শাহিনুর রহমান, পাটকেলঘাটা
সাতক্ষীরার পাটকেলঘাটায় দশম শ্রেণির মাদ্রাসাছাত্রীকে অপহরণ করে পাঁচ দিন আটকে রেখে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ পাওয়ার পর গত ৫ অক্টোবর ভুক্তভোগীকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। তাকে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এদিকে ভুক্তভোগীর বাবার অভিযোগ, মেয়েকে উদ্ধারের পর বাড়িতে খবর দেয় পুলিশ। খবর পেয়ে থানায় যেতে দেরি করায় পুলিশ বাড়িতে এসে তাকে মারতে মারতে নিয়ে যায়। এরপর কারাদণ্ড দেওয়ার হুমকি দিয়ে মামলা না নিয়ে মেয়েকে তার হাতে তুলে দেওয়া হয়।
এলাকাবাসী জানান, ভুক্তভোগীর বাবা একজন চা বিক্রেতা। মেয়েকে উদ্ধারের খবর পেয়ে থানায় যেতে দেরি করায় পুলিশ বাড়িতে আসে। এরপর তাকে মারতে মারতে থানায় নিয়ে যায়। মেয়েকে না নিয়ে গেলে বাবাকে মোবাইল কোর্টে সাজা দেওয়ার হুমকি দেন পাটকেলঘাটা থানার উপ-পরিদর্শক রমজান আলী।হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মাদ্রাসাছাত্রী জানায়, পার্শ্ববর্তী শানতলা গ্রামের সাহেব আলী গাজীর ছেলে মামুন গাজী তার সহপাঠী। তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। গত ১ অক্টোবর রাত ৯টার দিকে বিদ্যুৎ চলে যাওয়ায় সে বাড়ির সামনে রাস্তায় এসে দাঁড়ায়। এ সময় মামুন ও তার ভাই আল আমিন একটি মোটরসাইকেলে তাকে তুলে নিয়ে সেনেরগাঁতি গ্রামে ফুপুর বাড়িতে নিয়ে যায়। সেখানে তাকে বিয়ে করার কথা বলে তিন দিন ধর্ষণ করে। ৪ অক্টোবর ভোরে তাকে শানতলা গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যায় মামুন। সেখানে দুই দিন ধর্ষণ করে। ৫ অক্টোবর রাতে পুলিশ মামুনের বাড়ি থেকে তাকে উদ্ধার করে পাটকেলঘাটা থানায় নিয়ে যায়।
ভুক্তভোগীর বাবা জানান, পহেলা অক্টোবর রাতে তার মেয়েকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। পরদিন তিনি পাটকেলঘাটা থানায় শানতলা গ্রামের মামুন ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করেন। পুলিশ ৫ অক্টোবর রাতে মামুনের বাড়ি থেকে তাকে (মামুন) আটক ও তার মেয়েকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। এ সময় তাকে থানায় যেতে বলা হয়। পরদিন থানায় যেতে দেরি হওয়ার অভিযোগ তুলে উপ-পরিদর্শক রমজান আলী তাকে বেলা ১১টার দিকে মারতে মারতে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে থানায় যান। মামলা না নিয়ে মেয়েকে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার কথা বললে তিনি রাজি হননি। এর ফলে তাকে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে দুই বছরের সাজা দেওয়ার হুমকি দেন রমজান আলী। এক পর্যায়ে তিনি মেয়েকে নিয়ে আসেন এবং শুক্রবার (৭ অক্টোবর) বিকালে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন।
অভিযুক্ত মামুন শেখ বলেন, ‘ওর (মাদ্রাসাছাত্রীর) বাবা জোর করে মেয়েকে অন্যত্র বিয়ে দিতে চান। এ কারণে তার মা ১ অক্টোবর মেয়েকে আমার হাতে তুলে দিয়েছিলেন। সহকারী কমিশনার (ভূমি) কর্মকর্তার কাছে মুচলেকা দিয়ে নিয়ে যাওয়ার পরও এখন মামলা দিতে মেয়েকে হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছেন।’
সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক মীর মাহাফুজুল আলম জানান, শুক্রবার বিকাল সোয়া ৪টায় ওই ছাত্রীকে ভর্তি করা হয়। তার শরীরে আঘাতের কোনও চিহ্ন নেই। বিষয়টি সদর থানাকে অবহিত করা হয়েছে। এদিকে ভুক্তভোগীর বাবাকে মারধর ও মামলার হুমকি দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন পাটকেলঘাটা থানার উপ-পরিদর্শক রমজান আলী।পাটকেলঘাটা থানার পুলিশ পরিদর্শক বিশ্বজিৎ অধিকারী জানান, গত ৫ অক্টোবর মেয়েটিকে উদ্ধারের পর বৃহস্পতিবার দুপুরে তালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে মোবাইল কোর্টের জন্য ভুক্তভোগীকে ও মামুনকে পাটকেলঘাটা সহকারী কমিশনার (ভূমি) রুহুল কুদ্দুসের কাছে পাঠানো হয়। ছেলে ও মেয়ে উভয়েই অপ্রাপ্ত বয়স্ক। এ কারণে উভয়পক্ষের কাছ থেকে মুচলেকা নিয়ে মা-বাবার কাছে ভুক্তভোগীকে তুলে দেওয়া হয়। বাবার কাছে তুলে দেওয়া হয় মামুনকে। উপ-পরিদর্শক রমজান আলীর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন পুলিশ পরিদর্শক।
