দেশের চিকিৎসাব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। চিকিৎসা খাতে রীতিমতো নৈরাজ্য বিরাজ করছে। একদিকে মানুষ ঠিকমতো চিকিৎসাসেবা পাচ্ছে না, অন্যদিকে ভুল চিকিৎসা ও ভুয়া চিকিৎসকের দৌরাত্ম্য মারাত্মকভাবে বেড়েছে। এক প্রতিবেদনে প্রকাশ, সারা দেশের ভুয়া চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের সভাপতি ও পুলিশ মহাপরিদর্শককে এই নির্দেশ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে। আদেশ বাস্তবায়ন করে আগামী তিন মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। ভুয়া চিকিৎসক নিয়ে বিভিন্ন সময়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন যুক্ত করে গত ২৯ নভেম্বর জনস্বার্থে রিট দায়ের করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জে আর খান রবিন। বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল আইন ২০১০-এর ২৮(৩) ও ২৯(২) ধারায় ভুয়া চিকিৎসকদের সাজা ৩ বছরের বিধান রয়েছে। এই সাজার পরিমাণ বাড়ানোর দাবি জানানো হয় রিটে। আইনজীবী জে আর খান রবিন বলেন, সংবিধানের ১৫ (ক) ও ১৮(১) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী স্বাস্থ্যসেবা ও জনস্বাস্থ্যের কথা উলেস্নখ থাকলেও অনুচ্ছেদ ৩১ ও ৩২ অনুযায়ী মানুষের জীবন ও স্বাস্থ্যসেবা একটি মৌলিক অধিকার। এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না, মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে ডাক্তারদের ভূমিকা অপরিসীম। কিন্তু বর্তমানে অনেক ভুয়া ডাক্তার নিজেকে ডাক্তার পরিচয় দিয়ে মানুষের সঙ্গে প্রতিনিয়ত প্রতারণা করছে। শুধু তাই নয়, দেশের সাধারণ মানুষ এসব ভুয়া ডাক্তারদের শরণাপন্ন হয়ে প্রতিনিয়ত প্রতারণার শিকার হচ্ছে। এর আগে অনুমোদন ছাড়াই চিকিৎসাসেবা দেওয়ার অভিযোগে রাজধানীর ছয়টি এলাকায় অভিযান চালিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। অনুমোদনহীন হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করেছে। যেসব প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধন আছে অথচ প্রতিষ্ঠান পরিচালনার সব শর্ত মানছে না, পরিস্থিতির উন্নতি করার জন্য তাদের তিন মাস সময় দিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। তিন মাস হয়ে যাওয়ায় নির্ধারিত সময়ের মধ্যে যারা নিয়ম মেনে নতুন লাইসেন্স নেয়নি বা নবায়ন করেনি, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতেই নতুন এ অভিযান চালিয়েছিল। আমরা মনে করি, কেবল অনুমোদনহীন হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বিরুদ্ধে অভিযান চালালে হবে না, অনুমোদনহীন ফার্মেসির বিরুদ্ধেও অভিযান চালাতে হবে। দেশে প্রায় দুই-আড়াই লাখ ফার্মেসি আছে। যাদের একটি বড় অংশই অনিবন্ধিত। স্বাস্থ্য খাতের মূল সমস্যা হচ্ছে পুরনো ধাঁচের ব্যবস্থাপনা। সে কারণে কোনো সংকট দেখা দিলে তাতে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিয়ে সমাধানের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু স্থায়ী কোনো পরিকল্পনা হয় না। প্রকৃত অর্থে স্বাস্থ্য বিভাগে এখন যে সংস্কার দরকার তা হলো আমূল পরিবর্তন। যদি স্বাস্থ্য খাতের আমূল পরিবর্তন করা যায় তা হলে সব ধরনের অনিয়ম-দুর্নীতি কমে আসবে।
