অনাকাঙ্ক্ষিত এক ঘটনা ঘটেছে খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা উপজেলায়। সেখানে এক ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষে ঢুকে ২০ শিক্ষার্থীকে পিটিয়েছেন। কী অপরাধ শিক্ষার্থীদের? তারা ওই ইউপি চেয়ারম্যানের প্রশ্নের উত্তর দেয়নি। প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যাচ্ছে, গত সোমবার সকালে পেছনের দরজা দিয়ে শ্রেণিকক্ষে ঢোকেন ওই বিদ্যালয়ের দাতা সদস্য ইউপি চেয়ারম্যান। তিনি শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেন। শিক্ষার্থীরা চুপ থাকায় তিনি খেপে গিয়ে শিক্ষিকাকে বেত নিয়ে আসতে বলেন। পরে বাইরে থেকে বাঁশের কঞ্চি নিয়ে আসা হয়। সেই কঞ্চি দিয়ে গণহারে ছাত্র-ছাত্রীদের মারধর করেন চেয়ারম্যান। এটা কি বিদ্যালয়ের দাতা সদস্য ইউপি চেয়ারম্যানের ক্ষমতার দম্ভ, নাকি ক্ষমতার অপব্যবহার? হতে পারেন তিনি দাতা সদস্য। কিন্তু তিনি কি পূর্বানুমতি না নিয়ে কোনো বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষে প্রবেশ করতে পারেন? এ ধরনের ঘটনা কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য যেমন ক্ষতিকর, তেমনি ওই শ্রেণিকক্ষে যে শিক্ষিকা পাঠদান করছিলেন, তাঁর জন্যও এ ঘটনাটি অবমাননাকর। স্কুল-কলেজে শারীরিক শাস্তি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। কারণ শারীরিক শাস্তি মানসিক বিকাশের অন্তরায়। সরকারের পরিপত্রে বলা আছে, কোনো শিক্ষক শিক্ষার্থীদের শারীরিক শাস্তি দিলে সেই শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় এবং আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। শিক্ষক শুধু নন, স্থানীয়দেরও দায়িত্ব হচ্ছে ছাত্র-ছাত্রীদের মানসিক বিকাশে সহায়তা করা। কিন্তু কোনো জনপ্রতিনিধি ক্ষমতার দাপট দেখাতে গিয়ে অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ঢুকে শিক্ষার্থীদের লাঠিপেটা করলে তাঁর বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া উচিত? আন্তর্জাতিক শিশু অধিকার সনদে শিশুদের ওপর দৈহিক ও মানসিক নির্যাতন নিষিদ্ধ। বাংলাদেশ সেই সনদে অনুস্বাক্ষরকারী একটি দেশ। বাংলাদেশের দণ্ডবিধিতেও এসংক্রান্ত আইন রয়েছে। কিন্তু তার পরও একজন জনপ্রতিনিধি এ ধরনের ঘটনার জন্ম দেন কী করে? পিটিআই, বিএডসহ শিক্ষকদের যেসব প্রশিক্ষণ রয়েছে, সেখানেও শিশুদের শাস্তি না দিয়ে আনন্দের মাধ্যমে শিক্ষাদানের ওপর জোর দেওয়া হয়। স্কুলে শারীরিক শাস্তি বন্ধে পরিপত্র জারির পর থেকে বাংলাদেশেও শিক্ষকরা বেত হাতে ক্লাসে প্রবেশ করেন না। কিন্তু একজন ইউপি চেয়ারম্যান কাজটি করলেন কী করে? এ মানসিকতার কারণ কী? ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান কারো অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজন বোধ করেননি। পেছনের দরজা দিয়ে শ্রেণিকক্ষে ঢুকেছেন। এটা অনধিকার প্রবেশ। ক্লাসে বেত আনার অনুমতি নেই জানানোর পরও চেয়ারম্যান শিক্ষিকাকে কঞ্চি আনতে বাধ্য করেছেন। এটা ক্ষমতার অপব্যবহার। অভিযুক্ত ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনার যেন পুনরাবৃত্তি না হয় সে ব্যাপারে সজাগ থাকতে হবে।