বার্তাকক্ষ
একদা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অত্যন্ত আস্থাভাজন নেতা তথা ভারতের সাবেক রেলমন্ত্রী মুকুল রায় রহস্যময় পরিস্থিতিতে দিল্লি এসে উপস্থিত হওয়ার পর তাকে নিয়ে রাজনৈতিক জল্পনা তুঙ্গে উঠেছে। তৃণমূল থেকে তিনি আবার বিজেপিতে ফিরবেন কি না, তা নিয়ে শুরু হয়েছে জোরালো চর্চা।
ইতিমধ্যে বিজেপি নেতা ও সাবেক এমপি অনুপম হাজরা এদিন সকালে শুধু ‘প্রত্যাবর্তন’ শব্দটি টুইট করে সেই জল্পনা আরও উসকে দিয়েছেন।
গত বেশ কিছুদিন ধরে অসুস্থ থাকা মুকুল রায় তার আচমকা দিল্লি আসার উদ্দেশ্য নিয়ে অবশ্য কোনও কথাই বলেননি। সোমবার গভীর রাতে এয়ারপোর্টের অ্যারাইভাল হল থেকে বেরিয়ে তিনি মিডিয়াকে শুধু জানিয়েছেন, ‘কেন আমি দিল্লি আসতে পারি না?’ ব্যাস, ওটুকুই – তারপর থেকে তিনি ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে গেছেন, সুইচ অফ করে দিয়েছেন মোবাইল ফোনেরও।
ওদিকে তার ছেলে ও তৃণমূল নেতা শুভ্রাংশু রায় কলকাতায় আজ সাংবাদিক বৈঠক করে অভিযোগ করেছেন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাইপো ও এমপি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে হেনস্থা করতেই তার অসুস্থ বাবাকে নিয়ে ‘কোনও রাজনৈতিক দল’ এই চক্রান্ত করেছে। ‘এর পেছনে নোংরা টাকার খেলা রয়েছে’ বলেও দাবি করেছেন তিনি। বাবা নিখোঁজ বলে গত রাতে পুলিশে ডায়েরিও করিয়েছিলেন তিনি।
কলকাতায় সল্ট লেকের বাড়ি থেকে সোমবার সন্ধ্যায় মুকুল রায় যে ঘনিষ্ঠ দুই সঙ্গীকে নিয়ে দিল্লির বিমান ধরতে চলে গেছেন, এ খবর পেয়ে শুভ্রাংশু রায় তড়িঘড়ি বিমানবন্দরে ছুটে এসেছিলেন। মুকুল রায় ততক্ষণে ইন্ডিগো এয়ারলাইন্সের দিল্লিগামী বিমানে চেক-ইন করে ফ্লাইটের ভেতরে বসে গেছেন। শুভ্রাংশু কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করেছিলেন তার বাবা মানসিকভাবে অসুস্থ, তাই তাকে ফ্লাইট থেকে নামিয়ে দেওয়া হোক – কিন্তু সেই অনুরোধ রক্ষিত হয়নি।
শুভ্রাংশু রায় আরও বলেন, ‘আমার বাবা বহুদিন ধরে মানসিক অসুস্থতায় ভুগছেন। তাকে যদি দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে জিজ্ঞেস করা হয়, তিনি আজকাল জবাব দেন ভারতের সঙ্গে আমেরিকার সম্পর্ক খারাপ বলেই এসব ঘটছে। তো এই মানুষটিকে পরিবারের মতামত উপেক্ষা করে কীভাবে দিল্লির বিমানে যেতে দেওয়া হলো এটাই আমার বোধগম্য নয়।’
দিল্লি বিমানবন্দরে নামার পর মুকুল রায়কে দেখে শারীরিকভাবে কিছুটা অসুস্থ মনে হলেও মানসিকভাবে কিন্তু মোটেই অসংলগ্ন দেখায়নি।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে ধীরে ধীরে তিনি বলেন, বিশেষ প্রয়োজনে দিল্লি এসেছেন। ‘আমি একজন এমএলএ, আমি এমপি-ও ছিলাম। তো দিল্লি আসতে পারব না? দিল্লি তো আমি আসিই, এবারে একটু দেরি হয়ে গেল এই যা’, বলেন তিনি।
এবারে দিল্লিতে ডাক্তার দেখাবেন বলেও জানিয়েছেন মুকুল রায়। যাকে বলা যায় একেবারে স্বাভাবিক কথাবার্তা।
মুকুল রায়কে এক সময় পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতির ‘চাণক্য’ বলে ধরা হত। তিনি ছিলেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতার সবচেয়ে বিশ্বস্ত লেফটেন্যান্ট ও তার নির্বাচনি কৌশলবিদ। একটা সময় মমতার দূত হিসেবে তিনি কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে তিস্তা জলচুক্তি নিয়েও আলোচনার দায়িত্বে ছিলেন।
২০১৮ সালে এই মুকুল রায়-ই বিজেপিতে যোগদান করেন এবং তার পরের বছর লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি পশ্চিমবঙ্গে অভূতপূর্ব সাফল্য পেয়ে ১৮টি আসনে জেতে। ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনেও তিনি বিজেপির টিকিটে লড়ে কৃষ্ণনগর থেকে এমএলএ নির্বাচিত হন – কিন্তু এর মাস দুয়েক পরেই তিনি আবার তৃণমূলে ফিরে আসেন। তবে গত বেশ কয়েক মাস ধরেই অসুস্থতার কারণে তিনি সক্রিয় রাজনীতির বাইরে।
এই পটভূমিতে মুকুল রায়ের রহস্যময় দিল্লি আগমন নিয়ে যথারীতি তুমুল হৈচৈ শুরু হয়েছে। দিল্লিতে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতারা অবশ্য কেউই মুকুল রায়কে নিয়ে অন রেকর্ড বা অব দ্য রেকর্ড মুখ খুলছেন না।
শুধু একটি শব্দ টুইট করেছেন পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি নেতা ও অধ্যাপক অনুপম হাজরা – সেটি হলো ‘প্রত্যাবর্তন’।
সত্যজিৎ রায়ের ফেলুদা সিরিজের বিখ্যাত ছবি ‘সোনার কেল্লা’য় জাতিস্মর বালক মুকুলকে নিয়ে সাইকিয়াট্রিস্ট হেমাঙ্গ হাজরা যখন রাজস্থানে যাচ্ছিলেন, তখন এক ভন্ড ডক্টর হাজরা ও তার সঙ্গী মুকুলকে অপহরণ করে নিয়েছিল।
ভারতের রাজনীতিতে ডক্টর (অনুপম) হাজরার দলবল আরও একবার মুকুলকে ‘কিডন্যাপ’ করে ফেললো কি না, সেই প্রশ্নেই এখন সরগরম দিল্লির রাজনীতি।
