Sunday, June 4, 2023
Homeআইটিসাইবার বুলিংয়ের কত রকম কৌশল!

সাইবার বুলিংয়ের কত রকম কৌশল!

Published on

সাম্প্রতিক সংবাদ

বাজেটে শুল্ক কমানোর উদ্যোগ ইতিবাচক

বাজারে নিত্যপণ্যের দাম বেড়েই চলেছে। শুধু নিত্যপণ্য নয়, বেড়েছে বিদ্যুতের দাম, প্রাকৃতিক গ্যাস ও...

নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণায় সরগরম সিলেট নগরী

বার্তাকক্ষ নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা আর মাইকিংয়ে এখন সরগম সিলেট নগরী। কে হচ্ছেন আগামী দিনের নগরপিতা আওয়ামী...

ম্যানইউকে হারিয়ে ‘ডাবল’ চ্যাম্পিয়ন ম্যানচেস্টার সিটি

বার্তাকক্ষ ২৪ বছর পর ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের কোনো ক্লাবের ট্রেবল জয়ের দারুণ এক হাতছানি ম্যানচেস্টার...

৩০০ আসনের সীমানা চূড়ান্ত করে গেজেট প্রকাশ

বার্তাকক্ষ ৩০০ সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ করে চূড়ান্ত গেজেট প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি) ৷...

বার্তাকক্ষ
একটি অনলাইন পোর্টালে এক নারীকে নির্যাতনের খবর প্রকাশিত হয় মাস কয়েক আগে। ওই সংবাদের পর পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) সাইবার ক্রাইম ইউনিটের ইন্সপেক্টর মেহেদী হিসেবে নিজের পরিচয় দিয়ে সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা বলেন কামরুল নামের এক ব্যক্তি। সাংবাদিকের কাছ থেকে ক্ষতিগ্রস্ত নারীর নাম, ঠিকানা ও মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করে মামলায় সব রকম সহযোগিতার আশ্বাস দেন কামরুল।
পরে কামরুল ওই নারীর সঙ্গে যোগাযোগ করেন। নির্যাতিত নারী কথিত সিআইডি ইন্সপেক্টরের কথায় বিশ্বাসও করেন। পরে ওই নারীর কাছ থেকে কৌশলে তার ব্যক্তিগত সব ছবি ও ভিডিও নিয়ে নেয় কামরুল। ছবি ও ভিডিও ফুটেজ পেয়েই লোকটির কথাবার্তার ধরন এবং চেহারা পাল্টে যায়। সে মেয়েটির কাছে দুই লাখ টাকা দাবি করে এবং তার সঙ্গে রাত যাপনেরও প্রস্তাব দেয়। না হলে ভুয়া আইডি খুলে তার ছবি ভাইরাল করে দেওয়ারও হুমকি দেয়। তখন ওই নারী বুঝতে পারেন তিনি এক ভয়ঙ্কর প্রতারকের খপ্পরে পড়েছেন।
এরপর ওই নারী সিআইডির কাছে আশ্রয় ও সহযোগিতা চাইলে সিআইডি অনুসন্ধানে নামে। এরপর সিআইডির সাইবার টিম কুমিল্লার কোতোয়ালি থানা এলাকা থেকে প্রতারক কামরুলকে গ্রেফতার করে।
হবিগঞ্জ জেলার আরেক তরুণীর ব্যবহৃত ফেসবুক আইডিটি হঠাৎ একদিন হ্যাক হয়ে যায়। আইডি থেকে তরুণীর ছবি নিয়ে এডিট করে তার হ্যাক হওয়া আইডিতে আপত্তিকরভাবে পোস্ট করছিল হ্যাকার। এর কিছুদিন পর একের পর এক ভুয়া ফেসবুক আইডি খুলে তাতে আপত্তিকর ছবিগুলো ও তার মোবাইল নম্বরসহ পোস্ট করা হচ্ছিল। ফলে বিভিন্ন নম্বর থেকে কল আসতে থাকে তরুণীর নম্বরে। দিনের পর দিন মানসিকভাবে এমন হয়রানির শিকার হয়ে হতাশ হয়ে পড়েন ওই তরুণী। পরে থানায় অভিযোগ করেন এবং থানা থেকেই জানতে পারেন পুলিশ সাইবার সাপোর্ট ফর উইমেনের কথা।
হয়রানির শিকার হওয়ার বিষয়টি পুলিশ সাইবার সাপোর্ট ফর উইমেনের ফেসবুক পেজে মেসেজ করে জানান তরুণী। প্রাথমিকভাবে সব তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে তথ্যানুসন্ধান ও প্রযুক্তিগত বিশ্লেষণে অভিযুক্তকে শনাক্ত করা হয়। অভিযুক্ত ব্যক্তিটি ওই তরুণীর খুব কাছের মানুষ, যার সঙ্গে তার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে। অভিযুক্ত ব্যক্তি অত্যন্ত চতুরতার সঙ্গে তরুণীকে দিনের পর দিন হয়রানি করেছে। পুলিশ সাইবার সাপোর্ট ফর উইমেনের প্রযুক্তিগত সহায়তায় হবিগঞ্জ জেলা পুলিশ অভিযুক্তকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।
সাইবার বুলিং
এভাবেই একের পর নারী-পুরুষকে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হয়রানি করে আসছে সাইবার সন্ত্রাসীরা। প্রযুক্তির পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে সাইবার সন্ত্রাসীরাও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজেদের অপরাধের কৌশল পরিবর্তন করে থাকে। যে কারণে সাইবার অপরাধ নিয়ন্ত্রণে ও প্রতিরোধে যারা কাজ করেন তারা বলছেন, অনলাইনে কাউকেই বিশ্বাস করা যাবে না। নিজের ব্যক্তিগত ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পাবলিক না করার পরামর্শ দেন তারা। কারণ এগুলোর মাধ্যমেই সাইবার অপরাধীরা তাদের অপরাধের কৌশলের জাল বিস্তার করে ব্ল্যাকমেইলিং করে থাকে। এক্ষেত্রে আইনগত সহায়তা নেওয়ার পাশাপাশি সচেতনতার কোনও বিকল্প নেই বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
বিশেষজ্ঞরা কী বলছেন
তথ্য প্রযুক্তিবিদ ও ব্যাকডোর প্রাইভেট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর হাসান জোহা বলেন, বুলিং তো সবসময় ছিল। একসময় সেটা ইভটিজিংয়ের পর্যায়ে ছিল। এখন এটার ধরন বদলেছে। বর্তমান যুগটা আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্সের যুগ। এই আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স দিয়ে একটা ন্যুড ছবি বা ভিডিওর মধ্যে আপনার মুখ বসিয়ে দিলো। এমনভাবে এডিট হয় যে বোঝার কোনও কায়দা থাকে না। আরেকটা হচ্ছে আপনার ভয়েস এডিট করা। মানে আপনার কণ্ঠস্বরের মতো আমি যা বলব সেভাবে সে আপনার কন্ঠস্বরকে অনুকরণ করবে। যা করে বিভ্রান্তি তৈরি করা হয়। হেনস্থা করা হয় টার্গেট করা ব্যক্তিকে।
তিনি বলেন, আমরা বুঝে না বুঝে অনলাইনে বিভিন্ন ব্যক্তির সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজেদের ছবি ও ভিডিও শেয়ার করি। এগুলো যত কম দেওয়া যায় ততই ভালো। কারণ এসব ভিডিও এবং ছবি ডাউনলোড করে সেটা এডিট করে আপনি যা বলেননি এবং করেননি সেটা তারা করে দেবে। এসব ক্ষেত্রে সবার আগে আইনের আশ্রয় নিতে হবে।
অপটিম্যাক্স কমিউনিকেশন লিমিটেডের পরিচালক এবং ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ইসপাব) সভাপতি ইমদাদুল হক বলেন, সাইবার সন্ত্রাসীদের আমরা প্রতিরোধ করতে পারি না। তবে আমাদের নেটওয়ার্ক বা ব্রডব্যান্ড যদি কেউ ব্যবহার করে, তাহলে সেটা আমরা পিন পয়েন্ট বা শনাক্ত করে বের করে দিতে পারি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সহযোগিতা চাইলে আমরা তাদের সহযোগিতা করি। বলে দেই. এই হলো ইউজার, এটা তার অ্যাড্রেস। তবে মোবাইল নেটওয়ার্ক ব্যবহার করলে সেটা আমরা পারি না।
এশিয়া প্যাসিফিক নেটওয়ার্ক ইনফরমেশন সেন্টারের (এপনিক) নির্বাহী কমিটিতে নির্বাচিত প্রথম বাংলাদেশি প্রযুক্তিবিদ সুমন আহম্মেদ সাবির বলেন, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে প্রযুক্তির ধরন ও অপরাধের ধরনও বদলাচ্ছে। যেমন একজনের ভিডিওতে নিজের মতো করে ভয়েস পাল্টে দিয়ে আরেকজনের ভয়েস দেওয়া যায়। এখন এমন টেকনোলজিও আছে। কাজেই বর্তমানে সচেতনতা ও সতর্কতার কোনও বিকল্প নাই। নিজের ছবি, ভিডিও এবং ব্যক্তিগত তথ্য পাবলিক না করাই শ্রেয়। আর কেউ সাইবার সন্ত্রাসীদের হাতে বুলিংয়ের শিকার হলেই শক্তভাবে আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে। না নিলে এগুলো ঘটতেই থাকবে। অপরাধীরা আরও উৎসাহিত হবে।
সিআইডি কর্মকর্তা যা বললেন
পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) সাইবার ইন্টেলিজেন্স অ্যান্ড রিস্ক ম্যানেজমেন্ট বিভাগের বিশেষ পুলিশ সুপার (এসএসপি) মোহাম্মদ রেজাউল মাসুদ বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারে সচেতনতার কোনও বিকল্প নাই। অনলাইনে কাউকে বিশ্বাস করা যাবে না। সজাগ, সচেতন, সতর্ক, সাবধান থাকা- এ কথাগুলো মনে রাখতে হবে। কারও সঙ্গে সম্পর্ক ও বন্ধুত্ব করতে হলে লোকটা সঠিক কিনা সেটা যাচাই করতে হবে। তারপর বন্ধুত্ব বা যোগাযোগ করা যেতে পারে।
তিনি বলেন, বুলিং বন্ধ বা প্রতিরোধ করা আসলেই কঠিন কাজ। নিত্য নতুন পন্থা অবলম্বন করে প্রতারণা বা বুলিং করে সাইবার সন্ত্রাসীরা। কারণ ফেসবুক ও অনলাইনে হাজারো ছবি ও ভিডিও পাওয়া যায়। এক্ষেত্রে বুলিংয়ের শিকার হলে অবশ্যই কাছের কোনও থানা কিংবা সাইবার পুলিশ সাপোর্ট সেন্টারে অভিযোগ করতে হবে। তাহলে আমরা ব্যবস্থা নিতে পারি।
সিআইডির এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ভুয়া ছবি বা ভিডিওগুলো ফরেনসিক ল্যাবের মাধ্যমে সহজেই শনাক্ত করা যায়। এরকম কাজ এক ধরনের অপরাধ। তবে ভয়ংকর অপরাধ হচ্ছে যে একটা মেয়ে বিশ্বাস করে তার বয়ফ্রেন্ডের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলে। সম্পর্কের খাতিরে তারা হয়তো ব্যক্তিগত ছবি ওঠায়। সেটা দিয়ে বুলিং করাটা হচ্ছে জঘন্য ও বিপজ্জনক। সত্যি সত্যি যদি ব্যক্তিগত ছবি বা ভিডিও লিকেজ হয় সেটা আসলেই বিপজ্জনক। এজন্য কাউকে বিশ্বাস করা যাবে না। তাছাড়া সোশ্যাল মিডিয়া আমরা সতর্কভাবে ব্যবহার করতে পারছি না। একসময় হয়তো ঠিক হয়ে যাবে। সবসময় সতর্ক থাকতে হবে। নিজেকে সহজে উপস্থাপন করানো যাবে না। ব্যক্তিগত কিংবা অন্তরঙ্গ মুহূর্তের কোনও ছবি এবং ভিডিও মোবাইলে কখনোই সংরক্ষণ করা উচিত হবে না।

spot_img
spot_img

এধরণের সংবাদ আরো পড়ুন

৩০০ আসনের সীমানা চূড়ান্ত করে গেজেট প্রকাশ

বার্তাকক্ষ ৩০০ সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ করে চূড়ান্ত গেজেট প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি) ৷...

৫ জুন রাত পর্যন্ত উৎপাদনে থাকছে পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র

বার্তাকক্ষ কয়লা সংকটে উৎপাদন বন্ধ হচ্ছে দেশের বৃহত্তম কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র পায়রার। তবে ৩ জুন কেন্দ্রটি...

শুধু আইএমএফ না, দেশের অর্থনীতিকে গুরুত্ব দিতে হবে: বিসিআই

বার্তাকক্ষ শুধু আইএমএফের শর্তের দিকে গুরুত্ব না দিয়ে দেশের অর্থনীতিকে সামনের দিকে এগিয়ে নেওয়ার বিষয়ে...