Sunday, December 3, 2023
Homeমুক্ত ভাবনাতফসিল: সংকটের শুরু না শেষ?

তফসিল: সংকটের শুরু না শেষ?

Published on

সাম্প্রতিক সংবাদ

গৌরবদীপ্ত বিজয়ের মাস

জিনিয়া রাজিন আজ ডিসেম্বরের ৩ তারিখ। একাত্তরের এই দিনে একদিকে যেমন বাংলার বুকে এগিয়ে চলছিল...

ভোটের আগে ও পরে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন

জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে এলেই ভয়-আতঙ্কে ভুগতে থাকে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়। এ ভয়ভীতি, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা মোটেই...

শরিকদের বেকায়দায় ফেলে এগোচ্ছে আওয়ামী লীগ!

প্রতিদিনের ডেস্ক বিগত তিনটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আসন ভাগাভাগি করে ভোটে অংশ নিয়েছিল আওয়ামী লীগের...

ফার্মগেটে ককটেল বিস্ফোরণ: দুই মোটরসাইকেল আরোহী আহত

প্রতিদিনের ডেস্ক রাজধানীর ফার্মগেটে দুটি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় দুই জন আহত হয়েছেন।...

প্রভাষ আমিন
আমার এক বন্ধু বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। ২৮ অক্টোবর মহাসমাবেশে অংশ নিতে তিনি ঢাকায় এসেছিলেন। তবে সংঘাত শুরুর আগেই ফিরে গেছেন গ্রামে। ফিরলেও বাড়িতে থাকতে পারেননি তিনি। কোনও সহিংসতায় জড়িত না থাকলেও ২৮ অক্টোবরের পর থেকেই পালিয়ে আছেন। মাঝে মধ্যেই আমাকে ফোন করে জানতে চান, নির্বাচনের তফসিল কবে ঘোষণা করা হবে।
তার ধারণা হলো, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হলে তার পালিয়ে বেরানোর দিন ফুরাবে। তখন নির্বাচন কমিশনের হাতে ক্ষমতা চলে গেলে সরকার হয়তো আর নির্বিচারে ধরপাকড় চালাতে পারবে না। তফসিল ঘোষণার পরদিন মানে বৃহস্পতিবার সকালেও তিনি ফোন করলেন। এখনও তিনি বাড়ি ফেরার সাহস পাচ্ছেন না। আরও দুয়েক দিন দেখতে চান। আমি তাকে কোনও আশার বাণী শোনাতে পারিনি। কাগজে-কলমে তফসিল ঘোষণার পর থেকে নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সব ক্ষমতা নির্বাচন কমিশনের হাতে চলে আসার কথা।
সরকার এখন শুধু রুটিন ওয়ার্ক করবে, কোনও নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্ত নেবে না। কিন্তু বাস্তবতা হলো বাংলাদেশে সব কিছু কাগজ মেপে হয় না।
আমার সেই বন্ধুর মতো আরও অনেকেই অপেক্ষা করছিলেন নির্বাচনের তফসিলের জন্য। দেশে যেমন একটা শ্বাসরুদ্ধকর রাজনৈতিক অবস্থা চলছিল, তাতে অনেকের ধারণা, ভালো হোক আর খারাপ হোক, তফসিল ঘোষণার পর একটা পরিবর্তন আসবে। তফসিল ঘোষণা মানে হলো নির্বাচনের ট্রেনের যাত্রা শুরু। এখন কারা কারা সেই ট্রেনের যাত্রী হবেন, সেটা দেখার অপেক্ষা। তবে একটা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে সবার মনে, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণায় আসলে সংকট শুরু হলো না শেষ? এখনই এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়া মুশকিল।
বিএনপি অনেক দিন ধরেই সরকার পতনের একদফা দাবিতে আন্দোলন করে আসছে। প্রাথমিকভাবে সে আন্দোলন শান্তিপূর্ণই ছিল। কিন্তু গত ২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশের দিন সংঘাতের পর পাল্টে গেছে দৃশ্যপট। বিএনপি আবার ফিরে গেছে হরতাল-অবরোধ আর অগ্নিসন্ত্রাসে। সরকারও সংযত অবস্থান থেকে সরে এসে চড়াও হয়েছে বিএনপির ওপর। প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা, পিটিয়ে পুলিশ হত্যা, হাসপাতালে হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগের মামলায় বিএনপির অধিকাংশ কেন্দ্রীয় নেতা এখন হয় কারাগারে, নয় পলাতক। আমার সেই বন্ধুর মতো কর্মীদের অনেকেও হয় পালিয়ে আছেন, নয় কোনও না কোনও মামলায় ধরা পড়েছেন। ২৮ অক্টোবরের পর থেকেই বিএনপি নিয়মিত বিরতিতে হরতাল-অবরোধ চালিয়ে যাচ্ছে। বছরের শেষভাগে এসে টানা হরতাল-অবরোধে বিপর্যস্ত দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এখন খোলা থাকে শুক্র-শনিবার। এই দুদিন যেন ওয়ার্কিং ডে। সারা সপ্তাহে সবার কাজ জমে থাকে এই দুদিনের জন্য।
আমার ছেলের ইউনিভার্সিটিতে পরীক্ষা হয় এখন শুক্র-শনিবারে। সেভাবেই সবাই প্রস্তুতি নিচ্ছিল। হঠাৎ এক মঙ্গলবারে অবরোধে বিরতি থাকায় তাদের এক বিভাগের পরীক্ষা হয়ে যায়। অপ্রস্তুত অবস্থায় পরীক্ষায় বসতে হয়েছিল তাদের। অবরোধের কারণে পণ্য পরিবহনের বিঘ্ন সৃষ্টির প্রভাব পড়েছে নিত্যপণ্যের বাজারে। ২৮ অক্টোবর থেকে ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত ১১৭টি বাসে আগুন দেওয়া হয়েছে। ঝুঁকিতে থাকা অর্থনীতির ঝুঁকি আরও বাড়ছে। পত্রিকায় দেখলাম, হরতাল বা অবরোধে প্রতিদিন ৬ হাজার কোটি টাকা ক্ষতি হয়। কতদিন এভাবে চলবে? তফসিল ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে বিএনপি তা প্রত্যাখ্যান করে রবিবার-সোমবার আবার হরতাল ডেকেছে। বিএনপি আন্দোলনে থাকলেও মাঠে নেই। গোপন জায়গা থেকে কর্মসূচি ঘোষণা করে গাড়ি পোড়ানোতেই তাদের কর্মসূচি শেষ। এভাবে আন্দোলন করে যে আওয়ামী লীগ সরকারকে হটানো যাবে না, এটা বিএনপিও ভালো করেই জানে। তাহলে তাদের এখন লক্ষ্যটা কী? দাবি আদায়ের মতো প্রবল আন্দোলনও করবে না আবার নির্বাচনেও অংশ নেবে না। তাহলে বিএনপি কী করবে?
এটা ঠিক তফসিল ঘোষণা হলেও রাজনীতিতে যেহেতু কোনও সমঝোতা হয়নি, তাই সংকট আসলে শেষ হয়নি, সংকট এখন নতুন ধাপে উন্নীত হয়েছে। নির্বাচন কমিশন যে তফসিল ঘোষণা করেছে, তাতে নিবন্ধিত সব দল অংশ নিলে ভালো। না নিলেও নির্বাচন কমিশনকে তফসিল অনুযায়ী এগিয়ে যেতে হবে। তবে তফসিল ঘোষণা মানেই সব শেষ হয় যায়নি। প্রধান নির্বাচন কমিশনারও তফসিল ঘোষণার সময় ‘সংলাপের মাধ্যমে সমঝোতা ও সমাধান অসাধ্য নয়’ বলে মন্তব্য করেছেন। তাই সময় ফুরিয়ে যাওয়ার আগেই সংকট সমাধানের একটা উপায় বের করা দরকার। বাংলাদেশের অর্থনীতি দীর্ঘমেয়াদি রাজনৈতিক সহিংসতা ধারণ করার মতো অবস্থায় নেই। এটা আমাদের রাজনীতিবিদরা যত তাড়াতাড়ি বুঝবেন, ততই মঙ্গল। রাজনীতিটা তো তারা দেশের জন্যই করেন, জনগণের জন্যই করেন। জনগণকে জিম্মি করে, অর্থনীতিকে পঙ্গু করে রাজনীতি করার কোনও মানে নেই।
লেখক: হেড অব নিউজ, এটিএন নিউজ

spot_img
spot_img

এধরণের সংবাদ আরো পড়ুন

নির্বাচনের চাইতে বড় এখন রাজনৈতিক ব্যবস্থাপনা

সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা রাজনীতিতে ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি হয়, নির্বাচন এলে আরও বেশি করে হয়। মানুষ দল...

বাড়াবাড়ি নয় মধ্যপন্থা অবলম্বনই শ্রেষ্ঠ

মাহমুদ আহমদ ইসলাম মানবতার ধর্ম, ইসলাম কল্যাণ ও শান্তির ধর্ম। ইসলাম এমন একটি শান্তিপ্রিয় ধর্ম...

একটি ফাইনাল দর্শন ও একটি উপলব্ধি

ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল মাত্রই শেষ হলো এক দিনের ক্রিকেট বিশ্বকাপের সর্বশেষ আয়োজনটি। সারা...