বার্তাকক্ষ ,,সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ছাড়া বর্তমানে এক মুহূর্তও কল্পনা করা যায় না। আর কিশোরদের মধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমনির্ভরতা অনেক বেশি। তবে এ বিষয়টি অভিভাবকের মনে উদ্বেগ তৈরি করেছে। বিভিন্ন দেশের নিয়ন্ত্রক সংস্থার তোপের মুখে পড়ছে মাধ্যমগুলো। সামগ্রিকভাবে তাই বিভিন্ন প্লাটফর্ম অনলাইনে সময় কাটানো নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন টুল চালু করে আসছে। মূলত প্লাটফর্মের আগের ধারা ফিরিয়ে আনতে এর বিকল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে নেই। খবর ফ্রিমালয়েশিয়াটুডে।মেটা মালিকানাধীন ইনস্টাগ্রাম রাইট টু ডিসকানেক্ট ফিচার নিয়ে কাজ করছে। কোয়াইট মোড ফিচারের মাধ্যমে প্লাটফর্মটি ব্যবহারকারীদের নোটিফিকেশন মিউট করার সুবিধা দিয়ে থাকে।
মোডটি একবার চালু হয়ে গেলে কোনো গ্রুপ বা ব্যক্তিগত মেসেজের নোটিফিকেশন ব্যবহারকারীর কাছে আসবে না। তবে যে বা যারা মেসেজ পাঠাবে তাদের কাছে স্বয়ংক্রিয়ভাবে রিপ্লাই মেসেজ চলে যাবে। ব্যবহারকারী যখন পরবর্তী সময়ে কোয়াইট মোড বন্ধ করবে তখন সব মেসেজ বা নোটিফিকেশনের সামারি দেখানো হবে।ইনস্টাগ্রাম আরো জানায়, রাতে নির্দিষ্ট সময়ের বেশি প্লাটফর্মে থাকলে কিশোর ব্যবহারকারীদের কাছে মোডটি চালু করার জন্য প্রম্পট আপ পাঠানো হবে। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, আয়ারল্যান্ড, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের ব্যবহারকারীদের জন্য ফিচারটি চালু রয়েছে। পর্যায়ক্রমে বিশ্বের অন্যান্য দেশে ফিচারটি চালু করা হবে বলে সূত্রে জানা গেছে। এছাড়া ছবি শেয়ারিংয়ের প্লাটফর্মটি ব্যবহারকারীদের প্রতিদিনের জন্য স্ক্রিনটাইম লিমিটের সুবিধা দিয়ে থাকে। এটি ব্যবহারের জন্য প্রোফাইলের নিচে থাকা ড্রপডাউন মেন্যুতে থাকা ইওর অ্যাক্টিভিটি ট্যাবে প্রবেশ করতে হবে। এরপর সেখানে থাকা টাইম স্পেন্ট অপশনে যেতে হবে। সেখানে ব্যবহারকারীরা প্রতিদিনের জন্য স্ক্রিনটাইম লিমিট নির্ধারণ করতে পারবে। প্রতিদিন স্ত্রিনটাইমের নির্দিষ্ট সময় পেরোনোর পর অ্যাপ স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ করে দেয়ার অপশনও পাওয়া যাবে। ব্যবহারকারীরা ১৫, ৩০, ৪৫ মিনিট, ১ ঘণ্টা ও ২ ঘণ্টা পর অ্যাপ বন্ধ হয়ে যাওয়ার শিডিউল করতে পারবে। এছাড়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমটি প্রতি ১০, ২০ ও ৩০ মিনিট পর ব্যবহারকারীদের বিরতি নেয়ার নোটিফিকেশন দিয়ে থাকে।
ইনস্টাগ্রাম ছাড়াও ফেসবুকে কোয়াইট মোড ও ডেইলি টাইম রিমাইন্ডার চালুর পাশাপাশি নিয়ন্ত্রণের সুবিধাও দিচ্ছে মেটা। নির্ধারিত সময়ের বাইরে ৫ মিনিট অতিরিক্ত কাটানোর জন্যও রিমাইন্ডার সেট করা যাবে।
স্ন্যাপের মালিকানাধীন স্ন্যাপচ্যাটে অনলাইনে ব্যয় করা সময় নিয়ন্ত্রণে ফিচার এখনো চালু হয়নি। তবে কোন ধরনের নোটিফিকেশন গ্রহণ করা হবে তা নিয়ন্ত্রণের সুবিধা ব্যবহারকারীদের হাতে রয়েছে। এর জন্য ব্যবহারকারীদের সেটিংস থেকে প্রোফাইলে প্রবেশ করতে হবে। এর নোটিফিকেশন অপশনে প্রবেশ করে ডিজেবল করা যাবে। আরো বেশি নিয়ন্ত্রণ আরোপের জন্য ব্যবহারকারীদের স্মার্টফোনের সেটিংস থেকে অ্যাপের স্ক্রিনটাইম নির্ধারণ করতে হবে। ফলে নির্দিষ্ট সময় শেষে অ্যাপটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ হয়ে যাবে।
চীনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোর মধ্যে টিকটক সবচেয়ে বেশি তোপের মুখে রয়েছে। ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত তথ্যের পাশাপাশি স্ক্রিনটাইমের হিসেবে টিকটক নিয়ে অভিভাবক ও নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো অভিযোগ জানিয়ে আসছে। সম্প্রতি প্লাটফর্মটি ১৮ বছরের কম বয়সীদের জন্য স্ক্রিনটাইম লিমিট ৬০ মিনিট করার ঘোষণা দিয়েছে। এ সময় শেষ হওয়ার পর যদি কোনো কিশোর প্লাটফর্মটি ব্যবহার করতে চায় তাহলে পাসওয়ার্ড দিতে হবে। মূলত এরপর টিকটক ব্যবহার করতে হলে অভিভাবকের সঙ্গে আলোচনা ও অনুমতি নিতে হবে।
টিকটক দাবি করেছে, এ ফিচার পরীক্ষার প্রথম মাসে স্ক্রিন টাইম ম্যানেজমেন্ট টুল ব্যবহার ২৩৪ শতাংশ বেড়েছে। কিশোর-কিশোরীদের ইনবক্সে প্রতি সপ্তাহে স্ক্রিন টাইমের একটি নোটিফিকেশন পাঠানো হবে। এতে তারা বুঝতে পারবে, কতটা সময় এ অ্যাপে ব্যয় করেছে।টিকটক বলছে, একাডেমিক গবেষণা ও বোস্টন চিলড্রেনস হাসপাতালের ডিজিটাল ওয়েলনেস ল্যাবের বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে পরামর্শ করে সময়সীমা নির্ধারণের পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।
টিকটকের ট্রাস্ট ও সেফটি প্রধান করম্যাক কিনান এক বিবৃতিতে বলেছেন, যদিও স্ক্রিনে কতটুকু সময় দিলে তা ‘অত্যধিক’ হয় সে বিষয়ে কোনো সমষ্টিগত সিদ্ধান্ত নেই। যেহেতু কিশোর-কিশোরীরা স্বাধীনভাবে অনলাইন বিশ্ব অন্বেষণ শুরু করেছে, তাদের বাড়তি খেয়ালের প্রয়োজন রয়েছে।টিকটকের ৬০ মিনিটের এ সময়সীমা ১৩ বছরের কম বয়সী বাচ্চাদের জন্যও প্রযোজ্য হবে। তারা আলাদা অ্যাপ ‘টিকটক ফর ইয়ঙ্গার ইউজার’ ব্যবহার করবে। যদি এতে স্ক্রিন টাইম শেষ হয়ে যায়, অতিরিক্ত আরো ৩০ মিনিট চালু করতে তাদের অভিভাবককে পাসকোড দিতে হবে।
স্লিপ রিমাইন্ডার নামেও ফিচার চালু করেছে প্লাটফর্মটি। ফিচারটি অ্যাপের ভেতরেই ব্যবহারকারীদের ঘুমানোর সময়ের বিষয়ে জানাবে। সে সময় ব্যবহারকারীর কাছে অ্যাপ বন্ধ করে ঘুমাতে যাওয়ার নোটিফিকেশন আসবে।