Tuesday, September 26, 2023
Homeজাতীয়ভয়াল ২৯ এপ্রিলের ঘূর্ণিঝড় ৩২ বছরেও পরিবারের ১৮ সদস্যকে খুঁজে পাননি শফকত

ভয়াল ২৯ এপ্রিলের ঘূর্ণিঝড় ৩২ বছরেও পরিবারের ১৮ সদস্যকে খুঁজে পাননি শফকত

Published on

সাম্প্রতিক সংবাদ

সংখ্যালঘু কমিশন এবার বাস্তবায়ন হোক

বিভিন্ন সময় দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতন, অবৈধভাবে ভূমি দখল ও সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনার...

এমারেল্ড অয়েলের সঙ্গে যমুনা এডিবল অয়েলের চুক্তি

প্রতিদিনের ডেস্ক পুঁজিবাজারে খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতে তালিকাভুক্ত কোম্পানি এমারেল্ড অয়েল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের পরিচালনা পর্ষদ...

শিল্পীর নিপুণ হাতের ছোঁয়ায় পূর্ণতা পাচ্ছে দূর্গাপূজার প্রতিমা

নিজস্ব প্রতিবেদক আর কয়েক দিন পর শুরু হবে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বৃহৎ ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা।...

‘কোনো কিছু না পাওয়ার চেয়ে কিছু পাওয়া ভালো’

প্রতিদিনের ডেস্ক ২০১০ সালে এশিয়ান গেমসে রৌপ্য পদক জিতেছিল বাংলাদেশ। এরপর ২০১৪ সালে আরও একবার...

বার্তাকক্ষ
১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিল রাতে ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে লন্ডভন্ড হয়ে গিয়েছিল চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার বেশিরভাগ এলাকা। এতে প্রাণ হারান প্রায় ৩০ হাজার মানুষজন। সেদিন শফকত হোসাইন হারিয়েছেন ভাইবোনসহ পরিবারের ১৮ সদস্যকে। তাদের গত ৩২ বছরেও খুঁজে পাননি।
শফকত হোসাইন (৪৪) বাঁশখালীর গণ্ডামারা ইউনিয়নের পশ্চিম বড়ঘোনা এলাকার বাসিন্দা। দুঃসহ সেই স্মৃতি এখনও বয়ে বেড়াচ্ছেন। ঘূর্ণিঝড়ের নাম শুনলে এখনও আঁতকে ওঠেন। তার মতো উপজেলার বাসিন্দারা এখনও আতঙ্কে থাকেন। সেদিনের ঘূর্ণিঝড়ে ভাইবোনসহ পরিবারের ১৮ সদস্যকে হারিয়েছি, আজও খুঁজে পাইনি জানিয়ে শফকত হোসাইন বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড়ের ভয়াবহতা ছিল একরকম এবং পরবর্তী বিভীষিকা ছিল অন্যরকম। এটি আমার কাছে এখনও এক আতঙ্কের নাম।’
তখন আমার বয়স ১২ উল্লেখ করে শফকত বলেন, ‘ওই দিন জলোচ্ছ্বাসে আমাদের ঘরবাড়ি ভেসে গিয়েছিল। পানির স্রোতে ভেসে যায় পরিবারের সদস্যরা। বাবা মাওলানা রওশন আলী আমাকে একটি বড় গাছের ওপর তুলে দেন। আমি গাছটির ঢাল ধরে বসেছিলাম। বাবা আমাকে গাছে তুলে দিয়েছেন ঠিকই, কিন্তু নিজে উঠতে পারেননি। মা-বাবা, ভাইবোনকে চোখের সামনে পানির স্রোত ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। ভাগ্যক্রমে আমি বেঁচে যাই।’
সারারাত ওই গাছের ঢালে বসেছিলাম, পরদিন ঘূর্ণিঝড় থামার পর নেমে আশপাশে তাকিয়ে দেখি কারও কোনও সাড়াশব্দ নেই উল্লেখ করেন শফকত। তিনি বলেন, ‘পানির স্রোত কমার পর আশপাশে তাকিয়ে দেখি কেউ নেই। ঘরবাড়ির কোনও অস্তিত্ব নেই। চারদিকে লাশ আর লাশ।’
ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী বিভীষিকার বর্ণনা দিয়ে শফকত বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড়ের পরদিন বাবাকে প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে একটি মসজিদের ছাদের ওপর আহত অবস্থায় এবং মা মাহমুদা খানমকে প্রায় দুই কিলোমিটার দূরে একটি খেজুর গাছে কাঁটাবিদ্ধ অবস্থায় উদ্ধার করে স্থানীয়রা। মা এখনও বেঁচে আছেন। বাবা ২০০৬ সালে মারা গেছেন। ওই দিন আমাদের বাড়িতে বেড়াতে আসা বিবাহিত বড় বোন ছকিনা বেগম, তার দুই সন্তান, ছোট ভাইবোন, ভাতিজা-ভাতিজি এবং নানিসহ পরিবারের ১৮ জনকে হারিয়েছি। আজও তাদের খোঁজ পাইনি।’
ওই ঘূর্ণিঝড় থেকে বেঁচে গিয়েছিলেন চট্টগ্রাম কলেজের রসায়ন বিভাগের শিক্ষক আবু সৈয়দ মোহাম্মদ মুজিব। তিনি বলেন, ‘সেদিন ঘূর্ণিঝড়ে বাঁশখালীর গণ্ডামারা, ছনুয়া, বাহারছড়া ও খানখানাবাদ ইউনিয়ন সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। পাশাপাশি কমবেশি উপকূলের এই উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আমার বাড়ি ছনুয়া ইউনিয়নে। বাড়ির পাশের ১৫-২০ জন প্রতিবেশী মারা যান। সেদিন পুঁইছড়ি ইউনিয়নে এক আত্মীয়ের বিয়েতে ছিলাম। সে জন্য ভাগ্যক্রমে বেঁচে গিয়েছিলাম।’
সেই জলোচ্ছ্বাস ও ঘূর্ণিঝড়ের বর্ণনা দিয়ে আবু সৈয়দ বলেন, ‘এটি ছিল ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস। ২৯ এপ্রিল রাতে আঘাত হেনেছিল। ৩০ এপ্রিল সকালে দেখি খাল-বিলে লাশ আর লাশ। সেইসঙ্গে বহু গৃহপালিত পশু ও প্রাণী মারা গেছে। এর কোনও হিসাব নেই। আমরা এখনও সেই দুঃসহ স্মৃতি ভুলতে পারিনি। এ জন্য কোনও ঘূর্ণিঝড়ের কথা শুনলে আঁতকে উঠি।’
বাঁশখালীর ৩৬ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের অনেকাংশ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে উল্লেখ করে এই শিক্ষক আরও বলেন, ‘এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য অংশ হলো খানখানাবাদ ও ছনুয়া ইউনিয়ন এলাকায়। যেকোনো ঘূর্ণিঝড়ে এখানে ক্ষয়ক্ষতির শঙ্কা আছে।’
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী প্রকাশন চাকমা বলেন, ‘বাঁশখালীর ৩৬ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের মধ্যে চার-পাঁচ কিলোমিটার ঝুঁকিপূর্ণ। তবে জলোচ্ছ্বাসে পানি ঢোকার সম্ভাবনা নেই। তবে বড় ধরনের জলোচ্ছ্বাস হলে কিছুটা সমস্যায় পড়ার শঙ্কা আছে।’
এবার ঘূর্ণিঝড় মোখার আঘাত উপকূলীয় এই উপজেলায় লাগেনি উল্লেখ করে বাঁশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাইদুজ্জামান চৌধুরী বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় মোখা এবার এখানে আঘাত করেনি। তবে এটি মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়েছিলাম আমরা। ১১২টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রেখেছিলাম।’
প্রসঙ্গত, ১৯৯১ সালের ২২ এপ্রিল মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে বঙ্গোপসাগরে একটি গভীর নিম্নচাপের সৃষ্টি হয়। ২৪ এপ্রিল নিম্নচাপটি ০২বি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেয় এবং উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর হতে থাকে। অগ্রসর হওয়ার সময় এটি আরও শক্তিশালী হয়। ২৮ ও ২৯ এপ্রিল এটির তীব্রতা বৃদ্ধি পায় এবং এর গতিবেগ পৌঁছায় ঘণ্টায় ১৬০ মাইলে। ২৯ এপ্রিল রাতে এটি চট্টগ্রামের উপকূলীয় অঞ্চলে ঘণ্টায় ১৫৫ মাইল বেগে আঘাত হানে। আঘাতের পর এর গতিবেগ ধীরে ধীরে কমতে থাকে এবং ৩০ এপ্রিল এটি দুর্বল হয়ে যায়।
সরকারি হিসাবে, এই ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয় বাংলাদেশের ১৯টি জেলার ১০২টি উপজেলা। তবে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় সন্দ্বীপ, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, কুতুবদিয়া, খেপুপাড়া, ভোলা ও টেকনাফ। এই ঝড়ে ১ লাখ ৩৮ হাজার ৮৮২ জন মানুষ মৃত্যুবরণ করে এবং প্রায় সমপরিমাণ মানুষ আহত হয়। এই ঘূর্ণিঝড়ের ফলে ৬ মিটার (২০ ফুট) উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস উপকূলীয় এলাকা প্লাবিত করেছিল।

spot_img
spot_img

এধরণের সংবাদ আরো পড়ুন

লালবাগে মিষ্টির দোকানে আগুন, নিয়ন্ত্রণে ৯ ইউনিট

প্রতিদিনের ডেস্ক রাজধানীর লালবাগে মদিনা মিষ্টান্ন ভান্ডার নামে একটি মিষ্টির দোকানে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। ঘটনাস্থলে...

‘এলপিজির দাম বেশি নিলে ডিলারদের লাইসেন্স বাতিল’

প্রতিদিনের ডেস্ক সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে তরলীকৃত পেট্রেলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) দাম বেশি নিলে প্রয়োজনে ডিলারদের...

বিশ্বের মানুষ পশ্চিমাদের প্রতারণার শিকার

প্রতিদিনের ডেস্ক বিশ্বের বেশিরভাগ মানুষ পশ্চিমাদের প্রতারণার শিকার বলে মন্তব্য করেছেন রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ।...