অরুন দেবনাথ, ডুমুরিয়া :
খুলনার ডুমুরিয়ায় দুটি খালের অবৈধ দখল উচ্ছেদ করতে গিয়ে বাধার মুখে পিছু হটেছেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মামুনুর রশীদ। ক্ষমতাসীন দলের কয়েকজন নেতার বাধার মুখে অভিযান না চালিয়ে ফিরে এসেছেন তিনি। শনিবার সকালে ওড়াবুনিয়া বিলের মধুমারী ও বিষের খালে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করতে গিয়ে বাধার মুখে পড়েন তিনি।
আটলিয়া ও মাগুরাঘোনা ইউনিয়নের ওড়াবুনিয়া বিলের মধুমারী ও বিষের খালে শনিবার ছিলো অবৈধ দখল উচ্ছেদের পূর্ব নির্ধারিত দিন। উচ্ছেদ অভিযানের জন্য গত দুই দিন এলাকায় মাইকিং করে প্রচারণা চালানো হয়। এতে ব্যাপক সাড়া দিয়ে স্থানীয় দুই শতাধিক কৃষক স্বেচ্ছায় উচ্ছেদ অভিযানে অংশ নেয়ার জন্যে অপেক্ষা করতে থাকেন। তারা সকাল থেকে মাগুরাঘোনা করিম বকসের মোড়ে অবস্থান নেন। সকাল সাড়ে ১১ টার দিকে উপজেলা প্রশাসনের অভিযানিক দলটি সেখানে পৌঁছায়। অভিযানের শুরুতেই ক্ষমতাসীন দলের কয়েকজন নেতার বাধার মুখে পড়েন ভ্রাম্যমান আদালত।
এ প্রসঙ্গে ডুমুরিয়ার সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মামুনুর রশীদ বলেন, পুর্ব নির্ধারিত দিনে মধুমারী ও বিষের খালের অবৈধ দখল উচ্ছেদ অভিযানে যাই। কিন্তু অবৈধ দখলদারদের পক্ষে দুই জন ইউপি চেয়ারম্যান এবং কয়েক জন রাজনৈতিক নেতা অভিযান পরিচালনা না করতে অনুরোধ করেন। তারা ঘেরের মাছ উঠানোর জন্য সময় চেয়েছেন। যার কারণে তাদেরকে তিন সপ্তাহ অর্থাৎ আগামী অক্টোবর মাসের ১ তারিখ পর্যন্ত সময় দেয়া হয়েছে। এর ভেতরে সার্ভেয়ারের মাধ্যমে খালের সীমানা নির্ধারন করা হবে। নির্ধারিত দিন পার হলে অভিযান পরিচালনা করা হবে।
উল্লেখ্য, মধুমারী ও বিষের খাল দুইটি দীর্ঘদিন ধরে কতিপয় প্রভাবশালী ব্যক্তি অবৈধ বেঁড়িবাঁধ ও নেট-পাটা দিয়ে মাছ চাষ করছেন। যার কারনে বিলের পানি নিষ্কাশনে বাধা সৃষ্টি হচ্ছে। ওই বিলে অন্তত ২ হাজার একর ফসলি জমি রয়েছে। বর্ষা মৌসুমে এলাকার পানি নিষ্কাশন ও শুষ্ক মৌসুমে ধান ও মাছ চাষাবাদের জন্য খাল দুইটির গুরুত্ব অপরিসীম। কিন্ত বিগত কয়েক বছর ধরে মাগুরাঘোনার মতিয়ার রহমান সরদার, দক্ষিণ চুকনগর গ্রামের আলতাপ হোসেন শেখ, চাকুন্দিয়া গ্রামের আলমগীর শেখ, নরনিয়া গ্রামের সিরাজুল ইসলাম শেখ, মালতিয়া গ্রামের জব্বার মল্লিক ও আব্দুল হালিম মোড়লসহ কতিপয় জমির মালিক তাদের জমির পাশ দিয়ে প্রবাহিত খাল দুইটির বিভিন্ন অংশে অবৈধভাবে বেড়িবাঁধ, পাটা দিয়ে ঘের তৈরী করে মাছ চাষ করছেন। যার কারণে খাল দিয়ে পানি প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। ফলে বর্ষা মৌসুমে বিলের মৎস্যঘের তলিয়ে যাওয়াসহ ধানের চাষ ব্যহত হচ্ছে। অপর দিকে মাগুরাঘোনা ইউনিয়ের বেতাগ্রাম, ঘোষড়া, কাঞ্চনপুর, হোগলাডাঙ্গা, মাগুরাঘোনা গ্রামসহ পার্শ^বর্তী তালা উপজেলার কয়েকটি গ্রামের পানি নিষ্কাশনের এক মাত্র পথ খাল দুইটিতে বাধ থাকায় পানি বের হতে না পারায় এলাকা প্লাবিত হয়ে আসছে। যার কারণে গত এপ্রিল মাস থেকে এলাকার অন্তত ২০০ শতাধিক ভূক্তভোগী সাধারণ মানুষ লিখিত ভাবে একাধিকবার উপজেলা প্রশাসনের কাছে খাল দুইটির অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ করে পানি প্রবাহ সুগম করা দাবি জানিয়ে আসছেন।