সেলিম উদ্দিন, মহেশপুর
ঝিনাইদহের মহেশপুরের খালিশপুর গ্রামের কপোতাক্ষ নদের পাশে এখনও কালের সাক্ষী হয়ে দাড়িয়ে আছে ইংরেজ শাসন আমলের অভিশপ্ত নিদর্শন নীলকুঠি। এই নদ দিয়েই নৌকায় মহেশপুরে আসত ইংরেজরা। আঠারো শতকের শুরুর দিকে কোটচাঁদপুর দুতিয়ার কাঠি কুঠির মালিক মি. ব্রিজবেন মহেশপুরের খালিশপুরের কপোতাক্ষ নদের তীরে কুঠিরটি স্থাপন করেন।
দক্ষিণমুখি এই ভবনের দৈর্ঘ্য ১২০ ফুট, প্রস্থ ৪০ ফুট ও উচ্চতা ৩০ ফুট। দক্ষিণ দিকে রয়েছে প্রসস্ত বারান্দা। ১২টি কক্ষ বিশিষ্ট দ্বিতল ভবন এটি। নিচের তলা থেকে উপরের তলার কক্ষগুলো আয়তনে বড়। চুন, শুড়কি ও পাকা ইটের তৈরী এই ভবনটি। কুঠিরের নিচ তলায় ছিল নীল চাষের খাজনা আদায় ও নির্যাতন কক্ষ। দ্বিতীয় তলায় আদায়কারীরা রাত্রিযাপন করতেন। বিশ্রাম ও গোসল করার জন্য নির্মিত পাকা সিঁড়ি কপোতাক্ষ নদীর তীর পর্যন্ত নামানো। এখানে ১৮১০ সাল থেকে ১৮৫৮ সাল পর্যন্ত নীলকর সাহেবরা নীল চাষ পরিচালনা করতো। এলাকার কৃষকদের মাধ্যমে নীল চাষ করে পাঠানো হতো ইংল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশে। দিনের পর দিন অত্যাচারে মাত্রা বাড়াতে থাকে ইংরেজরা। যারা নীলচাষ করত না তাদের এই কুঠিতে এনে করা হতো নির্যাতন। কুঠির সামনে থাকা গাছে বেঁধে চলতো অমানষিক নির্যাতন। গ্রাম থেকে নারীদের ধরে এনে রাখা হতো কুঠির কক্ষগুলোতে। উপমহাদেশে নীল বিদ্রোহের সূচনা হওয়ার পর অন্যান্য নীলকুঠির মত এ নীলকুঠিটিও রেখে চলে যান ইংরেজরা। পরবর্তীতে স্থানীয় জমিদাররা এটি তাদের কাছারি হিসেবে ব্যবহার করতে থাকে। ১৯৪৭ সালে ভারত বিভক্তির সময় তৎকালীন নীলকুঠির মালিক জমিদারও জায়গাটি ছেড়ে চলে যান। এরপর থেকে দীর্ঘদিন ধরে পরিত্যাক্ত রয়েছে স্থানটি। প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর এটিকে প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা হিসেবে নথিভুক্ত করলেও এখনও সংস্কারের কোন উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। স্থানটি দর্শনীয় করতে দ্রুত সংস্কার করার দাবী স্থানীয়দের।
মহেশপুর বীর শ্রেষ্ট হামিদুর রহমান কলেজের শিক্ষক ওমর ফারুক বলেন, এখানে নীল চাষের খাজনা আদায় করা হতো। যারা নীলচাষ করত না তাদের এই কুঠিতে এনে নির্যাতন করা হতো। আরেক শিক্ষক শাহীনুর রহমান বলেন, নীলকুঠি পরিত্যাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর এটিকে দ্রুত সংস্কার করে পরবর্তী প্রজন্মের নিকট তুলে ধরার আহ্বান জানান। শিক্ষক আব্দুর রহমান বলেন, ইংরেজরা নূলকুটি এলাকায় মানুষের নির্যাতন করতো। আর সেই ইতিহাস সকলের নিকট তুলে ধরতে হবে। সরকার স্থানটি দ্রুত সংকারের করুক এটাই এলাকাবাসীর দাবী। এ ব্যাপারে ঝিনাইদহ-৩ আসনের সংসদ সদস্য এ্যাড.শফিকুল আজম খান চঞ্চল বলেন, স্থানটিতে ইকো পার্ক তৈরীর জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। ইকো পার্ক তৈরী করার পর মানুষকে আকৃষ্ট করার জন্য যা প্রয়োজন তা সরকারের পক্ষ থেকে গ্রহন করা হয়েছে।