ফুটবল কন্যাদের আরেকটি শিরোপা জয়ের উৎসব দেখল দেশের মানুষ। সিনিয়রদের মতো সাফ অনূর্ধ্ব-২০ নারী চ্যাম্পিয়নশিপেও এখন সেরা বাংলাদেশ। বৃহস্পতিবার রাতে কমলাপুরের বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামে টুর্নামেন্টের ফাইনালে নেপালকে ৩-০ গোলে হারিয়ে অনূর্ধ্ব-২০ নারী সাফের শিরোপা জিতে নিল বাংলাদেশ। অভিনন্দন ফুটবল কন্যাদের। একটি করে গোল করেছেন শাহেদা আক্তার, শামসুন্নাহার ও উন্নতি খাতুন। ৫ গোল করে টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ গোলদাতা হয়েছেন বাংলাদেশের অধিনায়ক শামসুন্নাহার। গত ছয় মাসে নারী সাফের তিনটি টুর্নামেন্টের ফাইনালে নেপালকে পেয়ে দুটিতে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে লাল-সবুজরা। এর মধ্যে গত সেপ্টেম্বরে কাঠমান্ডুতে সিনিয়র সাফে স্বাগতিকদের হারিয়ে ইতিহাস গড়ে শিরোপা জিতেছিলেন সাবিনারা। ধারাবাহিকভাবে দামাল মেয়েদের নিপুণ ফুটবলশৈলীতে আমরাও উল্লসিত। শুধু অনূর্ধ্ব-২০-এ নয়, অনূর্ধ্ব-১৫, অনূর্ধ্ব-১৬, অনূর্ধ্ব-১৮ ইত্যাদি বয়সভিত্তিক টুর্নামেন্টেও বাংলাদেশের মেয়ে ফুটবলাররা ধারাবাহিক সাফল্য দেখিয়ে আসছেন। বস্তুত আশার জায়গা এটাই। অর্থনৈতিকভাবে সংকটগ্রস্ত সামাজিক-সাংস্কৃতিকভাবে অধঃপতিত এই দেশে মেয়েরাই বাংলাদেশের স্বপ্ন হয়ে মাঠে নেমেছে। দুচোখ ভরা স্বপ্ন নিয়ে অন্য দেশের মেয়েদের সঙ্গে লড়াই করেছে। জয় ছিনিয়ে আনছে। আমাদের মেয়েরা প্রমাণ করছে, অন্য দেশের মেয়েদের থেকে আমাদের দেশ পিছিয়ে নেই। বাংলাদেশে নারী ফুটবল এখনো অস্পৃশ্য। অথচ নারী ফুটবলের সাফল্য আমাদের দেশে গর্ব করার মতো। নারীর ক্ষমতায়নের স্বার্থেও নারী ফুটবলকে বিকশিত হওয়ার সুযোগ করে দেয়া দরকার। এ জন্য দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। খেলার মান পড়ে যাওয়া, সঠিক পরিকল্পনা ও উদ্যোগের অভাব, ক্রিকেটের সাফল্য ইত্যাদি কারণে দেশে ফুটবলের জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়েছে। বর্তমানে ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশের অবস্থান সত্যিই হতাশাজনক। এ অবস্থায় সাফে মেয়েদের সাফল্য নিয়ে আমাদের নতুন করে আশান্বিত করে। ফুটবলে মেয়েদের এই সাফল্য ধরে রাখতে হবে। বলা যায়, দেশের মেয়েরা তাদের প্রতিভা ও সম্ভাবনার বিষয়টি প্রমাণ করেছে। এখন সেই প্রতিভার যথাযথ পরিচর্যা দরকার। তার দায় সরকারের। সেই দিকে খেয়াল রেখে প্রান্তিক পর্যায়ের নারী খেলোয়াড়রাও যাতে পর্যাপ্ত পুষ্টি পান, তুলনামূলক স্বাচ্ছন্দ্যে চলতে পারেন, তা নিশ্চিত করতে হবে। আশার কথা, সরকারের দিক থেকে নারী খেলোয়াড়দের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে ইতোমধ্যে অনেক উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ক্রীড়ামোদি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও বেশ কয়েকবার নারী ফুটবল তারকাদের গণভবনে ডেকে সংবর্ধনা, আর্থিক প্রণোদনাসহ বিভিন্ন পুরস্কার দিয়েছেন। এতে করে নতুন প্রজন্মের মেয়েরা ফুটবল খেলতে আরো উৎসাহিত হচ্ছেন। তবে এই জয়ের আনন্দে আত্মহারা হলে চলবে না, আত্মবিশ্বাসী হতে হবে। এই আত্মবিশ্বাসকে কাজে লাগানোর দৃঢ় সংকল্প নিতে হবে। জয়ের ধারা অব্যাহত থাকুক এই প্রত্যাশা ও শুভকামনা আমাদের।