচ্ছন্নতা কর্মীসহ বিভিন্ন জরুরি সেবা খাতের কর্মীরা। সবাই পরিবারের সঙ্গে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করতে পারলেও এসব পেশার কর্মরতদের ঈদের দিন পার হয় কাজের মধ্য দিয়েই।
নাগরিকদের চলাচল নির্বিঘ্ন, বাসা-বাড়ির নিরাপত্তা, সড়কের নিরাপত্তা, জনসাধারণের কাছে খবর পৌঁছে দেওয়া, নগর পরিচ্ছন্ন রাখা, এমনকি অসুস্থতা বোধ করলে চিকিৎসা সেবা দেওয়ার জন্য তৎপর থাকতে হয় সংশ্লিষ্টদের। এছাড়া সম্প্রতি আগুনের ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা যেমন তৎপর রয়েছেন, ঠিক তেমনি আগুন নেভানোর কাজে নেতৃত্ব দেওয়া ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরাও এ বছর আরও বেশি তৎপর।
ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের পরিচালক (অপারেশন্স) লেফটেন্যান্ট কর্নেল তাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘জরুরি সেবা হিসেবে আমাদের কোনও ছুটি নেই। সবসময় তৎপর থাকতে হয়। তারপরও ডিউটির সময় বাদে যতটুকু সময় পাওয়া যায়, তাতেই আমাদের পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানোর সুযোগ পাই। সাম্প্রতিক সময় আগুনের ঘটনা বেড়ে যাওয়ার কারণে আমরা আরও বেশি সচেতন রয়েছি।’
ঈদের দিনে রাজধানী ঢাকা শহরের নিরাপত্তার জন্য দায়িত্ব পালন করছেন পর্যাপ্ত সংখ্যক পুলিশ সদস্য। এছাড়া সংশ্লিষ্ট থানাগুলো তাদের দায়িত্বপ্রাপ্ত এলাকার নিরাপত্তার বিষয়গুলো তদারকি করছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) যুগ্ম কমিশনার অপারেশন্স বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, ‘ফাঁকা বাসা নিরাপত্তা সড়কে নিরাপত্তা বেপরোয়া গতি নিয়ন্ত্রণ চুরি-ছিনতাই প্রতিরোধে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ঈদের মধ্যেও কাজ করে যাচ্ছেন। আমরা কাজের মধ্যেই আনন্দ খুঁজে পাই। জনগণের সহায়তা দিতে আমরা ঈদেও প্রস্তুত রয়েছি।’
জনগণের নিরাপত্তায় ঈদের দিনেও পুলিশ সদস্যরা তৎপর উল্লেখ করে মিরপুর বিভাগের দারুস সালাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ আমিনুল বাশার বলেন, ‘জনগণের সেবার মন-মানসিকতা নিয়েই আমরা পুলিশে যোগ দিয়েছি। মানুষ যখন বিভিন্ন উৎসবগুলোকে উপলক্ষ করে আনন্দ উদযাপন করে, তখন তাদের নিরাপত্তার জন্য আমরা সচেষ্টা। পরিবারের সদস্যরাও এখন বিষয়টি মেনে নিয়েছেন। ডিউটি শেষ করে পরিবারের সঙ্গে যতটুকু সময় কাটাতে পারি, তাতেই পরিবারের সদস্যরা সন্তুষ্ট থাকেন।’
শাহ আলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমিরুল ইসলাম বলেন, ‘ফাঁকা বাসা বাড়ি বা অলিগলিতে কেউ যেন চুরি কিংবা ছিনতাই এর সুযোগ না পায় সে ব্যাপারে থানার টহল টীম কাজ করছে। সব বিষয়ের মাথায় রেখেই আমরা জনসাধারণের নিরাপত্তায় কাজ করছি।’
এদিকে সারা দেশের ঈদ উদযাপনসহ বিভিন্ন জরুরি খবর পৌঁছে দিতে ঈদের দিনেও দায়িত্ব পালন করছেন গণমাধ্যমকর্মীরাও। বেসরকারি টেলিভিশন বাংলাভিশনের সাংবাদিক রিশান নাসরুল্লাহ বলেন, ‘জনগণের কাছে সঠিক সংবাদ পৌঁছে দিতে আমরা ঈদের মধ্যেও কাজ করে যাচ্ছি। অফিস শেষে যতটুকুই সময় পাবো পরবর্তী সময়ে বাসায় গিয়ে পরিবারকে সময় দেবো।’
আরেক সাংবাদিক তাইমুর রশিদ বলেন, ‘সকালে সন্তানদের নিয়ে ঈদের জামাত আদায় করেছি। পরে অফিসে এসে কাজ করছি। অফিস শেষে যতটুকু সময় পাবো পরিবারের সাথে কাটাবো। এভাবেই কাটে আমাদের ঈদের দিনগুলো।’
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল নিউরো সার্জারি বিভাগ ইনডোর মেডিক্যাল অফিসার ডা. শুভ্র সাহা বলেন, ঈদের সকাল থেকে ডিউটিতে আছি। সকাল থেকে রাত আসছেন তাদের চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছি।
পপুলার মেডিকেল কলেজ হসপিটালের সার্জারি বিভাগের ইন্টার্ন ডা. স্বপ্নীল কে বিশ্বাস বলেন, আমাদের কলিগ তারা ছুটিতে আছেন, তাদের জন্য চিকিৎসা সেবা যেন ব্যহত না হয় সেজন্য আমরা দায়িত্ব পালন করছি। ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে আমরা ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করছি।
ঈদের-দিন-চিকিৎসকরা
স্যার সলিমুল্লাহ্ মেডিক্যাল কলেজ (মিটফোর্ড) হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের ইন্টার্ন ডা. সজিব কুমার সাহা বলেন, ‘পোস্ট অপারেটিভ ওয়ার্ডে ডিউটি করছি। ঈদের কারণে চিকিৎসা সেবা দেওয়ার যেন কোনও কমতি না থাকে সে জন্য ডাক্তার নার্সসহ সবাই দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছি। ঈদ সবার ভাল কাটুক এই প্রত্যাশা করি।’
ঈদকে কেন্দ্র করে সড়ক ফাঁকা থাকে দুর্ঘটনার সংখ্যা বেড়ে যায় সেসব বিবেচনা করে বিগত দিনগুলোর ধারাবাহিকতায় এবছর পঙ্গু হাসপাতালে ইমারজেন্সি বিভাগে বিশেষ সেবা বাড়ানো হয়েছে বলে জানান জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান নিটোর (পঙ্গু হাসপাতাল) পরিচালক আব্দুল গনি। তিনি বলেন, ‘আমরা চাই না সড়কে কোনও দুর্ঘটনা ঘটুক। তারপরও বেপরোয়া গতি কিংবা অন্যান্য কারণে যারা আহত হয়ে আমাদের কাছে আসেন, তাদের সঠিক এবং যথাযথ চিকিৎসার জন্য চিকিৎসকরা নিয়োজিত রয়েছেন। ঈদের কারণে সবাই ছুটিতে থাকলেও আমাদের চিকিৎসক পেশায় যারা জড়িত, তাদের কোনও ছুটি নেই আমরা মানবিক দিকগুলো বিবেচনা নিয়ে জনগণের পাশে রয়েছি।’
ঢাকার স্থানীয়দের সঙ্গে অনেকেই জরুরি প্রয়োজনে এই মহানগরেই ঈদ করছেন। আর তাদের বাসা-বাড়িসহ সড়কের ময়লা আবর্জনা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে ঈদের দিনও দায়িত্ব পালন করছেন পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) পরিচ্ছন্নতাকর্মী আফরোজা বলেন, ‘রাজধানীর সড়ক কিংবা বাসা বাড়ির ময়লা একদিন না নিলেই দুর্গন্ধ তৈরি হবে। এতে করে নগর অপরিচ্ছন্ন হবে, দুর্গন্ধ ছড়াবে। এছাড়া ঈদ ছাড়াও বিশেষ দিনগুলোতে আমাদের ছুটি খুব একটা কাটানো হয় না। এই কাজেই আমাদের ঈদের আনন্দ।’
