বছরের প্রথম দিন থেকে বই উৎসব কার্যক্রম শুরু হয়েছে। কিন্তু সব বই শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দিতে পারছে না- এমন খবর গণমাধ্যমে আসছে। শিক্ষার্থীদের হাতে নির্দিষ্ট সময়ে নতুন বই তুলে দেয়া সরকারের একটি চ্যালেঞ্জ, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। বলা যায়, নববর্ষে শিক্ষার্থীদের জন্য এটি একটি বাড়তি আনন্দের দিন। প্রত্যেক শিক্ষার্থীর হাতে নতুন বই পৌঁছানো নিশ্চিত করার মধ্য দিয়ে বই উৎসব সফল হবে- এ প্রত্যাশা আমাদের। ২০১০ সাল থেকে উৎসবের মাধ্যমে পাঠ্যবই বিতরণ করে আসছে সরকার। করোনার কারণে বিগত দুই বছর বই উৎসবে ভাটা পড়লেও এবার আগাম প্রস্তুতি নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এর আগে ঘটেছে, বই বিপণন নিয়ে নানা ঘটনা। বিনামূল্যে বিতরণের বই কালোবাজারে বিক্রি, বইয়ের সঙ্গে নোট বই কিনতে অভিভাবকদের বাধ্য করার মতো অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটেছে। অস্পষ্ট ছাপা, নিম্নমানের কাগজ ব্যবহার করা হতো এসব পাঠ্যপুস্তকে। কিন্তু ‘বর্তমানে যে ঝকঝকে ছাপা রঙিন বইগুলো শিক্ষার্থীর হাতে দেয়া হচ্ছে, তাতে শিক্ষার্থীদের বই পাঠের আনন্দ বহুগুণ বেড়ে যাবে। সদিচ্ছা থাকলে এসব অন্তরায় দূর করা যায়, সেটা প্রমাণ করেছে সরকার। প্রধানমন্ত্রী এর আগে একাধিকবার শিক্ষাকে দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার প্রধান হাতিয়ার হিসেবে অভিহিত করেছেন। এটি যে দারিদ্র্যমুক্তির কার্যকর অস্ত্র তা প্রমাণিত হয়েছে শিক্ষা বিস্তারের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দারিদ্র্যমুক্তির ঘটনায়। বিনামূল্যে পাঠ্যবই বিতরণসহ শিক্ষা খাতে বাজেটের এক উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগ যে জাতির জন্য সত্যিকার অর্থেই লাভজনক তা বাস্তবতার নিরিখেই প্রমাণিত হয়েছে। সুশিক্ষিত জাতি গড়ে তোলার লক্ষ্যে বিনামূল্যে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠ্যবই বিতরণ ও নারীদের অবৈতনিক শিক্ষার যে পদক্ষেপ সরকার নিয়েছে, তা বিশ্ব সমাজেরও প্রশংসা অর্জন করেছে। জানা গেছে, বইয়ের টেন্ডার, মান যাচাই, টাকা পয়সা, বিল-ভাউচার- সব কিছুই নিয়ন্ত্রণ করে জাতীয় কারিকুলাম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। বইয়ের ক্রেতা হলো প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এনসিটিবির মাধ্যমে বই তারা শিক্ষার্থীদের দেয়। এনসিটিবির দাবি তারা বইয়ের মালিক। অন্যদিকে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর বলে আসছে, আমরা বই কিনি, টাকা না দিলে বই ছাপা হবে না। এর সঙ্গে আরো রয়েছে পুস্তক প্রকাশক ও মুদ্রণকারীরা। এর ফলে প্রতি বছর ত্রিমুখী একটি সমস্যা তৈরি হয়। যা দীর্ঘদিন ধরেই চলছে। দেশে পাঠ্যপুস্তক প্রকাশ ও বিতরণকে ঘিরে যে কায়েমি চক্র গড়ে উঠেছিল তারা এখনো সক্রিয়। এ ক্ষেত্রে সরকারের অনমনীয় মনোভাবই প্রত্যাশিত।