Thursday, June 1, 2023
Homeআন্তর্জাতিকপাল্টা আক্রমণের আগে কেমন বাহিনী তৈরি করছে ইউক্রেন

পাল্টা আক্রমণের আগে কেমন বাহিনী তৈরি করছে ইউক্রেন

Published on

সাম্প্রতিক সংবাদ

ল্যাপটপ-কম্পিউটারের দাম আরও বাড়ার শঙ্কা

বার্তাকক্ষ এবারের বাজেট প্রস্তাবে কম্পিউটার ও ল্যাপটপ আমদানির ওপর থেকে বিদ্যমান ১৫ শতাংশ ভ্যাট প্রত্যাহারের...

মোবাইল ফোনের দাম আরও বাড়বে

বার্তাকক্ষ দেশে তৈরি মোবাইল ফোনের ওপর ভ্যাট (মূল্য সংযোজন কর) বাড়ানোর প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী। এই...

ভ্রমণ কর বেড়েছে

বার্তাকক্ষ আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে বিদেশ ভ্রমণের ওপর কর বাড়িয়েছে সরকার। বৃহস্পতিবার (১ জুন)...

দাম বাড়তে পারে যেসব পণ্যের

বার্তাকক্ষ ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বেশ কিছু পণ্য ও সেবার...

বার্তাকক্ষ
রণক্ষেত্র থেকে বহুদূরে এক উপত্যকায়, বেশ কয়েক জন ব্যক্তি পানিতে অর্ধেক পূর্ণ বোতল একটি ছোট ড্রোন থেকে ফেলার অনুশীলন করছিলেন। এমনভাবে তারা এই অনুশীলনে মগ্ন ছিলেন যেন বোতলটি একটি গ্রেনেড। সেখানে থাকা অপর ব্যক্তিরা ১০০ ইয়ার্ড দূরে লক্ষ্যবস্তুতে রাইফেলের গুলি ছুড়ছিলেন। তৃতীয় আরেকটি দল পাহাড় ঘেরা পথ ধরে যাচ্ছিলেন, যে পথে সাদা ও হলুদ ফুলের সমাহার।
এখানে যারা অনুশীলনে রয়েছেন তাদের বেশিরভাগের এক বছর আগেও কোনও সামরিক অভিজ্ঞতা ছিল না। গুরুত্বপূর্ণ গ্রীষ্মকালীন পাল্টা আক্রমণের আগে বেসামরিকদের অত্যাধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত অভিজাত সেনায় পরিণত করার জন্য সময়ের সঙ্গে পাল্টা দিয়ে লড়ছে ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনী।
চলমান যুদ্ধে অংশগ্রহণ করা থেকে সেনাবাহিনীর ২০টি ব্রিগেডকে বিরত রেখেছে কিয়েভে। তাদেরকে রুশ প্রতিরক্ষা রেখা গুঁড়িয়ে দেওয়ার জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে। কিয়েভে যে আশাবাদ ছড়াচ্ছে তা হলো, পাল্টা আক্রমণ শুরু হলে, বাখমুতের আক্রমণের জন্য রুশ সেনারা বিধ্বস্ত থাকবে, কিন্তু কয়েক হাজার ইউক্রেনীয় সেনা একেবারে সতেজ এবং পশ্চিমা যুদ্ধের ট্যাংকসহ অত্যাধুনিক অস্ত্র ও সরঞ্জামে সজ্জিত থাকবে।
ইউক্রেনের সামরিক গোয়েন্দা সংস্থার একটি স্পেশাল ফোর্স আর্টান ব্যাটালিয়ন। পাল্টা আক্রমণের জন্য এই বাহিনী এখন লড়াই করছে না। বাহিনীটির কমান্ডার বলেন, আমাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যেকোনও মুহূর্তের জন্য প্রস্তুত থাকতে।
এই ব্যাটালিয়নের সব সদস্যের জন্য পাল্টা আক্রমণ হবে প্রথম সামরিক অভিযান
যুক্তরাষ্ট্রের নেভি সিল টিমের সেনারা যুদ্ধক্ষেত্রে মোতায়েনের আগে দুই বছরের বেশি সময় পায়। ইউক্রেনের স্পেশাল ফোর্সের কাছে এমন সময় নেই। টাইটান কল সাইনের কমান্ডারের জন্য চ্যালেঞ্জ হলো তার সেনাদের প্রস্তুত করা। এমনকি তারা কখনও যুদ্ধে লড়াই না করলেও।
গত বছরে আর্টান ধীরে ধীরে ৭০ জন থেকে ৩৫০ জনের বাহিনীতে পৌঁছেছে। এদের মধ্যে মাত্র ২০ শতাংশের রুশ আক্রমণের আগে থেকেই সামরিক অভিজ্ঞতা রয়েছে। এদের একজন অভিনেতা, আরেকজন আইনজীবী।
যুদ্ধের আগে নিরাপত্তারক্ষী হিসেবে কাজ করা এক সেনা স্থানীয় আঞ্চলিক প্রতিরক্ষাবাহিনীর হয়ে লড়াই করেছেন। তিন মাসে আর্টানে যোগ দেওয়ার আগে আরেকটি ইউক্রেনীয় ব্রিগেডের অংশ ছিলেন। তিনি বলছেন, কাঁদাময় পরিখায় গোলাবর্ষণ করে যুদ্ধের সময় নষ্ট করতে চাননি তিনি। স্পেশাল ফোর্স তাকে ভিন্নতর কিছু করার সবচেয়ে ভালো সুযোগ দিয়েছে: ভালো প্রশিক্ষণ, ভালো প্রস্তুতি এবং ভালো সরঞ্জাম।
টাইটান বলছেন, গত বছর পর্যন্ত এই স্পেশাল ফোর্সের মতো ইউনিটে এমন কারও যোগদান করা অসম্ভব ছিল। কিন্তু এখন পুরো নিয়োগ প্রক্রিয়া পাল্টে ফেলা হয়েছে সেনা সংখ্যা বাড়ানোর জন্য। তার মতে, অবশ্য এখনো্ একটি পরীক্ষায় পাস হতে হয়। লাই-ডিটেক্টর ও শারীরিক যোগ্যতার পরীক্ষায় পাস হয়ে যোগদান করা যাচ্ছে
গত বছর বেশ কিছু অভিযানে অংশ নেয় এই ব্যাটালিয়ন। এর মধ্যে খারকিভে অবাক করে দেওয়া আক্রমণ রয়েছে। ওই সময় তারা ৩ হাজার বর্গমাইল ভূখণ্ড পুনরুদ্ধার করেছিল। কিন্তু চলতি বছর আর্টান ব্যাটালিয়ন পুরো সময় প্রশিক্ষণেই কাটিয়েছে।
সেনারা ইউক্রেনের পক্ষ থেকে সরবরাহ করা সবচেয়ে ভালো সরঞ্জামগুলো নিয়ে নিজেদের সজ্জিত করছে। তাদের কাছে রয়েছে মার্কিন নির্মিত নতুন এম-ফোর রাইফেল, সঙ্গে আছে থার্মাল সাইটস। যা রাতের আঁধারেও গুলিবর্ষণে তাদের সহযোগিতা করে। আছে গ্লক-১৭ পিস্তল।
প্রশিক্ষণে সাধারণভাবে দিনে ৪০০টি গুলি বর্ষণ করে তারা। প্রশিক্ষক প্রত্যেক সেনাকে আলাদা আলাদা নির্দেশনা দেন। কিছু ক্ষেত্রে একে-৪৭ দিয়ে গুলি চালনা শেখার পর আবারও প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।
চলতি বছর দুইবার আর্টান ব্যাটলিয়নের সেনাদের বাখমুতের রণক্ষেত্রে স্থিতিশীল করতে পাঠানো হয়েছে। ‘পেইন’ কল সাইন নামের আর্টানের এক প্লাটুন কমান্ডারকে জানুয়ারিতে বাখমুতে পাঠানো হয়। সেখানে তার টিমের দায়িত্ব ছিল একটি আবাসিক এলাকায় অবস্থান ধরে রাখা। রাশিয়া আক্রমণের আগে সেনাবাহিনীতে তিনি চার বছর ছিলেন। যুদ্ধের পর অনভিজ্ঞ সেনাদের সঙ্গে নিয়ে লড়াই করতে হচ্ছে তাকে।
প্রশিক্ষণের একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, পেইন একটি বাড়ির ভেতরে আরেকজন সেনার পেছনে অবস্থান করছেন। যে সেনা জানালা দিয়ে রাইফেল তাক করে রেখেছেন। তারা এক শত্রু সেনাকে নজরে রাখছিলেন। এ সময় পেইন গুলির নির্দেশ দেন।ওই সময় রাইফেল ধরা সেনা বলেন, ওই সেনা যদি আমাদের হয় তাহলে কী হবে?
তখন আবারও গুলির নির্দেশ দেন পেইন। কিন্তু সেনা দ্বিধার প্রকাশ করতে থাকলে পেইন নিজের রাইফেল দিয়ে গুলি করতে শুরু করেন। তা দেখে ওই সেনাও গুলিবর্ষণ করেন।
এক সাক্ষাৎকারে পেইন বলেছেন, শত্রু লক্ষ্যবস্তুতে গুলি ছুড়তে পুরোপুরি অভ্যস্ত হতে তার দুই বছর সময় লেগেছে। তার মতে, আমার প্লাটুনের সেনাদের শেখানোর চেষ্টা করছি শত্রুদের হত্যা করাকে কাজ হিসেবে বিবেচনা করতে। এটিই আমাদের দায়িত্ব।মার্চে আর্টান ব্যাটালিয়নের আরও ৬২ জনকে বাখমুতে পাঠানো হয়। তাদের দায়িত্ব দেওয়া হয় শহরের একমাত্র রসদ সরবরাহের রুট থেকে রুশদের পিছু হটিয়ে দেওয়ার জন্য।
ব্যাটালিয়নের আইনজীবী থেকে সেনা হওয়া ব্যক্তি বলেন, একেবারে নরক ছিল তা। দিনের পর দিন তাকে কর্দমাক্ত পরিখায় বসে থাকতে হয়েছে। রুশরা মাত্র ৫০ ফুট দূরে ছিল এবং আড়ালের জন্য ছিল শুধু গাছের সারি। সূর্যোদয়ের সঙ্গে গোলাগুলি শুরু হত, এতই তীব্র ছিল যে দিনের মাঝামাঝিতে তার রাইফেল জ্যাম হয়ে যেত টানা গুলিবর্ষণের কারণে। অনেক সময় ইউক্রেনীয় সেনারা নিজেদের পরিখা কোণায় ঘুরে দেখত সেখানে রুশরা রয়েছে।
শেষ পর্যন্ত ইউক্রেনীয় রুশদের রুটটি থেকে পিছু হটতে বাধ্য করে। ২৪ বছর বয়সী এই সেনা বলেন, উচ্চতর প্রশিক্ষিত, পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়া স্পেশাল ফোর্সের সেনাদের রণক্ষেত্রে আগমন সেখানকার সেনাদের মনোবল বাড়িয়ে দিয়েছে। তার কথায়, আমাদের শত্রুদের লোকসংখ্যা, কামানসহ সবকিছুর সুবিধা রয়েছে। আমাদেরকে নিজেদের সৃজনশীলতা, আমাদের দক্ষতার সর্বোচ্চ ব্যবহার করতে হয়েছে।মার্চ মাসে আর্টানের এক সেনা নিহত ও অপর ২৭ জন আহত হয়। আহতদের মধ্যে ১১জন পুনরায় প্রশিক্ষণে ফিরেছে বলে জানিয়েছেন কমান্ডার টাইটান। তিনিও ছিলেন বাখমুতের অভিযানে।
৪২ বছর বয়সী এই কমান্ডার ২০১৭ সালে সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। তার জন্যও বাখমুতের লড়াই ছিল তীব্রতম। প্রতিদিন সেখানে ১ হাজার রাউন্ড গুলিবর্ষণ করেছেন একেকজন সেনা।
তার মতে, বাখমুতে মোতায়েনের ফলে তার কয়েকজন সেনার জন্য উপকার বয়ে এনেছে। ভালো প্রশিক্ষিত একজন সেনা প্রথমবার অভিযানের পর ভিন্ন চরিত্রের হয়ে যায়।চলতি বছর শত্রুদের ওপর বিভিন্ন চোরগুপ্তা হামলায় অংশ নিয়েছে আর্টান ব্যাটালিয়ন। টাইটান বলেন, বাহিনীটি বড় হচ্ছে। যদিও অনেকেই এখনও কোনও লড়াইয়ে অংশ নেয়নি। সম্প্রতি বিভিন্ন ধরনের অবস্থান আয়ত্ত করার অনুশীলন করছেন তারা। যেমন- ফসলের ক্ষেত, ভবন, পরিখা এবং বিভিন্ন ইউনিটের মধ্যে সমন্বয়।
টাইটান আশা করছেন, পরিস্থিতির কারণে নতুন যোগ দেওয়া সেনারা দ্রুত শিখবে। তার কথায়, যখন কিছু করার জন্য কেউ অনুপ্রাণিত থাকে, তখন তা দ্রুত করা সম্ভব হয়। যুদ্ধের মধ্যখানে, তারা সবাই বুঝতে পারছে তারা শিগগিরই রণক্ষেত্রে পৌঁছাতে পারে।
সূত্র: ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল

spot_img
spot_img

এধরণের সংবাদ আরো পড়ুন

রাশিয়ায় হামলা জোরদার করেছে ইউক্রেন

বার্তাকক্ষ রাশিয়ার একটি শহরে ইউক্রেন গোলাবর্ষণ করেছে বলে জানিয়েছে মস্কো। এ নিয়ে চলতি সপ্তাহে তৃতীয়বারের...

কিয়েভে ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় শিশুসহ নিহত ৩

বার্তাকক্ষ ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে আবারও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। স্থানীয় সময় বুধবার রাতের আঁধারে চালানো...

প্রথমবারের মতো বাণিজ্য চুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্র-তাইওয়ান

বার্তাকক্ষ তাইওয়ানের সঙ্গে প্রথমবারের মতো বাণিজ্য চুক্তি সই করতে চলেছে যুক্তরাষ্ট্র। বৃহস্পতিবার (১ জুন) এই...