প্রতিদিনের ডেস্ক॥সারাদেশে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর লাগাতার হরতাল-অবরোধে সহিংসতা ও অগ্নিসংযোগের প্রেক্ষাপটে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা বিবেচনায় ৪৫তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা পেছাতে দ্বিতীয় দফায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বরাবর লিখিত আবেদন করেছেন প্রিলিমিনারিতে উত্তীর্ণ প্রার্থীরা।
আগামী ২৭ নভেম্বর থেকে ৪৫তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা থাকলেও প্রার্থীরা বলছেন, এ অবস্থায় পরীক্ষার্থীয় অংশ নিতে শিক্ষার্থীদের ঝুঁকি নিয়ে রাস্তায় চলাচল করতে হবে। পরীক্ষা না পেছালে অনেক প্রার্থীই হয়তো অংশ নিতে পারবেন না। এতে তাদের লালিত স্বপ্নে ছেদ পড়বে।
মঙ্গলবার (২১ নভেম্বর) প্রিলিতে উত্তীর্ণ লিখিত পরীক্ষার অপেক্ষায় থাকা প্রার্থীরা সিইসি বরাবর এ আবেদনপত্র জমা দেন।
প্রার্থীরা সিইসি বরাবর আবেদনে উল্লেখ করেন, আমরা ৪৫তম বিসিএস লিখিত পরীক্ষার্থীবৃন্দ। আগামী ২৭ নভেম্বর থেকে ১১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ১৫ দিন ঢাকাসহ দেশের বিভাগীয় শহরগুলোতে ৪৫তম বিসিএস লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। এরই মধ্যে সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি) পরীক্ষার সময়সূচি প্রকাশ করেছে। একজন চাকরিপ্রার্থী ও ৪৫তম বিসিএস লিখিত পরীক্ষার্থী হিসেবে ওই সময়সূচি অনুযায়ী পরীক্ষা দিতে আমাদের কোনো আপত্তি ছিল না।
চিঠিতে তারা বলেন, তবে বর্তমানে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর টানা হরতাল-অবরোধ চলছে। তাছাড়া নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর চলমান হরতাল-অবরোধ আরও ব্যাপক ও ধ্বংসাত্মক আকার ধারণ করেছে। প্রতিদিন অসংখ্য যানবাহনে অগ্নিসংযোগ করা হচ্ছে, ট্রেনের বগিতে আগুন দেওয়া হচ্ছে। অনেক সময় খুবই স্বাভাবিকভাবে চলতে থাকা একটি এলাকায় দুর্বৃত্তরা হুট করেই অগ্নিসংযোগ করছে। বেশ কয়েকটি বিদ্যালয়েও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে।
আবেদনে আরও বলা হয়, বিসিএস লিখিত পরীক্ষাগুলো সাধারণত কর্মদিবসে এবং একটি লম্বা সময়ের জন্য অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। এখানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যাতায়াতের ক্ষেত্রে নিরাপত্তার বিষয়টি।
সেখানে পরীক্ষার্থীরা বলেন, এরই মধ্যে কুমিল্লায় ককটেল বোমা বিস্ফোরণে আহত হয়েছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মান্নানের ছেলে আকিব মাহমুদ। তিনি ৪৫তম বিসিএস লিখিত পরীক্ষার্থী। বিদ্যমান অরাজকতার শিকার হয়ে তিনি লিখিত পরীক্ষা থেকে ছিটকে গেছেন। এছাড়া গত ১৮ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ে ককটেল বিস্ফোরণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সূর্য সেন হলের ছাত্র মঈনুল ইসলাম মারাত্মকভাবে আহত হন, তিনিও একজন লিখিত পরীক্ষার প্রার্থী। দীর্ঘ ১৫ দিনের পরীক্ষায় এমন অপ্রীতিকর ও অনাকাঙ্ক্ষিত অবস্থার শিকার হতে পারেন অসংখ্য পরীক্ষার্থী।
চিঠিতে চলমান হরতাল-অবরোধের ভয়াবহ চিত্র উল্লেখ করা হয়। সংকটময় এ পরিস্থিতিতে জেলা শহরের পরীক্ষার্থীদের একটি লম্বা সময় বিভাগীয় শহরে অবস্থান করতে হয়। রাজধানীর পরিস্থিতি তেমন উদ্বেগের নয়। তবে চট্টগ্রাম, সিলেট, রাজশাহীসহ বিভাগীয় শহরগুলো থেকে প্রতিনিয়ত নাশকতার খবর আসছে। ঢাকার পার্শ্ববর্তী জেলাগুলোর শিক্ষার্থীরা মূলত এসময়ে আত্মীয়-স্বজনের বাসা, হল বা হোটেলে থেকে পরীক্ষায় অংশ নেন। কিন্তু বর্তমান প্রেক্ষাপট বিবেচনায় আবাসিক হোটেলগুলোতে নিরাপত্তা ও পুলিশি তৎপরতার কারণে সবার মাঝে এক ধরনের ভীতিকর অবস্থা বিরাজ করছে।
চিঠিতে বলা হয়, পরীক্ষার্থীদের মধ্যে কেউ গর্ভবতী, কেউ হয়তো বাচ্চাকে পরীক্ষাকেন্দ্রের সামনে রেখে পরীক্ষা দিতে আসবেন। হরতাল-অবরোধের এই পরিস্থিতিতে তাদের পরিবার কিছুতেই চাচ্ছে না এসময়ে পরীক্ষা হোক। যদি ২৭ নভেম্বর পরীক্ষা শুরু হয়, তবে এই প্রার্থীদের লালিত স্বপ্নের হয়তো এখানেই পরিসমাপ্তি ঘটবে।
কবির হোসেন নামে একজন প্রার্থী বলেন, পরীক্ষাটা একদিন নয়, ৭-৮ দিন ধরে হবে। রাস্তায় গণপরিহনও সংকট। বিভাগীয় শহরে পরীক্ষা হলেও সেখানে জেলা পর্যায় থেকে বা উপজেলা থেকে কেন্দ্রে পৌঁছানো চরম ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যাবে। আর হরতাল-অবরোধে পরীক্ষা দিতে বের হলে আমরা অবরোধকারীদের টার্গেটেও পরিণত হয়ে যেতে পারি। তারা মিডিয়া কভারেজ পেতে আমাদের ওপর হামলা করতেও দ্বিধা করবে না বলে আশঙ্কা করছি। সার্বিক দিক বিবেচনায় আমরা পরীক্ষা পেছানোর জোর দাবি জানাচ্ছি।
রোজিনা রেখা নামে আরেকজন প্রার্থী বলেন, পিএসসি অনড়। তারা আমাদের আকুতি শুনছেই না। এজন্য আমরা আগে একবার নির্বাচন কমিশনে গিয়ে স্মারকলিপি দিয়েছি। যারা ঢাকায় আছি, তারা সারাদেশের প্রার্থীদের পক্ষে আজ মঙ্গলবার আবারও সিইসি বরাবর লিখিত আবেদন দিলাম।
বিসিএস লিখিত পরীক্ষা স্থগিতে ইসিতে দুই দফায় চিঠি দেওয়ার প্রসঙ্গে সংস্থাটির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, ইসিতে যে কেউ চিঠি দিতে পারে। আমরা এই চিঠি নিয়ে পরে কমিশনে আলোচনা করবো।
এর আগে গত রোববার (১৯ নভেম্বর) সিইসি বরাবর লেখা একটি আবেদনপত্র নির্বাচন কমিশনে সশরীরে হাজির হয়ে জমা দেন প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে লিখিত পরীক্ষায় অংশ নিতে অপেক্ষায় থাকা কয়েকজন প্রার্থী।
পিএসসির পরীক্ষা শাখার (ক্যাডার) একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, পরীক্ষা পেছানোর কোনো পরিকল্পনা পিএসসির নেই। আমাদের প্রশ্নপত্র তৈরির কাজ শেষ। ২৭ নভেম্বর থেকেই পরীক্ষা শুরুর জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। তবে ইসি অনুরোধ করলে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে।
এ বিষয়ে পিএসসি চেয়ারম্যান সোহরাব হোসাইন বলেছেন, ‘নির্বাচন কমিশন থেকে এখনো আমাদের কিছু জানানো হয়নি। কারা আবেদন করেছেন, কতজন আবেদন করেছেন; সেটাও জানি না। তবে প্রার্থীদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে এটুকু বলতে পারি—দেশের সার্বিক পরিস্থিতি যদি আরও বেশি খারাপের দিকে যায়, সেক্ষেত্রে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। আর এরমধ্যে ইসি যদি কোনো চিঠি দেয়, সেটাও বিবেচনায় নেওয়া হবে।’
গত ৬ জুন ৪৫তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়। এতে মোট ১২ হাজার ৭৮৯ জন ৪৫তম বিসিএসের প্রিলিতে উত্তীর্ণ হয়েছেন। ৪৫তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষার রুটিন অনুযায়ী টেকনিক্যাল ক্যাডার ও উভয় ক্যাডারের বাংলা প্রথমপত্র পরীক্ষা হবে ২৭ নভেম্বর। সাধারণ ক্যাডার ও উভয় ক্যাডারের প্রার্থীদের বাংলা দ্বিতীয়পত্র পরীক্ষা হবে ২৮ নভেম্বর।
৪৫তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা চলবে আগামী ১১ ডিসেম্বর পর্যন্ত। ৪৫তম বিসিএসের মাধ্যমে মোট দুই হাজার ৩০৯ জন ক্যাডার নেওয়া হবে। নন-ক্যাডারে নেওয়া হবে এক হাজার ২২ জন।
