প্রতিদিনের ডেস্ক
ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জাকার্তার একটি বিশ্ববিদ্যালয় ‘১৯৪৭ সালের অক্টোবরে কাশ্মীর হত্যাকাণ্ড’ নিয়ে সেমিনারের আয়োজন করেছে। জাকার্তার মুহাম্মদিয়াহ বিশ্ববিদ্যালয়ের কাসমান সিংগোদিমেদজো হলে গত সপ্তাহে এ সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। ভারতীয় সংবাদ সংস্থা এএনআইয়ের খবরে বলা হয়েছে, ২২ অক্টোবর, ১৯৪৭ সালে কাশ্মীর পাকিস্তানের ভয়াবহ এক নৃশংসতা স্বাক্ষী হয়েছিল, যখন পাশতুন উপজাতী গোষ্ঠী মিলিশিয়া পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সঙ্গে মিলে জম্মু ও কাশ্মীরের একটি বড় অংশ দখল করার উদ্দেশ্যে ‘গুলমার্গ অপারেশন’ শুরু করে।
মুহাম্মদিয়াহ বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক সেমিনারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি ডিন ডোজনি গুনান্টো বলেন, ‘রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষার্থীদের, বিশেষ করে যারা আন্তর্জাতিক সম্পর্ক নিয়ে পড়ালেখা করছে, তাদেরকে বৈশ্বিক ঘটনাগুলো জানতে ও বুঝতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা শিক্ষার্থীদের জ্ঞান সমৃদ্ধ করার বিষয়ে উৎসাহী হতে বলি। ইন্দোনেশিয়ার জন্য, মানবতার পরিপন্থী বিষয়গুলো সংবিধানেরও পরিপন্থী।’ সেমিনারে বক্তারা ২২ অক্টোবর ১৯৪৭ সালে কাশ্মীর ট্র্যাজেডির ইতিহাস ব্যাখ্যা করেন। ‘গুলমার্ক অপারেশন’ নামে পরিচিত ওই হামলা ৩৫ হাজারের বেশি মানুষের প্রাণ কেড়ে নেয়। জম্মু ও কাশ্মীরের বেশিরভাগ অংশ দখল করতে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সাথে পশতুন উপজাতীয় মিলিশিয়া ওই হামলা চালায়। জম্মু-কাশ্মিরের ইতিহাসে গুলমার্গ অপারেশন একটি ‘কালো দিন’ হিসেবে পরিচিত। সেদিন শুধু ৩৫ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যুর ঘটনাই ঘটেনি, পাশাপাশি ধর্ষণ ও অপহরণের শিকার হয় এই অঞ্চলের নারী ও মেয়েরা। হাজার হাজার মানুষকে অপহরণ করা হয়েছিল ও পাকিস্তানে ক্রীতদাস হিসেবে বিক্রি করা হয়েছিল। পাশাপাশি পুচ এবং মিরপুরে হিন্দু ও শিখদের গণহত্যা করা হয়েছিল। কাশ্মীরি মুসলমান যারা পাকিস্তানে যুক্ত হতে অস্বীকার করেছিল, তাদেরকেও রেহাই দেওয়া হয়নি। জম্মু ও কাশ্মীরের মহারাজাকে শিক্ষা দিতে পাকিস্তান ‘গুলমার্ক অপারেশন’ চালায়। সেই সঙ্গে এটি ছিল সামরিক ক্ষমতাবলে জম্মু ও কাশ্মিরের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার একটি কৌশল । ভারতনিয়ন্ত্রিত মুসলিম-অধ্যুষিত কাশ্মীর এবং জম্মুর অর্থনৈতিক উন্নয়ন বাড়াতে ও শান্তির পরিবেশ তৈরিতে ভারত সরকার ২০১৯ সালে সংবিধান থেকে ৩৭০ অনুচ্ছেদ এবং ১৫ অনুচ্ছেদ বাতিল ঘোষণা করে। এর ফলে জম্মু ও কাশ্মীরের মর্যাদা ভারতীয় অন্যান্য সব রাজ্য এবং ইউনিয়নের সমান হয়ে যায়। সেমিনারে ল্যাবরেটরি অব ইন্দোনেশিয়ান অ্যান্ড গ্লোবাল স্টাডিজের পরিচালক ডেবি অ্যাফিয়্যান্ট কাশ্মীরে শান্তির বিভিন্ন প্রভাব ব্যাখ্যা করেন, যার মধ্যে নিহতের সংখ্যা হ্রাস, সন্ত্রাসী গ্রেপ্তার সংখ্যা বৃদ্ধি সহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু তিনি তুলে ধরেন। সেমিনারে জাকার্তা পোস্টের জ্যেষ্ঠ সংবাদিক বীরমাল্লা আনজাইয়া ব্যাখ্যা করেন যে, জম্মু ও কাশ্মীরের পুনর্গঠন বর্তমানে মানবিক সহায়তা, সংকট ব্যবস্থাপনা, সামাজিক অবকাঠামো, উন্নয়ন প্রকল্প এবং অর্থনৈতিক অবকাঠামোর সুযোগের মধ্যে পরিচালিত হচ্ছে। সেমিনারে বক্তারা দাবি করেন, ১৯৪৭ সালের অক্টোবরে জম্মু ও কাশ্মীরে যা ঘটেছিল তার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে পাকিস্তানকে দায়ী করতে হবে। ১৯৪৭ সালের আগস্টে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের শেষে, অখন্ড ভারতে ৫৬২টি রাজকীয় রাজ্য ছিল। ব্রিটেন এই রাজ্যগুলো নিয়ন্ত্রণ করতো, কিন্তু কখনও অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করেনি। রাজ্যগুলো স্থানীয় রাজা বা নবাবদের দ্বারা শাসিত ছিল। স্বাধীনতার সময়, এই রাজ্যগুলোকে ভারত বা পাকিস্তানে যুক্ত হওয়ার কিংবা স্বাধীন থাকার বিকল্প সুযোগ দেওয়া হয়। বেশিরভাগই ভারতে যোগ দেয়, আবার কেউ পাকিস্তানে যোগ দেয়। মুসলিম-সংখ্যাগরিষ্ঠ জম্মু ও কাশ্মীর ছিল সেসব রাজ্যগুলোর মধ্যে একটি, যারা তাদের যোগদানের সিদ্ধান্ত বিলম্বিত করেছিল। সেসময় জম্মু ও কাশ্মীরের শাসক ছিলেন হিন্দু মহারাজা হরি সিং, তিনি ১৯৪৭ সালের অক্টোবর পর্যন্ত ভারত বা পাকিস্তানের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার সিদ্ধান্ত নেননি। পাকিস্তান অধৈর্য হয়ে পড়ে এবং যে কোনো উপায়ে রাজ্যটি দখল করতে চেয়েছিল। এই কারণেই জম্মু ও কাশ্মীর দখলের জন্য ‘অপারেশন গুলমার্গ’ শুরু করেছিল। শ্রীনগর যখন পাকিস্তানি হানাদারদের সরাসরি হামলার সম্মুখীন হয়, তখন জম্মু ও কাশ্মীরের শাসক রাজা হরি সিং ভারতের সাহায্য চেয়েছিলেন এবং ২৬ অক্টোবর, ১৯৪৭ সালে যোগদান চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। ১৯৪৭ সালের ২৭ অক্টোবর তারিখে ভারতীয় সেনারা জম্মু ও কাশ্মীরে প্রবেশ করে এবং জম্মু, কাশ্মীর ও লাদাখ অঞ্চল মুক্ত করে, যা এখন ভারতের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। পাকিস্তানও কাশ্মীরের কিছু এলাকায় কর্তৃত্ব ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছিল। ফলে নিয়ন্ত্রণ রেখা প্রতিষ্ঠার পর কাশ্মীর বর্তমানে ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীর ও পাকিস্তাননিয়ন্ত্রিত কাশ্মীর অংশে বিভক্ত। সেমিনারে বক্তারা উল্লেখ করেন, ভারত আইনী উপায়ে জম্মু ও কাশ্মীর অধিগ্রহণ করেছিল, অপরদিকে পাকিস্তান অবৈধ এবং সহিংস উপায়ে কাশ্মীরের কিছু অংশের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছিল।
