মাহমুদ আহমদ
আজ পবিত্র মাহে রমজানের নাজাতের দশকের সপ্তম দিনের রোজা রাখার আমরা সৌভাগ্য পেয়েছি, আলহামদুলিল্লাহ। আল্লাহপাকের মুমিন বান্দারা রাতভর বিশেষ ইবাদতে রত থেকে অতিবাহিত করেছেন। একমাস রোজা রাখার পর আমরা ঈদুল ফিতর উদযাপন করবো। ঈদুল ফিতর উদযাপনের পূর্বে আমাদের সবাইকে অবশ্যই ফিতরানা আদায় করতে হবে। কেননা ঈদুল ফিতরের ফিতরানা প্রত্যেক ব্যক্তির ওপর ওয়াজিব এমন কি ঈদের দিন সূর্য উদয়ের পূর্বে ভূমিষ্ঠ শিশুর জন্যও ফিতরানা দেয়া ওয়াজিব।
এ ফিতরানা ঈদের নামাজের আগেই আদায় করা উচিত। কেননা গরীব রোজাদার যেন ফিতরানার অর্থ দিয়ে ঈদের খুশিতে অংশগ্রহণ করতে পারে। ফিতরানা দেয়া কারও ওপর কোনো প্রকার অনুগ্রহ নয়। এটা আমাদের জন্য ইবাদতের অংশ। এমনকি যে ব্যক্তিকে ফিতরানার সাহায্য দেয়া হয়, তার নিজের পক্ষ থেকেও ফিতরানা দেয়া কর্তব্য। সকলের অংশগ্রহণের ফলে সদকাতুল ফিতরের ফান্ডটি একটি সাধারণ ফান্ডে পরিণত হয়। যার ফলে এ থেকে যারা উপকৃত হয় তাদের মনে হীনমন্যতার ভাব সৃষ্টি হয় না। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাদাক্বাতুল ফিতরকে অপরিহার্য করেছেন, অনর্থক অশালীন কথা ও কাজে রোজার যে ক্ষতি হয়েছে তা পূরণের জন্য এবং নিঃস্ব লোকের আহার যোগানোর জন্য।’ (আবু দাউদ)
হজরত জারির রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, রামজানের রোজা সাদকাতুল ফিতর আদায় করার পূর্ব পর্যন্ত আসমান জমিনের মাঝে ঝুলন্ত থাকে।’ (তারগিব ওয়াত তারহিব)
মূল বিষয় হলো ফিতরানা আদায়ের মাধ্যমে আমরা আমাদের গরীব ভাইদের দুঃখ-কষ্ট কিছুটা হলেও লাঘব করতে পারি এবং তাদেরকেও ঈদের আনন্দে অন্তর্ভুক্ত করি। যাদেরকে আল্লাহতায়ালা ধন-সম্পদ দিয়েছেন তারা আল্লাহর রাস্তায় এবং গরীব অসহায়দের প্রতি যতই দান করুক না কেন এতে কিন্তু তার ধন-সম্পদে কমতি দেখা দিবে না বরং বৃদ্ধি পেতে থাকবে।
আমরা সবাই জানি, ইসলামে দান-খয়রাতের এবং গরীব অসহায়দের সাহায্যের বিষয়ে বিশেষ গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। আল্লাহর রাস্তায় দানের গুরুত্ব যে কত বেশি তা পবিত্র কুরআন পাঠেই বুঝা যায়। কারণ এ বিষয়টিকে আল্লাহতায়ালা পবিত্র কুরআনের বহু স্থানে উল্লেখ করেছেন। যেমন পবিত্র কুরআনে আল্লাহপাক ইরশাদ করেছেন, ‘যারা সচ্ছল ও অসচ্ছল অবস্থায় আল্লাহর পথে খরচ করে, যারা ক্রোধ দমন করে এবং মানুষকে মার্জনা করে। আর আল্লাহ সৎকর্মপরায়ণদের ভালোবাসেন’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৩৪)।
এই আয়াতে একটি বিষয় আল্লাহতায়ালা স্পষ্ট করেছেন যে, শুধু সুখে থাকলেই যে আল্লাহর রাস্তায় খরচ করবো তা কিন্তু নয়, সচ্ছল-অসচ্ছল সব অবস্থাতেই আল্লাহর রাস্তায় খরচ করতে হবে। সব অবস্থায় যদি আমরা খরচ করি তাহলে আল্লাহতাআলা আমাদেরকে ভালোবাসবেন।
আল্লাহপাক বারংবার আমাদেরকে আদেশ দিচ্ছেন যে, আমরা যেন তার পথে খরচ করি, কিন্তু দেখা যায় আমরা দুনিয়াবী আজে-বাজে কাজে ঠিকই অর্থ সম্পদ ব্যয় করছি অথচ আল্লাহর রাস্তায় দেয়ার ক্ষেত্রে যেন অনিহা প্রকাশ পায়। এর কারণ হলো শয়তান মানুষের মনে কুমন্ত্রণা যোগায় যে, তুমি যদি আল্লাহর রাস্তায় দান করো তাহলে তোমার ধন-সম্পদ ফুরিয়ে যাবে আর তুমি দরিদ্র হয়ে যাবে।
অথচ পবিত্র কুরআন বলে যারা আল্লাহর রাস্তায় খরচ করে তাদেরকে এর তুলনায় অধিক বৃদ্ধি করে আল্লাহ ফেরত দেন। যেভাবে বলা হয়েছে, ‘যারা নিজেদের ধনসম্পদ আল্লাহর পথে খরচ করে তাদের দৃষ্টান্ত সেই শস্যবীজের ন্যায়, যা সাতটি শীষ উৎপন্ন করে এবং প্রত্যেকটি শীষে একশ শস্যদানা থাকে। আর আল্লাহ যার জন্য চান এর চেয়েও বাড়িয়ে দেন। আর আল্লাহ প্রাচুর্যদানকারী ও সর্বজ্ঞ’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ২৬১)।
তাই একথা স্পষ্টভাবে বলা যায় আল্লাহর রাস্তায় খরচ করে কেউ গরীব হবে না বরং তাকে আল্লাহ অনেক গুণ বৃদ্ধি করে তা ফেরৎ দিবেন। এ বিষয়ে হাদিসে বর্ণিত হয়েছে হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেছেন, হজরত মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘দান করলে সম্পদ কমে না’ (মুসলিম)।
আমরা যদি আল্লাহর জান্নাত লাভ করতে চাই এবং তার শান্তির ছায়ায় আশ্রয় নিতে চাই তাহলে আমাদেরকে তার পথে খরচ করতে হবে। গরীব অসহাদেরকে সাহায্য সহযোগিতা করে তাদের কষ্ট দূর করতে হবে।
আল্লাহতায়ালা আমাদের সকলকে ফিতরানা এবং জাকাত সঠিকভাবে আদায় করে গরীব ভাইদের পাশে দাঁড়ানোর তৌফিক দান করুন, আমিন।
লেখক: ইসলামি গবেষক ও কলামিস্ট।
