১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ  । ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ 

১০ এ কত পাবেন নায়ক ফেরদৌস?

জব্বার হোসেন
জীবন এক বহতা নদী। এই বহমানতা ব্যক্তিকে কোথায় নেয়, তা হয়তো সে নিজেও জানে না। তবে চলার পথটিতে সে যদি সততা, নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সঙ্গে সময়যাপন করে, ব্যক্তি মানুষ হিসেবে তার সফলতা সেখানেই।নিজেকে সৎ, সত্যিকারের শিল্পী হিসেবে গড়ে তুলবার প্রয়াস ও সংগ্রামে ফেরদৌস নিরলস। নায়ক কিন্তু বাজে স্ক্যান্ডাল নেই। গোপন বিয়ে এবং ভিডিও নেই। সব সময়ই চেয়েছেন নিজের এবং পরিবারের কাছে স্বচ্ছ থাকতে। বাবা মায়ের শিখিয়ে দেয়া আদর্শে অটুট রাখতে নিজেকে। ঢাকার সিনেমা যখন কাটপিস নির্ভর হয়ে পড়ে, অশ্লীলতায় ছেয়ে যায়- প্রতিবাদ করেছেন। ছবি থেকে সাময়িক দূরে থেকেছেন। ন্যায় ও অন্যায়ের সীমারেখাটি ফেরদৌস দেখতে পান দিব্য চোখে। এসব কারণেই হয়তো সে দুদেশের মানুষের কাছে সমান জনপ্রিয়।
এই মুহূর্তে দেশে সবচেয়ে আলোচিত শব্দটি হচ্ছে নির্বাচন। নির্বাচনকে ঘিরেই তাবৎ রাজনৈতিক-অরাজনৈতিক আলোচনা। বিএনপি কেন নির্বাচনে এলো না, আসলে কি হতো, তবে কি আওয়ামী লীগের কৌশলের কাছে হেরে গেলো বিএনপি- সে ভিন্ন আলোচনা। হয়তো রাজনীতি বিষয়টিই এমন- টিক্সসের উপরে টিক্সস এটাই হয়তো পলিটিক্স।
তবে আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যে কয়জন প্রার্থীকে ঘিরে জনমানুষের আগ্রহ কৌতূহল রয়েছে তাদের অন্যতম একজন চিত্রনায়ক ফেরদৌস আহমেদ। হঠাৎ বৃষ্টি ছবির মতো রাজনীতির মাঠে এসেও ফেরদৌস জনমানুষের নজর কাড়তে সক্ষম হয়েছেন। তাকে ঘিরে ঢাকা-১০ আসনে সাধারণ মানুষের যে আগ্রহ ও কৌতূহল তা অবশ্যই লক্ষ্যযোগ্য। এই অবস্থানের নেপথ্যের কারণ তার অনেক কালের ‘ক্লিন ইমেজ’। এই ইমেজ তিনি একটু একটু করে গড়ে তুলেছেন, এবং অনেক দিন ধরে রেখেছেন।
ফেরদৌস এই শহরেই বড় হয়েছেন, বেড়ে উঠেছেন। ঢাকা কলেজে পড়েছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছেন। গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতায় মাস্টার্স করেছেন। সিনেমা করেছেন দুই বাংলায়। জনপ্রিয়তাও পেয়েছেন। কলকাতায় পেয়েছেন একাধিক ফিল্ম এওয়ার্ড। বাংলাদেশে ৫বার পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। নায়কদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক মুক্তিযুদ্ধের ছবিতে অভিনয় করেছেন ফেরদৌস।
তার বাবাও ছিলেন একজন মুক্তিযোদ্ধা। শিক্ষা বিভাগে চাকরি করেছেন। পরবর্তীতে ধামালকোট স্কুলের প্রধান শিক্ষক হয়েছিলেন। ঢাকা এবং কুমিল্লায় নিজ উদ্যোগে দুটো স্কুলও প্রতিষ্টা করেছেন। পাশাপাশি বরাবরই চেয়েছেন তার সন্তানরা যেন নৈতিক শিক্ষায় আদর্শিক মানুষ হিসেবে বেড়ে উঠে। গড়ে উঠে সত্যিকারের মানুষ হয়ে। ফেরদৌসের নিজের মধ্যেও সেই চেষ্টা বরাবরই ছিলো।
নিজেকে সৎ, সত্যিকারের শিল্পী হিসেবে গড়ে তুলবার প্রয়াস ও সংগ্রামে ফেরদৌস নিরলস। নায়ক কিন্তু বাজে স্ক্যান্ডাল নেই। গোপন বিয়ে এবং ভিডিও নেই। সব সময়ই চেয়েছেন নিজের এবং পরিবারের কাছে স্বচ্ছ থাকতে। বাবা মায়ের শিখিয়ে দেয়া আদর্শে অটুট রাখতে নিজেকে। ঢাকার সিনেমা যখন কাটপিস নির্ভর হয়ে পড়ে, অশ্লীলতায় ছেয়ে যায়- প্রতিবাদ করেছেন। ছবি থেকে সাময়িক দূরে থেকেছেন। ন্যায় ও অন্যায়ের সীমারেখাটি ফেরদৌস দেখতে পান দিব্য চোখে। এসব কারণেই হয়তো সে দুদেশের মানুষের কাছে সমান জনপ্রিয়।
অনেক দিনের বন্ধুত্ব এবং সর্ম্পকের কারণে ফেরদৌসের অনেক কাজের সাক্ষী আমি নিজে। আমাদের অনেক দিন, অনেক সময় কেটেছে নাটক, চলচ্চিত্র নিয়ে আড্ডা-আলোচনায়। সেখানে রাজনীতি এসেছে অনিবার্যভাবে। এসেছে মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু, বাংলাদেশ প্রসঙ্গ। মুক্তিযুদ্ধের ঘটনা নিয়ে উপন্যাস লেখার ইচ্ছে তার অনেক দিনের। দারুণ গল্প লিখতে পারেন। বলতেও পারেন। একাধিক বই বের হয়েছে। একবার আমরা দুজনে একসঙ্গে একটি বইও লিখেছিলাম। সম্ভবত ইত্যাদি গ্রন্থপ্রকাশ থেকে বইটি আলোর মুখ দেখেছিলো। সেকি উচ্ছ্বাস আমাদের।
একসময় দুজন প্রতিযোগিতা করে বই পড়া, বই সংগ্রহ শুরু করি। আমাদের বড় ভাই চিকিৎসক ও মিডিয়া ব্যক্তিত্ব ডা. আব্দুন নূর তুষার সব সময়ই আমাদের ভালো ভালো বইয়ের খোঁজ দিয়েছেন। সংগঠন করা, তরুণদের ভালো কাজে উৎসাহ দেয়া, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ছড়িয়ে দেয়া এই কাজ গুলোতে আমরা অনেকবার দু’জন দু’জনের সঙ্গী হয়েছি।
আমি, ফেরদৌস, আমাদের আরেক ভাই রবিউল ইসলাম রবি ঢাকার বাইরে দেশের বিভিন্ন স্কুলে মুক্তিযুদ্ধের গল্প বলেছি, বঙ্গবন্ধুর গল্প বলেছি। বিনা পারিশ্রমিকে, স্বপ্রণোদিত হয়ে। ফেরদৌস নিজের আগ্রহেই গিয়েছেন প্রত্যন্ত সব এলাকায় মুক্তিযুদ্ধের গল্প বলবেন বলে। এমনকি গত ১৫ বছর ফেরদৌস যে দেশব্যাপী নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিয়ে আসছেন তাও বিনা পারিশ্রমিকে। ফলে তার আদর্শগত, দর্শনগত, চেতনাগত চিন্তার জায়গাটিতে সে তার মতো অনেক বেশি স্বচ্ছ, স্পষ্ট এবং দৃঢ়।
ফেরদৌসের ক্লিনম্যান ইমেজের ছায়াসম্পাত তার প্রচারণাতেও রয়েছে। সে কোনো উৎকট প্রচারণা বা ভাইরাল কর্মকাণ্ড বেছে নেয়নি। এসবে সে বিশ্বাসীও নয়। কাজে বিশ্বাস করেন বলেই হয়তো ধানমন্ডি, কলাবাগান, নিউমার্কেট ও হাজারীবাগের প্রতিটি অলি-গলি চষে বেড়াচ্ছেন ভোট চেয়ে। যাচ্ছেন বাজার ঘাট, বাড়ি, পার্ক, খেলার মাঠসহ সর্বত্র। বর্ষীয়ানদের প্রতি যেমন রয়েছে তার বিশেষ আবেদন, আবদার তেমনি তরুণদের উৎসাহিত করছেন ভোট প্রদানে। বেশি সংখ্যক মানুষ ভোটে অংশ নিক, ভোট হয়ে উঠুক উৎসবের সেজন্য নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন দিনরাত্রি।
বহতা জীবনের পথযাত্রায় ফেরদৌসের কখনো বিচ্যুতি ঘটেনি। স্খলন থেকে সন্তপর্ণে সরিয়ে রেখেছেন নিজেকে। ব্যক্তি মানুষ হিসেবে, যোগ্যতার নিরিখে ফেরদৌস টেন অন টেন। ১০ এ ১০ই পাবেন। কিন্তু ঢাকা ১০ আসনে ভোটের হিসাবে কত পাবেন তা নির্ধারিত হবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিনটিতে।
প্রত্যাশা ১০ হোক ১০এ।
লেখক: সম্পাদক, আজ সারাবেলা। সদস্য, ফেমিনিস্ট ডট কম যুক্তরাষ্ট্র।

আরো দেখুন

Advertisment

জনপ্রিয়