দেশের নদীগুলোর অবস্থা যে শোচনীয়, তা নদীর সার্বিক চিত্র পর্যবেক্ষণ করলেই বোঝা যায়। এর পেছনে দখলদারিত্ব থেকে শুরু করে নানা অনিয়ম জড়িত। চট্টগ্রামের লাইফ লাইন কর্ণফুলী নদীতে দখল ও দূষণের মহোৎসব চলছে। কোনোভাবেই যেন থামছে না এ প্রতিযোগিতা। সর্বোচ্চ বিচারালয়কে এখানে হস্তক্ষেপ করতে হয়েছে বারবার। কর্ণফুলী নদীর সীমানায় মাটি ভরাট ও দখল, নির্মাণকাজ বন্ধে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে চট্টগ্রামের জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (চউক) চেয়ারম্যান ও সিটি করপোরেশনের মেয়রকে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। পাশাপাশি কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ ও পূর্ব পাড় দখল করে সব অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ বন্ধ করে সিএস এবং আরএস খতিয়ান অনুযায়ী বিশেষ সীমানা জরিপ করে ৩ মাসের মধ্যে আদালতে উপস্থাপনের আদেশ দেন বিচারপতি মো. মোস্তফা জামান ইসলাম এবং বিচারপতি মো. আতাবুল্লাহর বেঞ্চ। গত মঙ্গলবার উচ্চ আদালত রুল জারি করে এ নির্দেশনা দেন। কর্ণফুলী রক্ষায় এর আগেও হাইকোর্ট রায় দিলেও সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এসব বিষয় তোয়াক্কা করেনি। এক গবেষণার তথ্যানুযায়ী, বঙ্গোপসাগরের মোহনা থেকে কাপ্তাই পর্যন্ত কর্ণফুলীর দুই তীরে ৫২৮ প্রজাতির উদ্ভিদ শনাক্ত হয়েছে, যার মধ্যে ৮১ প্রজাতির উদ্ভিদ বিলুপ্তির হুমকির মুখে। দূষণ ঠেকাতে কার্যকর উদ্যোগ না নিলে আরো ৬১ প্রজাতির উদ্ভিদ বিপন্ন হয়ে যাবে। দূষণের জন্য ৩০টি কারণ শনাক্ত করা হয়েছে। কর্ণফুলী নদীতে ৮৫টি মার্চেন্ট জাহাজ, ৪০৫টি কোস্টাল জাহাজ, ২৬৪টি মাছ ধরার ট্রলার, ৯টি টাগবোটসহ অনেক বিদেশি জাহাজ, ট্রলার, সাম্পান, ছোট নৌকা চলাচল করে। এসব নৌযানের ময়লা, পোড়া তেল সরাসরি নদীতে ফেলা হয়। এছাড়া বন্দর কর্তৃপক্ষ মাছ বাজার উচ্ছেদ না করে নতুন করে বরফ কল স্থাপনের জন্য কর্ণফুলী নদীর মাঝখানে শাহ আমানত ব্রিজের মাঝ পিলার বরাবর ২০০০ বর্গফুট নদী নতুন করে লিজ দিয়েছে, যা সরাসরি মহামান্য হাইকোর্টের আদেশের লঙ্ঘন। কর্ণফুলীকে জীবন্ত সত্তা ঘোষণা দিলেও সেই আদেশ লঙ্ঘন করে দখল আর দূষণের মাধ্যমে নদীকে হত্যা করা হচ্ছে। বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। এই নদীর সঙ্গে ২ কোটির বেশি মানুষের জীবন-জীবিকা জড়িত। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন ২০১৪ সালের ৯ নভেম্বর কর্ণফুলীর দুই তীরে সীমানা নির্ধারণ করে। জরিপে কর্ণফুলী নদীর দুই তীরে প্রায় আড়াই হাজার অবৈধ স্থাপনা চিহ্নিত করা হয়। এরপর বড় পরিসরে ও কয়েকটি সংস্থার সমন্বয়ে কর্ণফুলীর পাড়ে অবৈধ স্থাপনার বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। কিন্তু অভিযান চললেও আশানুরূপ কোনো সাফল্য আমরা দেখিনি। কর্ণফুলী রক্ষা করতে একটি মহাপরিকল্পনাও নেয়া হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবায়ন শুরু না হওয়ায় তা কাগজে-কলমেই সীমাবদ্ধ রয়ে গেছে। দখলে-দূষণে বিপর্যস্ত কর্ণফুলী হারাচ্ছে স্বাভাবিক নাব্য। নদীর পানি ধারণক্ষমতা অনেক কমে গেছে। নদীর তলদেশ উঁচু হয়ে যাওয়ায় বন্যা ও জোয়ারের পানি নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত করছে। কর্ণফুলীর স্বাভাবিক প্রবাহ ব্যাহত হওয়ায় চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতার ওপর মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। যেভাবেই হোক কর্ণফুলী নদী দখল ও দূষণমুক্ত করতে হবে। এ বিষয়ে অবিলম্বে সরকারের জোরালো পদক্ষেপ দেখতে চাই। কারণ চট্টগ্রামকে বাঁচাতে হলে কর্ণফুলীকে বাঁচাতেই হবে।

সাম্প্রতিক সংবাদ
তথ্য প্রযুক্তি
দেশে তৈরি প্রথম ল্যাপটপ উন্মোচন ইনফিনিক্সের
প্রতিদিনের ডেস্কপ্রথমবারের মতো বাংলাদেশের বাজারে ল্যাপটপ উন্মোচন করেছে ইনফিনিক্স। ব্র্যান্ডটির নতুন ল্যাপটপ ইনবুক ওয়াই...
তথ্য প্রযুক্তি
চলতি মাসেই গ্যালাক্সি বুক ৪ আনবে স্যামসাং
প্রতিদিনের ডেস্ক
দুই সপ্তাহের মধ্যে মিটিয়র লেক প্রসেসর উন্মোচন করতে পারে ইন্টেল। এর সঙ্গে গ্যালাক্সি...
তথ্য প্রযুক্তি
ফেসবুক-মেসেঞ্জারে এনক্রিপশন সুবিধা চালু করছে মেটা
প্রতিদিনের ডেস্ক
ফেসবুক ও মেসেঞ্জারের সব ব্যক্তিগত কথোপকথন ও কলের জন্য এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপশন ফিচার আনছে...
বিশেষ প্রতিবেদন
বিয়োগান্তক প্রেমের স্মারক ‘বাকরখানি’
ফারিহা আজমিন
হাল জামানার ধরন অনুসারে দ্রুতই বদলাচ্ছে মানুষের রুচি। পুরোনো দিনের অনেক কিছুই হারাতে...
এধরণের সংবাদ আরো পড়ুন
সম্পাদকীয়
নির্বাচন নির্বিঘ্নে করতে অস্ত্র উদ্ধার জরুরি
আগামী শনিবার থেকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নির্বিঘ্ন করতে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও চিহ্নিত...
সম্পাদকীয়
শিশুশ্রম বন্ধে সম্মিলিত প্রয়াস জরুরি
শিশুশ্রম রোধে সরকারি-বেসরকারি কোনো উদ্যোগ যেন কাজে আসছে না। দিন দিন যেন শিশু শ্রমিকের...
সম্পাদকীয়
কী হবে এই সংঘাতের ভবিষ্যৎ
গাজায় আবারো জোরেশোরে হামলা শুরু করেছে ইসরায়েল। যুদ্ধবিরতির পর তিন দিন ধরে গাজায় হামলা...