তারেকের এপিএসের মামলা ফি বেশি পেয়ে আসামির পক্ষে শুনানি করেছি: অ্যাডভোকেট কামরুল

0
19

বার্তাকক্ষ ,,অনেক টাকা ফি পাওয়ায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সাবেক ব্যক্তিগত সহকারী (এপিএস) নুরউদ্দিন আহমেদ অপুর পক্ষে মামলার শুনানিতে অংশ নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম। তবে তিনি আগে বিষয়টি (আসামি তারেক রহমানের সাবেক এপিএস) জানলে এ মামলায় যুক্ত হতেন না বলে জানিয়েছেন।
দুর্নীতি মামলার আসামি নুরউদ্দিন আহমেদ অপুর পক্ষে শুনানি করা নিয়ে মঙ্গলবার (১৪ মার্চ) সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশন ভবনে নিজ চেম্বারে সাংবাদিকদের এ কথা জানান তিনি।অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম বলেন, ‘এক জুনিয়র এ মামলায় আমাকে সিনিয়র নিয়োগ করেছিলেন। আমি সিনিয়র হিসেবে ব্রিফ করেছি। হিউজ (অনেক) ফি পেয়েছি এ কারণে আসামির পক্ষে কয়েকদিন শুনানি করেছি। গতকালও (সোমবার, ১৩ মার্চ) অনেক টাকা ফি পেয়েছি।’
মামলার আসামি তারেক রহমানের সাবেক এপিএস এটা তিনি জানতেন না দাবি করে আওয়ামী লীগের এ প্রেসিডিয়াম সদস্য বলেন, ‘মামলার রেকর্ডে (নথিপত্র) কোথাও লেখা নেই যে, আসামি (নুরউদ্দিন আহমেদ অপু) তারেক রহমানের এপিএস ছিলেন। সিআইডি রিপোর্টেও বিষয়টি উল্লেখ নেই। এমনকি রাষ্ট্রপক্ষও শুনানিতে কখনও বলেননি যে, নুরউদ্দিন আহমেদ অপু তারেক রহমানের এপিএস ছিলেন।’
বিষয়টি জানার পর এ মামলা থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম বলেন, ‘সবাই নাকি এখন বলছেন, আমি মামলা থেকে সরে দাঁড়িয়েছি। সরে দাঁড়ানোর প্রশ্ন এখানে আসবে কেন? গতকাল সোমবার (১৩ মার্চ) পর্যন্ত আমি মামলায় শুনানি করেছি। আজকে আদেশের জন্য ছিল। আদেশের সময় আদালতে সিনিয়র থাকতে হবে- এমন কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। সাধারণত মামলায় জুনিয়র যারা থাকেন, তারা আদালতের আদেশ রিসিভ (গ্রহণ) করেন।’আবার যদি এ মামলায় আসামিপক্ষ অনেক টাকা ফি দেন, তাহলে তিনি আসামি নুরউদ্দিন আহমেদ অপুর পক্ষে আদালতে শুনানি করবেন কি না, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগ নেতা কামরুল ইসলাম বলেন, ‘বিষয়টি তখন ভেবে দেখবো।’
দুদকের আইনজীবীর বিস্ময়
অর্থপাচার প্রতিরোধ ও সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সাবেক ব্যক্তিগত সহকারী (এপিএস) আসামি নুরউদ্দিন আহমেদ অপুর জামিনের পক্ষে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম শুনানি করেছেন। বিষয়টি জানার পর এ নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান।
অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম সর্বশেষ ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে ঢাকা-২ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এর আগে তিনি আওয়ামী লীগ সরকারের খাদ্যমন্ত্রী ও আইন প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন।
২০২২ সালের ডিসেম্বরে আওয়ামী লীগের ২২তম সম্মেলনে তিনি দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য পদ পান। বিভিন্ন সভা-সমাবেশে অ্যাডভোকেট কামরুল বিএনপি, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানসহ দলটির নেতাদের সমালোচনা করেন
অন্যদিকে মামলার বিবরণে জানা গেছে, ২০১৮ সালের ১৪ ডিসেম্বরের ঘটনায় মতিঝিল থানায় মামলা করে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। মামলায় ২০১২ সালের মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের ৪(২) ও ২০১৩ সালের সন্ত্রাসবিরোধী আইনের ৭ ও ৩০ ধারায় অভিযোগ আনা হয়।
২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তা প্রশ্নবিদ্ধ ও দেশকে অস্থিতিশীল করতে মতিঝিল সিটি সেন্টারে ইউনাইটেড এন্টারপ্রাইজ ও ইউনাইটেড করপোরেশনের অফিসে বিপুল পরিমাণ অর্থ মজুতের অভিযোগ পায় র‍্যাব-৩।
সংবাদ পেয়ে ২০১৮ সালের ১৪ ডিসেম্বর র‍্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলমের নেতৃত্বে অভিযান চালানো হয়। অভিযানে ইউনাইটেড এন্টারপ্রাইজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মাহমুদুল হাসানের ভাগনে এ এম হায়দার আলীকে আটক করে র‍্যাব।এসময় তার কাছ থেকে তিন কোটি ১০ লাখ ৭৩ হাজার টাকা জব্দ করা হয়। একই কাজে ব্যবহারের জন্য আরও পাঁচ কোটি টাকা মানিটারি এক্সপ্রেস অফিসে রেখে আসার কথা স্বীকার করেন হায়দার আলী।
ওই ঘটনায় ছয়জনসহ অজ্ঞাতনামা কয়েকজনকে আসামি করে মামলা দায়ের হয়। এ মামলায় আসামি নুরউদ্দিন আহমেদ অপুকেও আসামি করা হয়। তিনি তারেক রহমানের সাবেক ব্যক্তিগত সহকারী (এপিএস)। তিনি শরীয়তপুর-৩ আসনে বিএনপির দলীয় সংসদ সদস্য প্রার্থীও ছিলেন।
২০১৯ সালের ৪ জানুয়ারি রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতাল থেকে গ্রেফতার হন নুরউদ্দিন আহমেদ অপু। দুই মামলায় নিম্ন আদালতে জামিন চেয়ে ব্যর্থ হলে হাইকোর্টে জামিন আবেদন করেন তিনি। পরে গত বছরের ২ ডিসেম্বর সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় অপুকে জামিন দেন হাইকোর্ট। তবে গত ১৯ ফেব্রুয়ারি অর্থপাচার প্রতিরোধ আইনের মামলায় জামিন পান তিনি। তার জামিন আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম।
পরে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনে গত বছর ৫ ডিসেম্বর ও গত ২৬ ফেব্রুয়ারি তার জামিন স্থগিত করে চেম্বার আদালত রাষ্ট্রপক্ষের আবেদন দুটি আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে পাঠিয়ে দেন। এর মধ্যে রাষ্ট্রপক্ষ অপুর জামিনের বিরুদ্ধে আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন করে। আবেদন দুটি সোমবার (১৩ মার্চ) বিচারপতি মো. নূরুজ্জামানের নেতৃত্বাধীন তিন বিচারপতির বেঞ্চে শুনানি হয়। আজ এ বিষয়ে রায় দেন আপিল বিভাগ।