নিজস্ব প্রতিবেদক
যে মা-বাবা সন্তানকে জন্ম দিয়ে বড় করে তুলেছেন, সেই মা-বাবাকে অত্যাচার করে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছেন ছেলে। ফলে বার্ধক্য জীবনে এসে জরাজীর্ণ রান্না ঘরে বসবাস করছেন অসহায় বৃদ্ধা মা-বাবা। মা বাবাকে বাড়ি ছাড়া করে খ্যান্ত হয়নি পাষন্ড ছেলে ; শায়েস্তা করতে বাবার বিরুদ্ধে দিয়েছেন দুটি
চেক ডিসঅনারের মিথ্যা মামলা। মর্মান্তিক এই ঘটনাটি ঘটেছে যশোরের চৌগাছা উপজেলার নগরবর্ণি গ্রামে। বৃহস্পতিবার দুপুরে প্রেস ক্লাব যশোরের মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করে এ অভিযোগ করের ভুক্তভোগী বাবা আব্দুল বারিক (৭০) ও মা ছায়রা খাতুন (৬০)। অভিযুক্ত ছেলে আক্তারুজ্জামান (৩৫) আব্দুল বারিকের তিন সন্তানদের মধ্যে সবার বড়। বাকী দুই সন্তানের মধ্যে মেঝ মেয়ে শহরে একটি প্রতিষ্ঠানে চাকুরি করেন এবং ছোট ছেলে প্রবাসী। এই ঘটনায় ভুক্তভোগী আব্দুর বারিক বুধবার অভিযুক্ত ছেলের বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টাসহ হুমকির অভিযোগে যশোর জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করেছে। বিচারক বিষয়টি আমলে নিয়ে পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। সংবাদ সম্মেলনে আব্দুল বারিক লিখিত বক্তব্যে বলেন, তিন সন্তানের মধ্যে বড় সন্তান
আক্তারুজ্জামান। তিনি দীর্ঘ দিন ধরে নানা ভাবে শারিরীক ও মানসিক ভাবে আমাকে ও আমার স্ত্রীকে অত্যাচার নির্যাতন করে আসছে। আক্তারুজ্জামান বিদেশ থেকে এসে একটা বাড়ি তৈরি করে সেই বাড়িতে আমরা সবাই এক সাথে থাকতাম। কিন্তু সে প্রায়ই আমাদের টাকা আর সম্পত্তির জন্য মারধর করতো। এক পর্যায়ে মারধর করে তাড়িয়ে দিলে পাশেই পুরনো একটি বাড়ির রান্না ঘরে আমরা দুজন দীর্ঘদিন ধরে বসাবস করছি। এখানে এসেও আমাদের মারধর করছে টাকার জন্য। আমার বয়স ৭০ হয়েছে । এই বয়সে এসে আমরা আর মারধর খেতে পারছিনা। লিখিত বক্তব্য আরো জানানো হয়, আমাদেরকে আবার নতুন করে ফাঁদে ফেলেছে আক্তারুজ্জামান। প্রবাসি কল্যান ব্যাংক থেকে আমার এ্যাকাউন্টে টাকা আসবে বলে দুটি চেক সই করিয়ে দেয়। সেই এ্যাকাউন্টের ৩০ লাখ ও ৪০ লাখ টাকার দুটি চেক ডিসঅনারের মিথ্যা মামলা দিয়েছে সে।
ইতিপূর্বে তাকে আমি আমার চার বিঘা দশ শতক জমি, দশ শতক মেহগনি বাগান বিক্রি এবং পাঁচ বিঘা জমি বন্ধক রেখে তাকে টাকা দিয়েছি। তারপরেও টাকা শেষ হয়ে গেলেই আমাদেরকে মারধর করে। কোন কাজ না করে এলাকায় মেয়েছেলে নিয়ে বিভিন্ন জেলায় ফুর্তি করে বেড়ায়। এসব সহ্য করতে না পেরে চৌগাছা থানায় মোট তিনবার অভিযোগ করেছি। তাতেও কোন কাজ হয়নি। শেষমেশ আদালতে দারস্থ হয়েছি। সংবাদ সম্মেলনে কাঁন্নাজড়িত কন্ঠে মা ছায়রা খাতুন বলেন, ‘এ কেমন সন্তান পেটে ধরেছিলাম। যে বয়সে আমারা সন্তানের আয় রোজগার খাওয়ার কথা; সেই সময়ে আমরা এই দুই বৃদ্ধা থানা পুলিশ- কোট আদালতে ঘুরে বেড়াতে হচ্ছে। তার মা হয়েও আমি মারধর খায়; এই দুঃখ কোথায় বলবো। এটা কি পেটের সন্তানের কাজ! সন্তানের নির্যাতনে আজ মা বাবা রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছে। এমন সন্তান আর কাউকে দিও না আল্লাহ! মিথ্যা মামলা আর সন্তানের নির্যাতন থেকে রেহাই পেতে সাংবাদিকদের প্রতি দুই হাত মিনতি করে বৃদ্ধ বারিক কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, ‘আমার বড় ছেলে কোন কাজকাম করে না। সে আমার সকল সম্পদ/সম্মত্তি একা ভোগ করার জন্য এসব করছে। বার্ধক্য বয়সে আমারা আর কোথায় যাবো ? আর কত মারধর খাবো? আমরা আর মার খেতে চায় না। সে খুন করার হুমকি দিচ্ছে। আমরা মাননীয় প্রধান মন্ত্রীর কাছে এর বিচার চাই। আমরা জেলা প্রশাসক ও পুলিশসুপার স্যারের হস্তক্ষেপ কামনা করছি। প্রশাসন আমাদের সাথে না থাকলে সহযোগিতা না করলে আমরা স্বামী স্ত্রী দুজনে একই সাথে আত্মহত্যা করা ছাড়া আমাদের আর কোন পথ নাই। তবে অভিযোগের বিষয়ে অভিযুক্ত আক্তারুজ্জামান বলেন, আমার বাবা মানসিকভাবে অসুস্থ। তাই বাবা এসব করে বেড়াচ্ছে। তাদের কাউকে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া হয়নি; তারা চলে গেছে। তিনি জানান, আমি বিদেশ থাকাকালীন আমার বেতনের টাকাসব মা বাবার কাছে পাঠিয়েছি। তারা এখন কেউ সেই টাকার হিসাব দিতে পারছে না। এই জন্য মা বাবা আমার বিরুদ্ধে সব মিথ্যা ছড়িয়ে বেড়াচ্ছে। আমিও মামলা করেছি; আদালতের উপর তাকিয়ে আছি। আদালতই বিচার করবে। আর চৌগাছা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল ইসলাম সবুজ বলেন, ‘এমন কোন ঘটনা জানা নেই। অভিযোগ পেলে নিশ্চয়ই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
