বার্তাকক্ষ ,,ভোক্তা পর্যায়ে ইলেকট্রনিক পণ্য থেকে শুরু করে সব ধরনের পণ্যের চাহিদা অনেক কমেছে। এর পেছনে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব, মূল্যস্ফীতি অন্যতম প্রভাবক হিসেবে কাজ করেছে। চাহিদা কমায় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর বিক্রিও কমেছে। এ সংকটাবস্থা থেকে উত্তরণে চিপ উৎপাদনকারী থেকে শুরু করে পণ্য জোড়া দেয়া প্রতিষ্ঠানগুলো বৈদ্যুতিক গাড়ির বাজারে ঝুঁকছে। খবর ফ্রিমালয়েশিয়াটুডে।
গাড়ি উৎপাদন বাজারে প্রবেশের বিষয়টি অনেক প্রতিষ্ঠানকে বড় আশা দেখালেও বিশ্লেষকরা বলছেন, স্মার্টফোন থেকে অন্যান্য ডিভাইসে চাহিদায় যে ভাটা পড়েছে, শুধু বৈদ্যুতিক গাড়ি বিক্রি করে সেখান থেকে বেরিয়ে আসা সম্ভব না। চুক্তিভিত্তিক বৈদ্যুতিক পণ্য উৎপাদনকারী ও প্রযুক্তি খাতের শীর্ষ প্রতিষ্ঠান ফক্সকন বিশ্ব অর্থনীতির সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন। কিন্তু বৈদ্যুতিক গাড়ির বাজারের বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটি ইতিবাচক প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছে।
সম্প্রতি সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ফক্সকনের চেয়ারম্যান ইয়াং লিউ বলেন, ‘চলতি বছরের প্রথম ও দ্বিতীয় প্রান্তিক পর্যন্ত রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং কভিড-১৯ মহামারীর প্রভাব চলমান থাকবে। অন্যদিকে বৈদ্যুতিক গাড়ির বাজার এখনো প্রবৃদ্ধিতে রয়েছে। এ খাতে চলতি বছর উত্তর আমেরিকা নেতৃস্থানীয় পর্যায়ে থাকবে বলেও জানান তিনি। অ্যাপলের আইফোন অ্যাসেম্বল করার মাধ্যমে প্রযুক্তি খাতে পরিচিতি পায় ফক্সকন, কিন্তু মূল ব্যবসায় অবনমন শুরু হওয়ায় প্রতিষ্ঠানটি বর্তমানে ব্যাপক হারে গাড়ি উৎপাদন শিল্পের দিকে ঝুঁকছে। বৈদ্যুতিক গাড়ি উৎপাদন শিল্পে যোগ দেয়ার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি ২০২৫ সাল নাগাদ গ্রস মার্জিন ২০২১ সালের ৬ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশে উন্নীত করতে চায়। গ্রস মার্জিন হচ্ছে কোনো প্রতিষ্ঠানের মোট বিক্রি থেকে উৎপাদন খরচ বাদ দেয়ার পর যে অর্থ থাকে তার পরিমাণ।
ভোক্তা পর্যায়ের বৈদ্যুতিক পণ্যের তুলনায় অটোমোটিভ বা গাড়ি উৎপাদন খাতে মার্জিনের হার বেশি। যদিও পণ্য ও পরিষেবার ওপর মার্জিনের হার নির্ভর করে থাকে। বৈদ্যুতিক ডিভাইস অ্যাসেম্বল করার কাজে প্রফিট মার্জিন ৫ শতাংশ বা তার তুলনায় কম। যেখানে অটোমোটিভ ইলেকট্রনিক যন্ত্রাংশ তৈরিতে এর হার স্বাভাবিকভাবেই ১০ শতাংশের বেশি।
চায়না স্টার অপ্টোইলেকট্রনিকস টেকনোলজির (সিএসওটি) এক ম্যানেজার বলেন, ‘গত বছর থেকে স্মার্টফোন, টেলিভিশন ও নোটবুকের চাহিদা উল্লেখযোগ্য হারে কমতে শুরু করেছে। তবে আশার কথা হচ্ছে অটোমোটিভ বা গাড়ি উৎপাদন শিল্পে আমাদের অগ্রগতি হচ্ছে।’
চলতি বছর ইউরোপের গাড়ি উৎপাদনকারীদের কাছে ডিসপ্লে সরবরাহ শুরু করবে সিএসওটি। এ বিষয়ে অবগত দুটি সূত্রে তথ্যটি জানা গেছে। এর মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি প্রথমবারের মতো বিদেশের গাড়ি উৎপাদন শিল্পে প্রবেশ করবে। ২০১৮ সালে প্রতিষ্ঠানটি প্রথম গাড়ি শিল্পে প্রবেশ করে। বর্তমানে চীনের অন্যতম বৈদ্যুতিক গাড়ি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান বিওয়াইডির প্রধান সরবরাহকারী। এ বিষয়ে নিক্কেই এশিয়ার পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলেও প্রতিষ্ঠানটি কোনো মন্তব্য করেনি।
আইফোন অ্যাসেম্বলের ছোট প্রতিষ্ঠান পেগাট্রন ও ডেল কম্পিউটার নির্মাতা কম্পাল ইলেকট্রনিকস চলতি বছর অটোমোটিভ ব্যবসার মাধ্যমে বড় প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছে। নিক্কেই এশিয়ার এক প্রতিবেদনের তথ্যানুযায়ী, উত্তর আমেরিকায় বৈদ্যুতিক গাড়ির যে চাহিদা তা পূরণে মেক্সিকোয় নিজেদের অবস্থান শক্তিশালী করছে ফক্সকন, পেগাট্রন ও কম্পাল।
গাড়িকে ইভিতে রূপান্তর প্রক্রিয়া প্রযুক্তি খাতের সরবরাহকারীদের জন্য বড় সুযোগ, কেননা বৈদ্যুতিক গাড়িতে অনেক সেমিকন্ডাক্টর, ইলেকট্রনিক সিস্টেম ও পাওয়ার ম্যানেজম্যান্ট সিস্টেমের প্রয়োজন হয়। যেগুলোর সরবরাহ এসব প্রতিষ্ঠান থেকেই হয়ে থাকে।
