হারুন-অর-রশীদ, অভয়নগর
দেশের প্রাচীণতম রেলওয়ে স্টেশন যশোরের অভয়নগর উপজেলার নওয়াপাড়ার অদূরে চেঙ্গুটিয়া রেলওয়ে স্টেশনের সরকারি পরিত্যাক্ত কোয়ার্টারসহ ডককে পতিত জমি দেখিয়ে এবং রেলওয়ের জায়গায় বিগত অর্ধশত বছরের গণ কবরকে কৃষি জমি দেখিয়ে লিজ দেয়ার প্রতিবাদে এবার এলাকাবাসী ফুঁসে উঠেছে। তারা ভূক্তভোগী পরিবারগুলোকে সাথে নিয়ে রাজপথে নেমে আন্দোলন কর্মসূচি দিতে শুরু করেছে। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে নওয়াপাড়া পৌরসভার চেঙ্গুটিয়া বাজারে এলাকাবাসীর ব্যানারে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে তারা। শতাধিক লোক এ মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশে যোগ দেয়। বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে রেলওয়ের ডক ও গণকবরের ইজারা বাতিল, ভূক্তভোগীদের উচ্ছেদের চক্রান্তসহ তাদের নামে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়। অন্যথায় বৃহৎ কর্মসূচির মাধ্যমে যশোর-খুলনা মহাসড়ক, রেল অবরোধসহ কঠোর কর্মসূচির হুশিয়ারি দিয়েছেন বক্তারা। সেই সাথে গণ কবর ও ডককে তথ্য গোপন করে লিজ গ্রহিতাদেরকেও হুশিয়ারি দিয়েছেন তারা।
গতকাল অনুষ্ঠিত মানবন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন চেঙ্গুটিয়া রথখোলা পূজা মন্দিরের সভাপতি মন্টু ঘোষ, ইসলামি আন্দোলন যশোর জেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক এইচ এম মহসিন শেখ, চেঙ্গুটিয়া বিসিসি মহিলা দাখিল মাদ্রাসার সভাপতি আলী হোসেন, চেঙ্গুটিয়া বাজার কমিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক জামির আলী মোল্যা প্রমুখ। ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর পক্ষে বক্তব্য রাখেন রেলওয়ের মৃত কর্মচারী (ওয়েম্যান) শহাজান মোল্যার স্ত্রী শাহিদা বেগম, বাবা মা হারা স্বামী পরিত্যাক্তা ভূমিহীন মিনা বেগম ও তার ভাই মামুন। মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ শেষে লিজ গ্রহিতা কর্তৃক বেঁড়া দেয়া ওই জমি থেকে বেঁড়া উপড়ে ফেলেছে উত্তেজিত জনতা। এলাকাবাসী ও ভূক্তভোগীদের অভিযোগ রেলওয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে রেলওয়ের ডক পরিত্যাক্ত জমি দেখিয়ে রেলওয়ের সদ্য অবসরপ্রাপ্ত এক কর্মচারীর ছেলেকে লিজ দিয়েছে রেলওয়ের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। লিজ গ্রহনের পর থেকে ওই ডকে ৩ প্রজন্ম থেকে বসবাস করে আসা রেলওয়ের মৃত ভূমিহীন কর্মচারীর পরিবারসহ বসবাসরত ৭টি ভূমিহীন পরিবারকে লিজ গ্রহিতা জনৈক মিরাজ উচ্ছেদের চেষ্টা চালিয়ে আসছে। এমনকি উচ্ছেদে ব্যর্থ হয়ে তিনি ওই পরিবারগুলোর সদস্যদের নামে থানায় মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানির করার অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া বিগত প্রায় অর্ধশত বছর থেকে গড়ে ওঠা চেঙ্গুটিয়া রেলওয়ে স্টেশন সংলগ্ন একটি গণ কবর কৃষি জমি দেখিয়ে ওই এলাকার আলহাজ্ব মাসুদ পারভেজ মুসা নামের এক ব্যবসায়ী লিজ নিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন বক্তারা। তাদের অভিযোগ, ওই গণ কবর লিজ নেয়ার পর তিনি স্কেভেটর দিয়ে কবরের মাটি কেটে সেখানে কৃষি কাজ শুরু করেছেন। বক্তারা আরও বলেন, গণ কবরের মাটি কেটে সরিয়ে ফেলার সময় স্কেভেটর চালকের স্কেভেটরে মানুষের মাথার খুলি ও হাড় গোড় উঠে আসলে তিনি মাটি কাটা বন্ধ করে দেন। এবং ভয়ে বেশ কিছুদিন অসুস্থ্য হয়ে পড়েন। তারা অভিযোগ করেন, সর্বশেষ ওই ডকে বসবাসরত ভুমিহীন মিনা বেগম ও মামুনের পিতা মারা গেলে ওই গণ কবরে লাশ দাফনেও বাঁধা প্রদান করা হয়। পরে এলাকাবাসীর প্রতিবাদের মুখে পিছু হটেন লিজ গ্রহিতা আলহাজ্ব মাসুদ পারভেজ মুসা।
নওয়াপাড়ায় রেলওয়ের ডক ও গণকবর ইজারা দেয়ায় ফুঁসে উঠেছে এলাকাবাসী
Published on
