বার্তাকক্ষ ,,রমজান ও ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে সব সময় চুরি, ছিনতাই, জাল নোটের প্রচলন, অজ্ঞান পার্টির তৎপরতা বাড়ে। এই চক্রের খপ্পরে পড়ে ব্যবসায়ী ও ক্রেতারা হন সর্বস্বান্ত। সম্প্রতি ডাচ-বাংলা ব্যাংকের টাকা লুটের ঘটনায় শঙ্কায় আছেন ব্যবসায়ী ও ক্রেতারা।তবে এসব চক্রের তৎপরতা প্রতিরোধে, বিশেষ করে নগরবাসীদের চলাফেরা নির্বিঘ্ন করতে অগ্রিম গোয়েন্দা নজরদারি বাড়িয়েছে বলে জানিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বলছে, আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। অপরাধপ্রবণ এলাকা চিহ্নিত করে এরই মধ্যে বাড়ানো হয়েছে গোয়েন্দা তৎপরতা। সেই সঙ্গে বিভিন্ন মার্কেট এলাকায় নিরাপত্তা জোরদারে সংশ্লিষ্ট থানাকে টহল জোরদারের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, রমজানে বেশির ভাগ ক্রেতাই ইফতারের পর মার্কেটে কেনাকাটা করতে আসেন। সন্ধ্যার পর মার্কেটগুলোতে বাড়ে ক্রেতাদের আনাগোনা। কেনাকাটা কিংবা এক মার্কেট থেকে অন্য মার্কেটে ঢুঁ দিয়ে রাতে নগরবাসীর চলাফেরা নির্বিঘ্ন করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা মার্কেটের ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। আইনশৃঙ্খলার সদস্যরা ব্যবসায়ীদের আশ্বস্ত করেছেন, কোনও ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার সম্মুখীন হতে হবে না। এই আশ্বাস সামনে রেখেই তারা নিশ্চিন্তে ব্যবসা পরিচালনা করতে চান।
তারা বলছেন, তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সড়কে চলাচল কতটুকু নিরাপদ রাখতে পারে, ক্রেতারা কতটুকু বাজারমুখী হবে, তা সময়ই বলে দেবে। কোনও শঙ্কা ছাড়া যখন ক্রেতারা বাজারমুখী হবেন, তখনই বেচাকেনা বাড়বে। এ ছাড়া পণ্য কিনে আনতে বিভিন্ন সময় বড় অঙ্কের টাকা বহন করতে হয় তাদের, এবার বেশ আতঙ্কে আছেন তারা।
এ ছাড়া বড় বড় শপিং মল যেগুলো রয়েছে, সেখানে চুরি-ছিনতাই প্রতিরোধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নারী সদস্যদের মোতায়েন করা প্রয়োজন। কারণ রমজান ও ঈদকে কেন্দ্র করে নারী চোর চক্রের সংখ্যা বেড়ে যায়।
দীর্ঘদিন ধরে সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী রাত ৮টার মধ্যে শপিং মল এবং বিভিন্ন মার্কেট বন্ধের যে নির্দেশনা চলছে। তবে রমজান ও ঈদকে কেন্দ্র করে ব্যবসায়ীরা তা বাড়ানোর দাবি করেছেন।
ব্যবসায়ীদের দাবি, রাত ১০টা পর্যন্ত মার্কেট খোলা রাখা হোক। বিভিন্ন ব্যবসায়ী রয়েছে, যাদের বিভিন্ন পণ্য রমজানের আগে ও রমজান চলাকালীন এবং ঈদের আগে বিভিন্ন ধাপে ধাপে বিক্রি হয়। যেমন থান কাপড় কিনে যারা কাপড় বানাবেন, তারা এখনই বিভিন্ন টেইলার্সে ছুটছেন। রমজানের শেষের দিকে কোনও টেইলার্স তখন আর কোনও কাজ নিতে পারবে না কারণ তখন তারা বুকড হয়ে থাকবেন। শেষ পর্যায়ে চাহিদা থাকবে বিভিন্ন গার্মেন্টস পণ্য, প্রসাধনী, জুতাসহ ঈদের দিনের খাবারসামগ্রী।
বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম বলেন, ঈদ এলে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বিভিন্ন শপিং মলে যেতে হয়। দিনে রোজা রেখে তা সম্ভব হয় না। তাই বেশির ভাগ সময় ইফতারের পর বের হই। এবার কী করবো চিন্তায় আছি। যেভাবে ছিনতাইয়ের ঘটনার খবর পাচ্ছি, তাতে খুব শঙ্কায় আছি।
ছিনতাইকারীরা এখন অনেক হিংস্র উল্লেখ করে কলেজ শিক্ষার্থী লিসান আহমেদ বলেন, কয়েক দিন আগে আমার এক বন্ধু ছিনতাইকারীর কবলে পড়ে টাকাপয়সা ও মোবাইল খুইয়েছে। জোরাজুরি করতে গিয়ে ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে হাত কেটে গেছে।
রাজধানীর নিউমার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আমিনুল ইসলাম বলেন, আমরা ব্যবসায়ীরা এবার আশা করছি গত কয়েক বছর করোনার কারণে যে ক্ষতি হয়েছে, তা অনেকটাই পুষিয়ে উঠতে পারবো। ব্যবসায়ীরা কেনাকাটার জন্য টাকা এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় স্থানান্তর করে। কে কখন কোন দিক দিয়ে ছুরি ধরে টাকাপয়সা ছিনিয়ে নেয়, সেই শঙ্কা তো রয়েছেই। রমজান ও ঈদকে কেন্দ্র করে ক্রেতা-বিক্রেতার চাপ থাকবে রাতের বেলায়। সে কারণে যেসব সড়কে লোকসমাগম কম থাকবে, সেসব এলাকায় থানা পুলিশের টহল বাড়ানোর দাবি জানান তিনি।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) তেজগাঁও গোয়েন্দা বিভাগের উপকমিশনার গোলাম সবুর বলেন, এরই মধ্যে বিভিন্ন মার্কেটের সামনে বাড়ানো হয়েছে নজরদারি। যারা মোটা অঙ্কের টাকা বহন করে, এক জায়গায় থেকে অন্য জায়গায় নিয়ে যাবেন, তারা যেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর শরণাপন্ন হন। এ ছাড়া রাতে ঢাকায় চলাচল বিঘ্নিত করতে বিশেষ নিরাপত্তাব্যবস্থা রাখা হয়েছে।র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, রমজান ও ঈদকে কেন্দ্র করে এরই মধ্যে বিশেষ নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। বিভিন্ন সড়কে র্যাবের পেট্রোলিং ও গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। র্যাবের বিভিন্ন ব্যাটালিয়ন গত দুই মাসে এরই মধ্যে প্রায় তিন শর বেশি চোর ও ছিনতাইকারীকে গ্রেফতার করেছে।
ডিএমপির গোয়েন্দা বিভাগের অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশিদ বলেন, বিভিন্ন সময় গ্রেফতার ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদে আমরা দেখতে পেয়েছি বিভিন্ন ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীরা ছিনতাইয়ের সঙ্গে জড়িত। তাই চক্রটি দ্রুত জেনে যাচ্ছে। ব্যবসায়ীদের টাকা বহনের সময় ও তথ্য ছিনতাইকারীদের কাছে পৌঁছে দিচ্ছে তারা।
তিনি ব্যবসায়ীদের এসব বিষয় সম্পর্কে আরও সচেতন হয়ে টাকা লেনদেন এবং এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় টাকা স্থানান্তরের তথ্য বাইরে না দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। চুরি, ছিনতাই, অজ্ঞান পার্টি মলম পার্টি ও জাল টাকার বিস্তার প্রতিরোধে গোয়েন্দা পুলিশের বিভিন্ন টিম মাঠে রয়েছে এবং তারা এসব বিষয় নজর রাখছে বলে জানান তিনি।