১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ  । ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ 

এয়ারবাস না বোয়িং দোটানায় বিমান

প্রতিদিনের ডেস্ক
ইউরোপ-আমেরিকার নতুন রুটে ফ্লাইট পরিচালনায় নতুন এয়ারক্রাফট কিনতে চায় রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী সংস্থা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। বর্তমানে বিমানের বহরে থাকা ২১টি উড়োজাহাজই যুক্তরাষ্ট্রের বোয়িং কোম্পানির। এবার বোয়িংয়ের পরিবর্তে ফ্রান্সের এয়ারবাস কোম্পানির ১০টি উড়োজাহাজ কেনার পরিকল্পনা করছে সরকার। যদিও বিষয়টি এখনো চূড়ান্ত নয়।
নিজেদের বাজার দখল রাখতে বিমানকে নানা রকম প্রস্তাব দিচ্ছে বোয়িং কোম্পানি। এয়ারবাস কোম্পানিও থেমে নেই। দুই প্রতিষ্ঠানই নানা ধরনের প্রস্তাব নিয়ে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের কাছে দৌড়ঝাঁপ করছে।
জানা যায়, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স অভ্যন্তরীণ সাত এবং আন্তর্জাতিক ২২টি রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করে। সম্প্রতি কানাডার টরন্টো, জাপানের নারিতা, ভারতের চেন্নাই রুটে ফ্লাইট চালু করেছে সংস্থাটি। আগামী মার্চে ইতালির রোমে ফ্লাইট চালুর প্রস্তুতি চলছে। এছাড়া চলতি বছরের ডিসেম্বরে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল চালু হলে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক রুটে ফ্লাইট পরিচালনার কাজ শুরু হবে। তাই নতুন উড়োজাহাজ কেনা জরুরি বলে মনে করে সংস্থাটি। কিন্তু এয়ারবাস না বোয়িং কোন কোম্পানি থেকে উড়োজাহাজ কিনবে তা নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে আছে বিমান।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং সিইও শফিউল আজিম বলেন, ‘ব্যবসা সম্প্রসারণের প্রয়োজনেই নতুন উড়োজাহাজ কেনা প্রয়োজন। তবে উড়োজাহাজ আজ অর্ডার দিলেই আগামীকাল পাওয়া যাবে, বিষয়টি এমন নয়। আমরা বোয়িং ও এয়ারবাসের প্রস্তাব পর্যালোচনা করছি। বিমানের জন্য যে প্রস্তাব লাভের হবে, সেটিই কেনা হবে। তবে পুরো বিষয়টি এখনো আলোচনা পর্যায়ে রয়েছে।’
ব্যবসা সম্প্রসারণের প্রয়োজনেই নতুন উড়োজাহাজ কেনা প্রয়োজন। তবে উড়োজাহাজ আজ অর্ডার দিলেই আগামীকাল পাওয়া যাবে, বিষয়টি এমন নয়। আমরা বোয়িং ও এয়ারবাসের প্রস্তাব পর্যালোচনা করছি। বিমানের জন্য যে প্রস্তাব লাভের হবে, সেটিই কেনা হবে। তবে পুরো বিষয়টি এখনো আলোচনা পর্যায়ে রয়েছে।- বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং সিইও শফিউল আজিম
কেন এয়ারবাস কিনতে চায় বিমান
গত বছরের ২২ মার্চ ঢাকায় ‘বাংলাদেশ এভিয়েশন সামিট’ অনুষ্ঠিত হয়। এ সামিটে বিমানকে উড়োজাহাজ কেনার প্রস্তাব দেয় ফ্রান্সের উড়োজাহাজ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান এয়ারবাস। এই অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি ভিডিও বক্তব্য প্রচার করা হয়। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এভিয়েশন খাতে আমাদের এই যাত্রায় সহায়তার জন্য এয়ারবাসের মাধ্যমে যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সের এ অংশীদারত্বের প্রস্তাব খুবই গুরুত্ববহ।
একই অনুষ্ঠানে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীর বাণিজ্য দূত রুশনারা আলী বলেন, যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীর বাণিজ্য দূত হিসেবে জানাচ্ছি যে এয়ারবাসের এ প্রস্তাবের পেছনে যুক্তরাজ্য সরকার শক্ত রাজনৈতিক সমর্থন দিতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। এয়ারবাসের এ প্রস্তাব বাংলাদেশের এভিয়েশন খাতের চিত্র বদলে দিতে পারে।
পরে গত বছরের ৬ মে লন্ডনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান এবং যুক্তরাজ্যের বিনিয়োগমন্ত্রী লর্ড ডমিনিক জনসন এয়ারবাস থেকে যাত্রী ও পণ্যবাহী উড়োজাহাজ কেনাসহ দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার ঘোষণাপত্র হস্তান্তর করেন। এর মধ্যে গত ১০ সেপ্টেম্বর ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ ঢাকায় সফর করেন। তখনও এয়ারবাস কেনার বিষয়টি আলোচনায় ছিল। সে সময় ফরাসি প্রেসিডেন্ট বলেন, এয়ারবাস কোম্পানির তৈরি ১০টি উড়োজাহাজ কেনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বাংলাদেশ। ১০টি এয়ারবাস এ৩৫০ কেনার এই প্রতিশ্রুতি গুরুত্বপূর্ণ।
যদিও বেবিচক ও বিমানের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আগামী ৭ জানুয়ারি বাংলাদেশের নির্বাচন কেন্দ্র করে নানা ধরনের চাপ প্রয়োগ করছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এমন পরিস্থিতিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চাপ সামলাতে অন্য রাষ্ট্রের সঙ্গে বন্ধুত্ব বাড়ানোর চেষ্টা করছে সরকার। এয়ারবাস ফ্রান্সভিত্তিক প্রতিষ্ঠান হলেও ইঞ্জিনসহ অন্য যন্ত্রাংশে যুক্তরাজ্য ও জার্মানির অংশীদারত্ব রয়েছে। এয়ারবাস কেনার ঘোষণার মধ্য দিয়ে এই তিন দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক বেড়েছে।
২০০৮ সালে মার্কিন আকাশযান নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বোয়িংয়ের সঙ্গে ২১০ কোটি মার্কিন ডলারে তিনটি মডেলের ১০টি নতুন উড়োজাহাজ কেনার চুক্তি করে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। এর মধ্যে চারটি বোয়িং ৭৭৭-৩০০ ইআর, দুটি বোয়িং ৭৩৭-৮০০ ও চারটি বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার উড়োজাহাজ অর্ডার দেওয়া হয়। একে একে উড়োজাহাজগুলো পেতে লেগেছে প্রায় ১১ বছর। পরে বোয়িংয়ের কাছ থেকে আরও দুটি ড্রিমলাইনার উড়োজাহাজ কেনে বিমান। এর বাইরে বোম্বার্ডিয়ার ড্যাশ-৮ উড়োজাহাজ আছে পাঁচটি।
কিন্তু এবার এয়ারবাসের সঙ্গে বিমানের উড়োজাহাজ কেনার আলোচনার পর বাজার দখলে রাখতে মার্কিন প্রতিষ্ঠান বোয়িংও দেনদরবার শুরু করেছে। এমনকি বিমানের নিউইর্য়ক ফ্লাইট চালুর বিষয়টি নিয়েও এ প্রতিষ্ঠানটি সহায়তার আশ্বাস দিয়েছে বিমানকে। এছাড়া গত বছরের ১০ মে ঢাকায় সংবাদ সম্মেলন করেন বোয়িংয়ের এশিয়া প্যাসিফিক ও ভারতের বোয়িং কমার্শিয়াল মার্কেটিং ম্যানেজিং ডিরেক্টর ডেভ শাল্টে।
ওই সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, বিমান যদি বর্তমানে নতুন কোনো ব্র্যান্ডের (এয়ারবাস) এয়ারক্রাফট কেনে, তাহলে তাদের খরচ অনেকাংশে দ্বিগুণ হয়ে যাবে। বর্তমানে বিমানের বহরে বোয়িংয়ের আধিক্য থাকায় বিমানের একটি টেকনিক্যাল ও পাইলট টিম রয়েছে। তবে বিমান যদি নতুন ব্র্যান্ডের এয়ারক্রাফট নেয়, সেক্ষেত্রে তাদের দুই সেট টেকনিক্যাল টিম, দুই সেট পাইলট, দুই সেট ট্রেনিং টিম, দুই সেট সিমুলেটর লাগবে। এতে বিমানের খরচ বাড়বে কয়েক গুণ।
গত ১১ ডিসেম্বর ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস বিমানের এমডির সঙ্গে দেখা করেন। বৈঠকে ঢাকা-নিউইয়র্ক ফ্লাইট চালু, বিমানের কাছে বোয়িং কোম্পানির ড্রিমলাইনারের নতুন ভার্সন ৭৮৭-১০ বিক্রির বিষয়েও প্রস্তাব দেন পিটার হাস। কিন্তু বিমানের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানা যায়।

আরো দেখুন

Advertisment

জনপ্রিয়