সোহাগ আলী, কালীগঞ্জ
ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার শ্রী নীলকমল পাল নামের এক ব্যাক্তির গর্ভবতী গাভীর সিজার করেন চৌগাছা উপজেলার প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা ডা. আনোয়ারুল করিম। গাভীটি সিজারের পারিশ্রমিক হিসেবে তিনি ১২ হাজার টাকা নিয়ে খামারির বাড়ি ত্যাগ করেন। যার এক ঘন্টার মধ্যেই মৃত বাছুর দেওয়া গাভীটিও মারা যায়। এ ঘটনাটি ঘটেছে ঝিনাইদহ কালীগঞ্জ উপজেলার ১০ নং কাষ্টভাঙ্গা ইউনিয়নের রামপুর পালপাড়ার বাসিন্দা মৃত দশরথ পালের ছেলে নীলকমল পালের বাড়িতে। গত ১৩ আগস্ট ফ্রিজিয়ান ক্রস সাদা-কালো গর্ভবতী গাভী গরুটি প্রসব বেদনায় অস্থির হয়ে পড়ে এবং খাবার খাওয়া বন্ধ করে দেই। এই অবস্থায় কালিগঞ্জ উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের উপ-সহকারী প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা এ বি এম হেলাল উদ্দিনকে জানালে তিনি আসেন । তিনি গাভীটি ভালোভাবে দেখে জানান, গাভীর পেটের মধ্যে থাকা বাচ্চা মারা গেছে। অতিসত্বর গরুটি সিজার করা প্রয়োজন বলে জানান। এসময় হেলাল উদ্দিন কালিগঞ্জ উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাকে ব্যাপারটি জানান। তিনি আসার কথা বলেও পরবর্তীতে না আসায় হেলাল উদ্দিন তার ভিজিট ফি বাবদ ২ হাজার টাকা নিয়ে চলে যান। স্থানীয় সনদবিহীন পল্লী চিকিৎসক শাহাবুদ্দিনের মাধ্যমে চৌগাছা উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. আনোয়ারুল করিমকে সিজারের জন্য আনা হয়। তিনি কয়েকজনকে সাথে নিয়ে দুপুরের কিছু পরে মোবাইল ভেটেনারি ক্লিনিক (এমভিসি) নিয়ে নীলকমলের বাড়িতে হাজির হন এবং সিজার করেন। সিজার শেষে ডা. আনোয়ারুল করিম নীলকমলের কাছ থেকে ১২ হাজার টাকা নিয়ে চলে যান। তিনি চলে যাওয়ার একঘন্টার মধ্যেই গাভীটি মারা যায়। এ ব্যাপারে কালীগঞ্জ উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের উপ-সহকারী প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা এবিএম হেলাল উদ্দিনের নিকট অসুস্থ গাভী দেখে ২ হাজার টাকা নেওয়া এবং যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ না করে ফিরে যাওয়ার ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ, টাকা নিয়েছি, ঔষধও দিয়েছি। আর স্যারকে সব জানিয়েছি উনি না আসলে আমি বসে থেকে কি করবো।’ গাভীটির মালিক নীলকমল আক্ষেপ করে বলেন, ‘কালীগঞ্জের পশু ডাক্তার সরকারি গাড়ি থাকা সত্ত্বেও তিনি এসে আমার গরুকে চিকিৎসা দেননি। আবার ওই গাড়ি নিয়েই পার্শ্ববর্তী চৌগাছা উপজেলার প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ১২ হাজার টাকার বিনিময়ে অফিস টাইমে এসে সিজার করে গেলেন। আমার প্রায় দেড় লাখ টাকার সম্পদ এইসব লোকদের অবহেলার কারণে চোখের সামনে শেষ হয়ে গেল। সিজার করে জোর করে টাকা নিয়েছে আমার কাছ থেকে। আমি এর বিচার চাই। প্রাণীসম্পদ অফিসের নিকট আমি ক্ষতিপূরণ চাই। এ ব্যাপারে চৌগাছা উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. আনোয়ারুল করিমের নিকট অফিস টাইমে সরকারি গাড়ি ব্যবহার করে অন্য উপজেলায় চিকিৎসা দিয়ে জোরপূর্বক টাকা আদায়ের কোন সরকারি বিধান আছে কিনা জানতে চাইতে তিনি কোন সদুত্তর দিতে পারেননি। তবে তিনি খামারি নীলকমলের গাভীর সিজার করা এবং ওই বাবদ টাকা নেওয়ার কথা স্বীকার করেন। এ ঘটনায় কালিগঞ্জ উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের কর্মকর্তাগণের দায়িত্বে অবহেলার ব্যাপারে ঐ অফিসের কর্মকর্তা ডাক্তার রেজাউল করিমের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, ভুক্তভোগীকে ঘটনার বিবরন দিয়ে একটা লিখিত আবেদন করতে বলেন। আমি তদন্ত করে দেখবো। যশোর জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ রাশেদ জানান,এক উপজেলার গাড়ি নির্দেশনা ছাড়া অন্য উপজেলায় ব্যবহার এবং চিকিৎসা প্রদান করে টাকা নেওয়ার নিয়ম নেই। আমি খোজ খবর নিয়ে দেখি।আইনের ব্যত্তয় ঘটলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে।
চৌগাছার প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তার সিজারের এক ঘন্টা পরই গাভী ও বাছুরের মৃত্যু
Published on
