রাজধানীসহ দেশের নামিদামি স্কুলগুলোতে ফরম পূরণে বাড়তি ফি আদায়ের নৈরাজ্য দেখা যায়। কোনো কোনো স্কুলে এসএসসির ফরম পূরণের ক্ষেত্রে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অমান্য করে নানা ধরনের ফি আদায়েরও উদাহরণ রয়েছে। এমন চিত্র প্রতি বছর দেখা যায়। পত্রপত্রিকায় অনিয়মের খবর আসে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জোরালো কোনো ভূমিকা চোখে পড়ে না। আজ ১৮ ডিসেম্বর থেকে ২০২৩ সালের এসএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণ শুরু হবে। পরীক্ষায় অংশ নিতে শিক্ষার্থীদের ফরম পূরণে প্রতি পত্রের ফি ১০ টাকা বাড়ানো হয়েছে। আগে পত্রপ্রতি ১০০ টাকা ফি নেয়া হলেও এবার সে ফি করা হয়েছে ১১০ টাকা। এসএসসিতে বিভিন্ন বিষয়ে ১২টি পত্রের পরীক্ষায় অংশ নিতে হয় শিক্ষার্থীদের। সে হিসাবে ফরম পূরণে অতিরিক্ত ১২০ টাকা গুনতে হবে শিক্ষার্থীদের। আগামী ৪ জানুয়ারি পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা ফরম পূরণ করতে পারবে। গত রবিবার এসএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে ঢাকা বোর্ড। বাড়তি এ টাকা জোগাড়ে অনেক পরিবারকে হিমশিম খেতে হবে। কিন্তু বোর্ড কর্তৃপক্ষ ঘোষিত এ নিয়ম কতটুকু মানে সেটাও দেখার বিষয়। সরকারের ঘোষিত নীতিমালা উপেক্ষা করে রাজধানীর নামিদামি প্রতিষ্ঠানগুলো দ্বিগুণ-তিন গুণ ফি আদায় করে থাকে। এসএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণের ক্ষেত্রে স্কুলগুলোয় যা চলে, তা ঘোরতর অন্যায়। এ দুর্নীতি সারাদেশে সরকারি-বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সুনাম ও ভাবমূর্তি নষ্ট করছে। শুধু তাই নয়, অসচ্ছল পরিবারগুলোর ওপর অন্যায়ভাবে বাড়তি চাপ সৃষ্টির যে অপতৎপরতা, তা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। দেশে এমন পরিবারও রয়েছে, যাদের পক্ষে সন্তানের এসএসসি পরীক্ষার ফি বাবদ দেড় হাজার টাকা জোগাড় করাই কষ্টকর। এ বাস্তবতায় তাদের ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা প্রদানে বাধ্য করা যে কত যন্ত্রণাদায়ক তা সহজেই অনুমেয়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কোচিং ফি, পূজা-মিলাদ, বিদায় সংবর্ধনা, মডেল টেস্টের জন্য এ ফি নেয়া হয়ে থাকে। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, নির্বাচনী পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়েছে, এমন ছাত্রছাত্রীদেরও ফরম পূরণের সুযোগ সৃষ্টি করে দেয়া হয়। উদ্বেগের ব্যাপার হলো- দেশে আইনকানুন আছে, সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো আইনকানুন, বিধিবিধান মেনে চলছে কিনা তা দেখার জন্যও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ রয়েছে। আমরা দেখছি সেই প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা কাজ করে না। অনিয়মকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা নেয়ার ক্ষেত্রে দুর্বলতা কোথায়? এই প্রতিষ্ঠানগুলোর স্বেচ্ছাচারিতার শক্তির উৎসই বা কোথায়? আমরা চাই, স্কুল কর্তৃপক্ষ ফরম পূরণের নামে ইচ্ছামতো বাড়তি ফি যাতে আদায় না করতে পারে, তার জন্য কার্যকর ব্যবস্থা শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো নিক। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর স্বেচ্ছাচারিতা বন্ধে সরকার কঠোর হোক। অনিয়মকারীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হোক।