বার্তাকক্ষ ,,দক্ষিণ কোরিয়ার চিপ মজুদ ২৬ বছরের সর্বোচ্চে পৌঁছেছে। দেশটির সরকারি তথ্য বলছে, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তায় দেশটির প্রধান রফতানি পণ্য চিপের চাহিদা নিম্নমুখী হয়েছে। ফলে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। খবর কোরিয়া হেরাল্ড।
কোরিয়ার পরিসংখ্যান কর্তৃপক্ষের তথ্যানুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারিতে স্থানীয় নির্মাতাদের চিপ উৎপাদন বিক্রির অনুপাতের তুলনায় ২৬৫ দশমিক ৭ শতাংশ বেশি ছিল। ১৯৯৭ সালের মার্চের পর এ হার সর্বোচ্চ। ওই সময়ে বিক্রির তুলনায় চিপ উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ২৮৮ দশমিক ৭ শতাংশ। এছাড়া ফেব্রুয়ারিতে চিপ রফতানি গত বছরের তুলনায় ৪২ দশমিক ৫ শতাংশ কমেছে। এ সময়ে ৫৬৯ কোটি ডলারের চিপ রফতানি হয়েছে।
বিশ্বের সবচেয়ে বড় দুটি মেমোরি চিপ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান স্যামসাং ইলেকট্রনিকস ও এসকে হাইনিক্স রয়েছে দক্ষিণ কোরিয়ায়। বর্তমান পরিস্থিতিতে উভয় প্রতিষ্ঠানেরই চিপ মজুদ উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। শিল্প সূত্রের তথ্যমতে, ২০২২ সালের চতুর্থ প্রান্তিকে স্যামসাংয়ের মজুদ করা সম্পদের পরিমাণ সর্বকালের সর্বোচ্চ ৫২ লাখ ২০ হাজার কোটি ওন বা ৪০৩ কোটি ডলারে পৌঁছেছে, ২০২১ সালের একই সময়ের তুলনায় যা ২৬ শতাংশ বেশি। এছাড়া এসকের মজুদ সম্পদও ২০২১ সালের তুলনায় ৭৫ শতাংশ বেড়েছে।
সূত্রগুলো বলছে, প্রতিষ্ঠানগুলো পণ্য বিক্রির ক্ষেত্রে যে বাধার সম্মুখীন হচ্ছে সেটি যে মজুদের উচ্চতর হারের কারণেই তা স্পষ্ট। সুতরাং চিপ নির্মাতারা বিক্রি বজায় রাখতে হয় উৎপাদন কমাবে অথবা দাম আরো কমিয়ে আনবে। ফলে ভবিষ্যতে চিপের দাম কমে যাবে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
দেশটির সংবাদমাধ্যম বলছে, এ মুহূর্তে দেশটির চিপ উৎপাদন খাত বাড়তি চাপের মধ্যে রয়েছে। স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক উভয় বাজারই সংকটের মুখে পড়েছে। মজুদ ও বিক্রির অনুপাত বাড়ার পাশাপাশি বিশ্বব্যাপী চিপের দাম কমার আশঙ্কা রয়েছে। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র থেকে সাম্প্রতিক ঘোষিত বিনিয়োগের চাপ দেশটির চিপ খাতকে আরো বাজে পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দিতে পারে।
স্যামসাং ও এসকে হাইনিক্স উভয় প্রতিষ্ঠানই যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক ‘চিপস ফর আমেরিকা ফান্ডিং অপরচুনিটি’ ঘোষণার প্রতি সতর্ক অবস্থান নিচ্ছে। কেননা ঘোষণাটি প্রতিষ্ঠানগুলোর চীনে অবস্থিত মূল কার্যক্রমসহ অন্যান্য বৈশ্বিক ব্যবসাকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
ওয়াশিংটনের ‘চিপস ফর আমেরিকা আইন’ স্যামসাং ও এসকে হাইনিক্সকে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে যেকোনো একটি দেশকে বেছে নিতে বাধ্য করছে। তবে যুক্তরাষ্ট্র-চীন প্রতিদ্বন্দ্বিতার মধ্যে কোনো একটি পক্ষকে বেছে নেয়া যেকোনো প্রতিষ্ঠানের জন্য কঠিন। কেননা যদি কোনো প্রতিষ্ঠান মার্কিন এ কর্মসূচির জন্য আবেদন না করে, তবে যুক্তরাষ্ট্র ধরে নেবে প্রতিষ্ঠানটি যুক্তরাষ্ট্রকেন্দ্রিক চিপ জোটের সঙ্গে নেই। বরং রয়েছে চীনের পক্ষে।
দেশীয় চিপ ইন্ডাস্ট্রিকে পুনরুজ্জীবিত ও সাপ্লাই চেইনগুলো সুরক্ষিত করতে সম্প্রতি শর্তসাপেক্ষে ৫৩০ কোটি ডলার ভর্তুকির ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে এর সঙ্গে রয়েছে বিশেষ কিছু শর্ত। চীনসহ বেশকিছু দেশের সঙ্গে এক দশক ধরে চিপ উৎপাদন সম্প্রসারণ করা যাবে না। এছাড়া চিপ খাতের লাভের অংশ ভাগ করে নিতে হবে মার্কিন সরকারের সঙ্গে।
বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভর্তুকি কর্মসূচিকে বিশ্বের সবচেয়ে বড় দুটি মেমোরি চিপ নির্মাতাদের জন্য ‘বিষাক্ত চামচ’ হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে। যেহেতু প্রতিষ্ঠানগুলো মেমোরি চিপ তৈরিতে চীনের ওপর নির্ভরশীল। স্যামসাংয়ের মোট ন্যান্ড ফ্ল্যাশ মেমোরির প্রায় ৪০ শতাংশ চীনের জিয়ান শহরের কারখানায় উৎপাদন হয়। এছাড়া এসকের মোট ডির্যাম চিপের অর্ধেক উৎপাদন হয় চীনের উক্সিতে।
স্যামসাং এরই মধ্যে টেক্সাসের টেলর শহরে ১৭০ কোটি ডলারের একটি চিপ কারখানা নির্মাণ করছে। এছাড়া এসকে চলতি বছরের প্রথমার্ধে সেখানে একটি চিপ প্যাকেজিং কারখানা করার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে। মেরিটজ সিকিউরিটিজ বিশ্লেষক কিম সান-উ বলেন, ‘স্যামসাং ইলেকট্রনিকস ও এসকে হাইনিক্সকে চীনা কারখানাগুলো চালু রাখতে হবে কিনা এবং প্রস্থান কৌশল কী হতে পারে সেটি বিবেচনা করতে হবে।’
তিনি আরো বলেন, ‘চিপ নির্মাতারা যুক্তরাষ্ট্রে বিনিয়োগ থেকে লাভ করতে পারলেও আয়ের বেশির ভাগ অংশ মার্কিন সরকারের সঙ্গে ভাগ করে নেয়ার বিষয়ে প্রশ্নের মুখোমুখি হবে। এছাড়া প্রতিষ্ঠানগুলোকে গোপনীয় তথ্য প্রকাশ এবং লাভ-লোকসানের সম্ভাবনা নিয়ে হিসাবনিকাশ করতে হবে।’
বিশ্লেষকরা বলছেন, স্যামসাং ইলেকট্রনিকস ডির্যাম চিপ উৎপাদনের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের ঘোষিত ভর্তুকি ব্যবহার করতে পারে। তবে টেক জায়ান্টটি সম্ভবত তাদের সবচেয়ে লাভজনক পণ্যটি যুক্তরাষ্ট্রে উৎপাদন থেকে বিরত থাকবে।
চলতি মাসে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তাবিষয়ক বিস্তারিত নির্দেশিকা প্রকাশিত হবে। এজন্য বিষয়টি নিয়ে দক্ষিণ কোরিয়া সরকার সহসাই কোরিয়ান চিপ নির্মাতাদের সঙ্গে বৈঠকের পরিকল্পনা করছে। বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়ার ব্যাপারে আলোচনা করবে কোরিয়া সরকার।