এমামুল হাসান সবুজ, ঝিকরগাছা
ফেব্রুয়ারি মানেই ফুল উৎসব, আনন্দ ও ভালোবাসা বিনিময়। এ মাসেই রয়েছে বসন্ত উৎসব, বিশ্ব ভালোবাসা ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। অন্য সব মাসের তুলনায় ফেব্রুয়ারিতে দেশে ফুলের চাহিদা থাকে সবচেয়ে বেশি। এ তিনটি দিবসকে কেন্দ্র করে অর্ধশত কোটি টাকার ফুল বিক্রির টার্গেট নিয়েছে যশোরের গদখালীর ফুলের রাজ্যের চাষীরা। ফুল বাগানের পরিচর্যা নিয়ে দিনরাত ব্যস্ত সময় পার করছেন এখানকার ফুল চাষিরা। বাংলাদেশ ফুল চাষি সমিতির সভাপতি আব্দুর রহিম জানান, দেশে গোলাপ ফুলের চাহিদার সিংহভাগ পূরণ করে যশোরের গদখালীর চাষিরা। শুধু গোলাপ নয়, ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালী ইউনিয়ন জুড়ে বিভিন্ন ফুলের চাষ হয়। উপজেলার ৭৫টি গ্রামের সাড়ে ছয় হাজার হেক্টর জমিতে ফুলের চাষ হয় বলে তিনি দাবি করেন। এ চাষে কৃষকরা লাভবান হচ্ছে। ফুল চাষের কারণে ইউনিয়নটি পর্যটক এলাকায় পরিণত হয়েছে। তিনি বলেন, বর্তমানে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ওই তিনটি দিবসে অর্ধশত কোটি টাকার ফুল বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে দিনরাত ফুল ও ফুলগাছের পরিচর্যা করছেন চাষিরা। এসব দিবসে যশোরের গদখালীর অর্ধশত কোটি টাকার ফুলই সারাদেশে সরবরাহ করা হবে তিনি জানান।
এদিকে, ফুল উৎসবের এ মাসে ১০ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হয়েছে অনুষ্ঠান। এসব অনুষ্ঠানের সব ফুলই গদখালি থেকে আনা হয়। ১২ ফেব্রুয়ারি থেকে যশোরে বসন্ত বরণ উৎসবের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে, ১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ভালোবাসা দিবস ও ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। এ তিনটি দিবসকে কেন্দ্র করে অর্ধশত কোটি টাকার ফুল বিক্রির প্রস্তুতি চুড়ান্ত করেছে গদখালীর চাষিরা। গদখালীর ফুল চাষি বাবলুর রহমান জানান, প্রতিদিন সন্ধ্যা ও ভোরে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা পাইকার ও খুচরা ব্যবসায়ীরা ফুল কিনতে ভিড় জমাচ্ছেন ঝিকরগাছার গদখালী বাজারে। দেশের সর্ববৃহৎ পাইকারী ফুলের বাজার গদখালি। এ কারণে গদখালিকে দেশের ফুলের রাজ্য বা রাজধানী বলা হয়ে থাকে। এ মাসে তিনটি দিবসকে সামনে রেখে উপজেলার চাষিরা অর্ধশত কোটি টাকার ফুল বিক্রির টার্গেট নিয়েছে। যশোর শহর থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে ঝিকরগাছা উপজেলার ৭৫টি গ্রামের সাড়ে ছয় হাজার হেক্টর জমিতে চাষ করা হয় হরেক রকমের ফুল। বর্তমানে শত শত বিঘা জমিতে গাঁদা, গোলাপ, গ্লাডিওলাস, রজনীগন্ধা, জারবেরা, ডেইজি জিপসি, ডালিয়া, চন্দ্রমল্লিকাসহ বিভিন্ন প্রজাতির ফুলের চাষ নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন চাষিরা। গদখালরি ফুলের রাজ্যে ভিন্ন মাত্রা যোগ করেছে টিউলিপ। যশোরের গদখালীতে গত বছর চাষ হয়েছিল, তারই ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে এ বছরও বিপুল পরিমাণ জমিতে চাষ করা হয়েছে টিউলিপ। এসব বাগানকে ঘিরে গড়ে উঠেছে দোকানপাট, হোটেল, রেস্তোরা ও বাজার। সরকারি বন্ধের দিনে এসব এলাকার মানুষের উপস্থিতিতে মুখরিত হয়ে ওঠে। এ বিষয়ে যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাসুম হোসেন পলাশ জানান, উপজেলার গদখালীতে এবার সাড়ে ছয় হাজার হেক্টর জমিতে ফুল চাষ হয়েছে। গদখালির কয়েকটি গ্রাম ও বাজার সড়কের পাশে, বাড়ির সামনে এমনকি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সামনের ফাঁকা জায়গায় ফুলের চাষ হয়েছে। দুপুরের পর প্রতিটি বাগানে শ্রমিকের ব্যস্ততা শুরু হয়ে যায়। ফুল কাটা, বাছাই, ভেজানো, বাঁধা সবকিছুই কৃষক সন্ধ্যার আগে শেষ করেন। এরপর বিক্রির উদ্দেশ্যে নিয়ে যান গদখালির ফুলের বাজারে। কারণ সন্ধ্যার পর জমে ওঠে গদখালীর ফুলের বাজার।