কামরুজ্জামান মুকুল, বাগেরহাট
বৈশাখের খরতাপে পুড়ছে উপকূলীয় জেলা বাগেরহাট। এ জেলার উপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে তীব্র তাপপ্রবাহ। তাপমাত্রার রেকর্ড ভঙ্গ করে শুক্রবার সন্ধ্যায় ৪১.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার রেকর্ড হয়েছে বাগেরহাটে। চলতি গ্রীষ্ম মৌসুমের এটি জেলার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। দেশের যে ৭টি জেলার উপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে বাগেরহাট জেলা তার একটি। মোংলা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবহাওয়াবিদ মো. হারুন অর রশিদ বলেন, শুক্রবার সন্ধ্যারদিকে ৪১.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার রেকর্ড করা হয়েছে মোংলায়। বৃহস্পতিবার মোংলায় দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪০.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দেশের যে ৭টি জেলার উপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে বাগেরহাট জেলা তার একটি। ১৫ থেকে ২১ এপ্রিল পর্যন্ত চুয়াডাঙ্গা, বাগেরহাট, যশোর, কুষ্টিয়া, রাজশাহী, পাবনা, ফরিদপুর জেলার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উঠতে পারে। এদিকে,তীব্র দাবদাহে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। সর্বস্তরের মানুষ হাঁসফাঁস করছে। পানি অত্যাধিক গরম হয়ে চিংড়ি ঘেরের মাছ মরে যাচ্ছে। গবাদী পশুও অস্থির হয়ে উঠেছে। জেলার বিভিন্ন স্থানে পল্ট্রি ফার্মে মুরগীর মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। সবজি ও বোরো ধানের ক্ষেত শুকিয়ে যাচ্ছে। ফসল রক্ষায় কৃষকরা হিমসিম খাচ্ছেন। বাগেরহাট চিংড়ি চাষি সমিতির সভাপতি সুমন ফকির বলেন, মাত্রাতিরিক্ত গরমের কারনে চিংড়ি ঘেরের মাছ মরে যাচ্ছে। পানি প্রচন্ড গরম হবার কারণে এ অবস্থা হচ্ছে। ৩/৪ ফুট গভীর পানি আছ, এমন ঘেরের মাছও রক্ষা করা যাচ্ছেনা।’ এদিকে হাসপাতাল ও কিবলনিক গুলোতে ডায়রিয়া রোগীর চাপ অত্যাধিক বৃদ্ধি পেয়েছে। তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাওযার কারনে গত কয়েক দিন ধরে বেলা বাড়ার সাথে-সাথেই রাস্তাঘাট ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে। লোকজন অতি প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হচ্ছেনা। তীব্র গরমে হাঁসফাঁস অবস্থা সব মানুষের। রাত ও দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকায় তীব্র গরমে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। তাপপ্রবাহে বেশি বিপাকে পড়েছেন বাগেরহাটের শ্রমজীবী মানুষ। এ জেলায় তীব্র গরম ও রোদের তাপে কৃষি শ্রমিকসহ দিনমজুর, রিকশাচালকরা কাজ করতে না। এই অবস্থায় সরবতসহ পানীয় জাতিয় দোকানে ভীর করছেন লোকজন। কামরুজ্জামান মুকুল নামে এক রোজাদার ব্যক্তি বলেন, এমন গরম জীবনে দেখিনি, সব যেন পুড়ে যাচ্ছে। ঘরের মধ্যেও স্বস্তিতে থাকতে পারছিনা। রাতে ঘুমাতে পারছিনা, গরমে দম যেন বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। রোজা থাকতে অত্যাধিক কষ্ট হচ্ছে। ’স্কুল শিক্ষিকা লায়লা বেগম ও সুনয়না রায় বলেন, সকাল-দুপুর-রাত সমানে গরম পড়ছে। রান্নাবান্না করতে খুব কষ্ট হচ্ছে। ঘরে থাকার পরেও শরীর থেকে দরদর করে ঘাম বের হচ্ছে, পরণের কাপড়-চোপড় সব সময় ভিজে থাকছে। দিনেরমধ্যে ২/৩ বার গোসল করেও লাভ হচ্ছেনা, শরীর আরও খারাপ লাগছে।’ বাগেরহাট সদর হাসপাতালে কর্মরত জোৎস্না বেগমের ভাষায়, গরমে যেন দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, মাথা ঘুরাচ্ছে, মনেহয় পড়ে কহন যেন মরে যাব।’ দিনমজুর কামাল মোল্লা বলেন, কাজ করতি পারতিছি না। পুকুরে নামেও শান্তি নেই, গরমে পুকুরের পানি যেন ফুঁটতিছে, জম্মের গরম, নামা যায় না, গোসল করা যায় না। তাই সকালে আর রাত্রিরে গোসল করি, তা করলি কি হবে, এট্টু পরে যা তাই, গা ঘামতি থাহে।’’ বাগেরহাটের সিভিল সার্জন ডা: জালাল উদ্দিন ও ২৫০ শয্যা হাসপাতালের তত্ত্বাধায়ক অসীম কুমার সমদ্দার জানান, গত এক সপ্তাগে ডায়রিয়াসহ পেটেরপীড়ায় আক্রান্ত রোগী বেড়েছে। এদের অধিকাং শিশু বলে তাঁরা উল্লেখ করেন।
বাগেরহাটে তাপমাত্রা, ৪১.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস: পানি গরম হয়ে চিংড়ি ঘেরের মাছ মরে যাচ্ছে
Published on
