তহীদ মনি :
যশোর শিক্ষা বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মোল্লা আমীর ও বোর্ডে কর্মরত তার দুইজন একান্ত বিশ^স্ত কর্মচারী গোপন মিটিং করেছেন। যশোর শহরের একটি অভিজাত হোটেলে সম্প্রতি এই বৈঠক হয় বলে বিভিন্ন সূত্র জানিয়েছে। দৈনিক প্রতিদিনের কথায় ধারাবাহিকভাবে যশোর শিক্ষা বোর্ডের সাড়ে ৭ কোটি টাকা লোপাটের খবর প্রকাশিত হওয়ার পর তারা এই বৈঠকে মিলিত হন। দুর্নীতি দমন কমিশনের(দুদক) আসন্ন এজাহার ও করণীয় দিক নির্ধারণে এ বৈঠক হয় বলে সূত্রের দাবি। তবে এটি বৈঠক নয় সৌজন্য সাক্ষাত বলে দাবি করেছেন সাবেক চেয়ারম্যানসহ বৈঠকে উপস্থিতরা। যশোর শিক্ষা বোর্ডের ৩৮ টি চেকে গত বছর সাড়ে ৭ কোটির অধিক টাকা লোপাটের ও জালিয়াতির বিষয় ধরা পড়ে। এ নিয়ে নানা ঘটনা ঘটে। দুদক যশোর অফিসে ওই সময় তৎকালীন বোর্ড চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মোল্লা আমীর হোসেন, সচিব প্রফেসর এএমএইচ আলী আর রেজাসহ ৫ জনের নামে মামলা হয়। এর পর চেয়ারম্যান ও সচিব ওএসডি হন। আব্দুস সালাম প্রথমে সাময়িক বরখাস্ত পরে স্থায়ীভাবে চাকরিচ্যুত হন। শোনা যাচ্ছে সে মামলার এজাহার খুব শিগগিরই দেয়া হবে। চেক জালিয়াতির ঘটনা ধরা পড়ার পর নানা মহলে বিশেষ করে বোর্ড পাড়ায় এ ঘটনার সাথে বোর্ডের ভিতরে-বাইরে উচ্চ পর্যায়ের অনেকেই জড়িত বলে গুঞ্জন ছড়ায়। অনেকেই বোর্ড চেয়ারম্যানের সহযোগিতা রয়েছে বলেও দাবি করেন। এদিকে দুদকের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছিল, লোপাট করা টাকার সর্বশেষ গন্তব্য পর্যন্ত যাওয়া হবে এবং সংশ্লিষ্টদেরকে আসামি করা হবে। কেউ আইনের হাত থেকে ছাড় পাবে না। এ ঘটনায় মামলার ৩ নং আসামি এবং তৎকালীন বোর্ড হিসাব সহকারী আব্দুস সালাম বিভাগীয় মামলায় সাজা প্রাপ্ত হয়ে চাকরিচ্যুত হন। বিভাগীয় মামলার তদন্ত কমিটি ও তদন্ত বোর্ডে আব্দুস সালাম বোর্ডর তৎকালীন চেয়ারম্যানসহ আরো কয়েকজন কর্মচারীর নাম জানিয়েছিলেন। আব্দুস সালামের দাবি ছিল তারাও এই লোপাটের সাথে জড়িত। একইভাবে বোর্ডের অভ্যন্তরীণ তদন্ত কমিটির কাছেও আব্দুস সালাম যে স্বীকারোক্তি দিয়েছিলেন সেখানেও ওই কয়জনের কথা বলেছিলেন। চলতি বছরের ১২ মার্চ চাকরিচ্যুত আবদুস সালাম বোর্ড চেয়ারম্যানকে যে লিখিত জবাব দিয়েছিলেন, সেখানে রয়েছে, চেয়ারম্যান ড. মোল্লা আমীর হোসেনের কথা বলে সহকারী প্রকৌশলী মো. কামাল হোসেন, সহকারী সচিব মো. মুজিবুল হক এবং মো. রাকিব হাসান ভেনাস প্রিন্টিং এন্ড প্যাকেজিংয়ের মালিকের প্রতিষ্ঠানের প্যাড নিয়ে কাজ করায়…একই চিঠিতে আব্দুস সালাম জানান, ১০/১০/২১ তারিখে ড. মোল্লা আমীর হোসেন টাইপ করে সহকারী প্রকৌশলী মো. কামাল হোসেন, সহকারী সচিব প্রশাসন মোহাম্মদ মুজিবুল হক এবং মোহাম্মদ রাকিব হাসানের মাধ্যমে পাঠান। তারা বলেন, ‘তুমি যদি দোষ স্বীকার করে নাও, চেয়ারম্যান তোমাকে মাফ করে দেবে, কোনো পুলিশ কেস হবে না।’ ওই স্বীকারোক্তিতে আরও এমন কথা রয়েছে। শুধু তাই নয় অভ্যন্তরীণ তদস্ত কমিটির কাছেও আব্দুস সালাম জানিয়েছিলেন, বোর্ডের ঊর্ধ্বতনরা জড়িত রয়েছেন, তিনি আদালতে তাদের নাম জানাবেন।
সম্প্রতি যশোর শহরের একটি অভিজাত হোটেলে যে গোপন মিটিং হয়, সেখানে চেয়ারম্যান মোল্লা আমীর ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন বোর্ডের সহকারী প্রকৌশলী মো. কামাল হোসেন এবং বর্তমান সিবিএ সম্পাদক মো. রাকিব হাসান। সাবেক চেয়ারম্যান বর্তমানে নিজ বাড়ি বরগুনা জেলায়, সেখানেই তিনি মূলত বাস করেন। হঠাৎ তার যশোরে আসা এবং সেই আলোচিত কামাল ইঞ্জিনিয়ার ও রাকিবের সাথে গোপনে মিটিং করাকে ভালোভাবে নিতে পারছেন না বোর্ডের অনেকেই। তাদের মতে, এখনো বোর্ডে অনেক কিছু চলে সাবেক চেয়ারমানের কথায় বা তার ইশারায়, এটা তার আর একটি প্রমাণ। অন্য একটি সূত্র দাবি করেন, যে কোনো সময় দুদক মামলার এজাহার দেবে এবং তার আগে দৈনিক প্রতিদিনের কথা যে বস্তুনিষ্ঠ রিপোর্ট করেছে তার প্রেক্ষিতে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণে ওই ৩জন মিটিংয়ে মিলিত হয়েছেন। তারা অভিজাত হোটেলে মিলিত না হয়ে স্বাভাবিকভাবে সবার সাথেই দেখা করতে পারতেন, বোর্ডে যেতে পারতেন। এভাবে গোপনে কেনো এমন প্রশ্নও ছিল সূত্রগুলোর। এ ব্যপারে উপসহকারী প্রকৌশলী কামাল হোসেনের দাবি, ‘স্যার এসেছিলেন, তার সাথে সাক্ষাতকরা স্বাভাবিক।’ তাছাড়া চৌগাছার এবিসিডি কলেজ অধ্যক্ষের আমন্ত্রণে তিনি ওই হোটেলে গিয়েছিলেন দাবি করে বলেন, ‘সেখানে চেয়ারম্যান স্যারকেও যেতে অনুরোধ করেছিলাম’। রাকিব কেনো, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, ‘সে স্যারকে নিয়ে গিয়েছিল।’ এ বিষয়ে সাবেক চেয়ারম্যান প্রফেসর.ড. মোল্লা আমীর হোসেন বলেন, এটা কোনো বৈঠক ছিল না। তিনি যশোরে এক আত্মীয়ের বাড়ি এসেছিলেন। ফোন দিয়ে রাকিবকে বাইকে একটু লিভ দিতে বলেছিলেন। এ সময় কামালের কাছে অন্য মামলার কাগজ পত্রের অবস্থা জানতে চেয়েছিলেন। তখন কামাল এবিসিডি কলেজের রেজাউলের অসুস্থ মেয়ের কথা জানিয়ে ওই হোটেলে যেতে বলেন। পরে সেখানে তারা কথাবার্তা বলেন বলে দাবি করেন। এটা গোপন মিটিং না বলেও জানান।
যশোর শিক্ষা বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান ও আলোচিত দুই কর্মকর্তার গোপন বৈঠক
Published on