বার্তাকক্ষ ভিয়েতনামে আরো শতকোটি ডলার অতিরিক্ত বিনিয়োগ করতে যাচ্ছে এলজি ও স্যামসাং। মঙ্গলবার ভিয়েতনাম সরকারের বরাতে এ তথ্য নিশ্চিত হয়েছে। খবর রয়টার্স।বৈশ্বিক চাহিদায় শ্লথগতির ফলে ভিয়েতনামে স্মার্টফোন উৎপাদন কমিয়ে নিচ্ছে স্যামসাং। সম্প্রতি এ রকম একাধিক প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে নতুন বিনিয়োগপ্রাপ্তির ঘোষণা দিয়েছে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার তৃতীয় বৃহৎ অর্থনীতিটি।
ভিয়েতনামে একক কোম্পানি হিসেবে শীর্ষ বিনিয়োগকারী কোম্পানি স্যামসাং ইলেকট্রনিকস। ভিয়েতনামের এক সরকারি সূত্র রয়টার্সকে জানায়, স্যামসাং ২ হাজার কোটি ডলার বিনিয়োগ করতে যাচ্ছে। এর আগে বলা হচ্ছিল, দক্ষিণ কোরিয়াভিত্তিক প্রযুক্তি জায়ান্টটি ১ হাজার ৮০০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করবে।
এ ব্যাপারে স্যামসাংয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা মন্তব্যে অপারগতা প্রকাশ করে। বিষয়সংশ্লিষ্ট এক সূত্র মঙ্গলবার জানায়, চলতি বছরের শেষ নাগাদ এ অর্থ বিনিয়োগ করা হবে।
কয়েক বছর ধরেই স্যামসাংয়ের প্রায় অর্ধেক ভিয়েতনামে উৎপাদন হয়। দেশটির মোট রফতানির এক-পঞ্চমাংশের প্রতিনিধিত্ব করে স্যামসাং। ভিয়েতনাম সরকার থেকে বলা হচ্ছে, নুতন বিনিয়োগের ফলে স্যামসাংয়ের গুরুত্বপূর্ণ কারখানাগুলোর উৎপাদন চাঙ্গা হবে। সিউলে গতকাল সফররত ভিয়েতনামের প্রেসিডেন্ট এনগুইয়েন জুয়ান ফুকের সঙ্গে এক বৈঠকে মিলিত হন স্যামসাংয়ের শীর্ষ নির্বাহী হান জং-হি। এ বৈঠক শেষেই ভিয়েতনাম সরকারের কাছ থেকে নতুন ঘোষণা এসেছে।
রোববার তিনদিনের সফরে দক্ষিণ কোরিয়া এসেছেন ভিয়েতনামের প্রেসিডেন্ট। ১১ বছর পর সিউল এলেন কোনো ভিয়েতনামি প্রেসিডেন্ট। চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মতো বৃহৎ বাণিজ্য অংশীদারদের ওপর নির্ভরশীলতা কমানোর প্রয়াস দেখা যাচ্ছে দক্ষিণ কোরিয়া ও ভিয়েতনামের পক্ষ থেকে। সোমবার সিউলে ভিয়েতনামের প্রেসিডেন্ট এনগুইয়েন জুয়ান ফুকের সঙ্গে এক বৈঠক শেষে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইয়ুন সুক-ইয়ুল বলেন, পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে ৩০ বছর ধরে কোরিয়া ও ভিয়েতনাম সম্পর্ক জোরদার করে আসছে।
দক্ষিণ কোরিয়ার শীর্ষ কোম্পানির অনুসরণে ভিয়েতনামে বিনিয়োগ বাড়াচ্ছে আরেক কনগ্লোমারেট এলজি। গৃহস্থালি ইলেকট্রনিক পণ্য, ক্যামেরা ও গাড়ির যন্ত্রাংশ উৎপাদনে ভিয়েতনামে এলজি এরই মধ্যে ৫৩০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করেছে। নতুন বিনিয়োগের ব্যাপারে মন্তব্যে বিরত থেকেছে তারা।
গত সোমবার নিজেদের মধ্যে কমপ্রিহেনসিভ স্ট্র্যাটেজিক পার্টনারশিপের ঘোষণা দিয়েছে ভিয়েতনাম ও দক্ষিণ কোরিয়া। ভিয়েতনামের এ ধরনের অংশীদারত্ব রয়েছে কেবল চীন, রাশিয়া ও ভারতের সঙ্গে। ২০২৩ সালে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ১০ হাজার কোটি ডলারে নিয়ে যেতে চায় দক্ষিণ কোরিয়া ও ভিয়েতনাম। ২০৩০ সালের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ১৫ হাজার কোটি ডলারে নিয়ে যাওয়ার জন্য কাজ করছে দেশ দুটি। ২০২১ সালে যেখানে তাদের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য হয়েছে ৭ হাজার ৮০০ কোটি ডলারের।
গত এক দশকে ইলেকট্রনিকস কোম্পানিগুলোর জন্য আকর্ষণীয় গন্তব্য হিসেবে দাঁড়িয়েছে ভিয়েতনাম। কিন্তু বৈশ্বিক চাহিদায় পতনে চলতি বছরে উৎপাদন কমাতে বাধ্য হয়েছে বিভিন্ন কোম্পানি।
গত আগস্টে নিক্কেই এশিয়ার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ভিয়েতনামে অ্যাপল ওয়াচ ও ম্যাকবুক উৎপাদন চালুতে আলোচনা চালাচ্ছে অ্যাপল। চীননির্ভরতা কমানো এবং উৎপাদনে বৈচিত্র্য আনার লক্ষ্যে ভিয়েতনামে অ্যাপল পণ্য উৎপাদনে জোর দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রযুক্তি জায়ান্টটি।
ভিয়েতনামের উত্তরাঞ্চলীয় কারখানায় পরীক্ষামূলকভাবে অ্যাপল ওয়াচ তৈরি শুরু করেছে অ্যাপলের সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান লাক্সশেয়ার প্রিসিজন ইন্ডাস্ট্রি ও ফক্সকন। প্রথমবারের মতো চীনের বাইরে অ্যাপল ওয়াচ তৈরি করল চুক্তিভিত্তিক নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলো। বিষয় সম্পর্কে অবগত তিনটি সূত্র নিক্কেই এশিয়াকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
চীনের বাইরে অ্যাপলের গুরুত্বপূর্ণ উৎপাদন কেন্দ্র হিসেবে আগে থেকেই আস্থা অর্জন করেছে ভিয়েতনাম। এতদিন ভিয়েতনাম কারখানাগুলোয় আইপ্যাড ট্যাবলেট ও এয়ারপড ইয়ারফোন তৈরি হয়ে আসছিল।
সাংহাইয়ে কভিড-১৯ সংক্রান্ত লকডাউনের সময়েই আইপ্যাড উৎপাদনের কাজ ভিয়েতনামে সরিয়ে আনতে শুরু করে অ্যাপল। চীনে অ্যাপলের সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান বিওয়াইডি এতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। তবে সূত্রগুলো নিক্কেই এশিয়াকে জানায়, ভিয়েতনামে আইপ্যাড উৎপাদন বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে অ্যাপলের শীর্ষ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ফক্সকন।
