নিজস্ব প্রতিবেদক
যশোরে ডায়রিয়ার প্রকোপ দেখা দিয়েছে। প্রতিদিন যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে প্রায় অর্ধশত ডায়রিয়া রোগী ভর্তি হচ্ছেন। এছাড়া প্রায় দ্বিগুণ পরিমাণ রোগী বহির্বিভাগ থেকে চিকিৎসা সেবা নিচ্ছেন। প্রচণ্ড গরমে পানিবাহিত এই রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন সব বয়সের মানুষ। হাসপাতালে রোগীদের উপচে পড়া চাপ থাকলেও একটি বড় অংশ হাসপাতালে না এসে পল্লী চিকিৎসক ও স্থানীয় ডাক্তারদের পরামর্শে চিকিৎসা গ্রহণ করেছেন। যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ড ঘুরে দেখা গেছে, মঙ্গলবার (২৩ মে) হাসপাতালের ডায়ারিয়া ওয়ার্ডে ৪৪ জন নতুন রোগী ভর্তি হয়েছেন। এর আগে সোমবার ৫০ জন এবং রোববার ৫২ জন রোগী ভর্তি হয়েছিলেন। এখন হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন ৬৭ জন। হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডে নির্ধারিত শয্যা সংখ্যা পাঁচটি। শয্যা না পেয়ে করিডোর ও মেঝেতে চলছে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা। অন্য ওয়ার্ডের প্রবেশমুখে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে বিভিন্ন বয়সী নারী-পুরুষের পাশাপাশি শিশুদেরও। রোগীদের বিছানাপত্রের আশপাশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে ময়লা-আবর্জনা, আছে দুর্গন্ধও। এমন পরিস্থিতিতে আরও একটি নতুন ওয়ার্ড খুলেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তবে সেখানে বেড না থাকায় এলোমেলোভাবে মেঝেতে চিকিৎসা নিতে দেখা গেছে। শয্যার চেয়ে রোগী বৃদ্ধি পাওয়ায় চিকিৎসা দিতেও হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসক-নার্সরা। কয়েকজন রোগী জানান, হাসপাতালের পরিবেশ নোংরা। এখানে ডায়রিয়া চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের বাধ্য হয়ে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে থাকতে হচ্ছে।
যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসকরা বলছেন, প্রতি বছরই গ্রীষ্ম মৌসুমে ডায়রিয়ার প্রকোপ দেখা দেয়। দীর্ঘদিন ধরে খরার কারণে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় পুকুর বা ব্যবহৃত পানি দূষিত হয়ে পড়েছে। দূষিত পানি ব্যবহারের ফলে ডায়রিয়ার প্রকোপ দেখা দিচ্ছে। এছাড়া বাসি, পচা খাবার খেয়েও অনেকে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছেন। সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালের পাশাপাশি অনেকেই চিকিৎসা নিচ্ছেন বাসাবাড়িতে। যাদের অবস্থা বেশি খারাপ হচ্ছে, তাদের হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে তত্ত্বাবধায়ক ডা. হারুন অর রশিদ বলেন, বর্তমানে হাসপাতালে শয্যার চেয়ে অনেক বেশি রোগী চিকিৎসা নিচ্ছে। চিকিৎসক-নার্স সেবা দিতে হিমশিম খেলেও কেউ চিকিৎসা বঞ্চিত হচ্ছেন না। নির্ধারিত ডায়রিয়া ওয়ার্ডে জায়গা সংকটে হাসপাতালের তৃতীয় তলাতে একটি নতুন ওয়ার্ড খোলা হয়েছে। ডায়রিয়া প্রতিরোধে করণীয় সম্পর্কে তিনি বলেন, সবার আগে নিরাপদ পানি পান করতে হবে। খাবার গ্রহণে সচেতন হতে হবে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে। বিশেষ করে রাস্তার খাবার, বাসি খাবার থেকে বিরত থাকতে হবে। পাশাপাশি ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হলে পর্যাপ্ত খাবার স্যালাইন খেতে হবে, যাতে পানিশূন্যতা দেখা না দেয়। এর সঙ্গে ডাবের পানি, চিড়ার পানি, কাঁচাকলার তরকারি, থানকুনি পাতার রস খেতে হবে। শিশুদের বুকের দুধের পাশাপাশি স্বাভাবিক খাবার খাওয়াতে হবে।
