বার্তাকক্ষ
পূর্বাভাস ছিল। ঝড়ও আসি আসি করছিল। শেষ পর্যন্ত বৈশাখের পহেলা দিনে সেই ঝড় আসলো এবং সেটা সুনামির চেয়েও ভয়ংকর হয়ে।
পহেলা বৈশাখের তাপপ্রবাহে বিকেলে গরম খবর ছড়িয়ে পড়লো দেশের আনাচে কানাচে- ফিফা দুই বছরের জন্য নিষিদ্ধ করেছে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মো. আবু নাইম সোহাগকে।
কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনে অনিয়মের যে অভিযোগ ওঠে আসছিল নানা মহল থেকে তার সত্যতার পক্ষে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিলো ফিফা। দুঃখজনক এ ঘটনার মধ্যে দিয়ে দেশের ফুটবল পড়লো সংকট থেকে গভীর সংকটে।
নারী ফুটবল দলের মিয়ানমার সফর বাতিল হওয়ার পর থেকে এমনিতেই আলোচনায় ছিল বাফুফে। এ নিয়ে ক্ষোভ ছিল বাফুফের মধ্যেই। কিন্তু সভাপতি কাজী মো. সালাউদ্দিন এক বক্তব্য দিয়ে প্রতিপক্ষ বানিয়ে ফেলেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনকে। পরে এর মধ্যে জড়িয়ে পড়েন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মো. জাহিদ আহসান রাসেল এমপিও।
কাজী মো. সালাউদ্দিনের বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রীর প্রসঙ্গ ছিল বলে সরকারের উচ্চমহলও সেটা ভালোভাবে নেয়নি। যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় কমিটিও একহাত নিয়েছেন কাজী মো. সালাউদ্দিনকে। কেন জাতীয় নারী ফুটবল দলকে মিয়ানমার পাঠানো হয়নি, কেন সরকারকেও দোষারোপ করা হলো- এসব খতিয়ে দেখতে সংসদীয় কমিটি তদন্ত করার নির্দেশও দিয়েছে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়কে।
বাফুফে সভাপতির এক বক্তব্যে যখন চারদিকে আগুন জ্বলছে তখন সেই আগুনে ঘি ঢেলেছে সাধারণ সম্পাদক মো. আবু নাইম সোহাগের নিষিদ্ধ হওয়ার ঘটনা। অল্প কয়েকদিনের ব্যবধানে দেশের ফুটবলের অভিভাবক সংস্থার ওপর দিয়ে ঝড় শুরু হলো। এ ঝড় সামলানো কঠিন হতে পারে কাজী মো. সালাউদ্দিনের জন্য। কারণ, বাফুফেতে তিনি মূলত বন্ধুবিহীন। বাফুফের নির্বাহী কমিটির অনেকেরই অভিযোগ, কাজী মো. সালাউদ্দিন সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে আলোচনা করেই অনেক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতেন।
বাফুফে সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে ফিফার এই কঠিন সিদ্ধান্ত হঠাৎ করেই আসেনি। এর আভাস মিলছিল অনেকদিন ধরেই। ফিফা বেশ কয়েক বছর আগে থেকে অভিযোগ আমলে নিয়ে তদন্ত শুরু করে। কেনাকাটা থেকে শুরু করে অনেক বিষয়ে অনিয়মের প্রমাণ পাওয়ার পর ফিফা অবশেষে এমন সিদ্ধান্ত নেয়।
এর আগে অভিযোগের শুনানির জন্য বাফুফের সাধারণ সম্পাদক ও আরও তিনজন বেতনভুক্ত কর্মকর্তাকে জুরিখে সদর দপ্তরে ডেকেছিল ফিফা। সবকিছু বিচার বিশ্লেষণ করে ফিফার স্বাধীন এথিকস কমিটির বিচারিক চেম্বার বাফুফে সাধারণ সম্পাদককে দুই বছরের জন্য নিষিদ্ধ করে রায় দেন।
তহবিল তছরুপ, ক্ষমতার অপব্যবহার, জালিয়াতি ও মিথ্যাচারসহ বাফুফে সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে একগাদা অভিযোগের তদন্ত করেছিল ফিফা। সবকিছুতেই অনিয়ম খুঁজে পেয়েছে বিশ্ব ফুটবলের অভিভাবক সংস্থাটি। তারই পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের ফুটবলের ওপর নেমে এলো এই অমানিশা।
২১ বছর আগে এমন পরিস্থিতিতে পড়েছিল বাংলাদেশের ফুটবল। বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের সময়ে বাফুফে সভাপতি ছিলেন তৎকালীন এমপি এসএ সুলতান। সরকারি হস্তক্ষেপে নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদককে সরিয়ে দেওয়ার কারণে ফিফা কর্তৃক নিষিদ্ধ হয়েছিল বাংলাদেশ। দীর্ঘদিন পর আবার সংকটে বাংলাদেশের ফুটবল।
এমনিতেই মাঠের পারফরম্যান্সে তালগোল পাকিয়ে ফেলেছে বাংলাদেশ। ফিফা র্যাংকিংয়ে নামতে নামতে এখন ১৯২। এখন দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ে নিষিদ্ধ হয়েছেন ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক। এ সংকট কীভাবে কাটিয়ে উঠবে বাফুফে, সেটাই দেখার।
