জাপানের শক্তিশালী ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৬২ জনে দাঁড়িয়েছে। দেশটির হানসু দ্বীপের ইশিকাওয়ায় ধসে পড়া ভবনগুলোর ধ্বংসস্তূপে আটকেপড়াদের অনুসন্ধান চালাচ্ছেন উদ্ধার কর্মীরা। মৃতের সংখ্যা আরো বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। গত সোমবার ৭ দশমিক ৬ মাত্রার ভূমিকম্পটি জাপানের মধ্যাঞ্চলে আঘাত হানে। তারপর থেকে সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ১৫৫ বারের মতো ভূকম্পন অনুভূত হয়েছে। এগুলোর মাত্রা ছিল ৩ থেকে ৬ দশমিক ১। এরপর অনেকগুলো আফটারশক বা পরাঘাত অনুভূত হয়। ভূমিকম্পের কারণে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া এলাকাগুলোয় পৌঁছাতে উদ্ধারকারী দলগুলোকে বেগ পেতে হচ্ছে। ভূমিকম্পে ইশিকাওয়া প্রিফেকচারের নোতো উপদ্বীপ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া গতকাল বুধবার সকালে ভূমিকম্পে কেঁপে উঠল আফগানিস্তান। ৩০ মিনিটের মধ্যে পরপর দুবার কম্পন হয় সেখানে। ন্যাশনাল সেন্টার ফর সিসমোলজি সূত্রে জানা গিয়েছে প্রথম কম্পনের উৎসস্থল আফগানিস্তানের ফয়জাবাদ এলাকা থেকে ১০০ কিলোমিটার পূর্বে। রিখটার স্কেলে এই কম্পনের তীব্রতা ৪ দশমিক ৪। মঙ্গলবার রাত ১২টা ২৮ মিনিটে এই কম্পন অনুভূত হয়। দুই দশক আগে আফগানিস্তানে ভূমিকম্পের ফলে মারা গিয়েছিলেন দুই হাজার জন। ভূমিকম্পের ঘটনাগুলো থেকে আমাদের শিক্ষা নেয়া উচিত। বাংলাদেশের দুদিকের ভূ-গঠনে শক্তিশালী ভূমিকম্পের শক্তি জমা হয়েছে। এর একটা হচ্ছে উত্তর-পূর্ব কোণে সিলেট অঞ্চলে ডাউকি ফল্টে, আরেকটা হচ্ছে পূর্বে চিটাগং ত্রিপুরা বেল্টে পাহাড়ি অঞ্চলে। এখানে দুটি বড় ধরনের ভূমিকম্প বাংলাদেশের দ্বারপ্রান্তে অবস্থান করছে। উত্তর প্রান্তে যেটা ডাউকি ফল্ট, এখানে সঙ্কোচনের হার হচ্ছে প্রতি একশ বছরে এক মিটার। গত ৫০০-৬০০ বছরে বড় ধরনের ভূমিকম্পের কোনো রেকর্ড নেই। তার মানে পাঁচ-ছয় মিটার চ্যুতি ঘটানোর মতো শক্তি অর্জন করেছে। এটা যদি রিখটার স্কেলে প্রকাশ করা হয় তাহলে এটা হচ্ছে ৭ দশমিক ৫ থেকে ৮ মাত্রার ভূমিকম্প সৃষ্টি করতে পারে। আর এখান থেকে ঢাকা শহর হচ্ছে দেড়শ কিলোমিটার। যে কোনো সময় বড় ধরনের ভূমিকম্প আঘাত হানবে। রাজধানী ঢাকার আশপাশে বড় মাত্রার ভূমিকম্পে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হবে ঢাকা মহানগরীর। ঢাকার মধ্যে বড় ভূমিকম্প সৃষ্টির মতো ভূতাত্ত্বিক অবস্থা না থাকলেও সিলেট ও চট্টগ্রামে শক্তিশালী ভূমিকম্প হলে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে রাজধানী ঢাকাও। পরিস্থিতি মোকাবিলায় কতটা প্রস্তুত বাংলাদেশ- প্রশ্ন সামনে আসছে। ভূমিকম্প এমন এক প্রাকৃতিক দুর্যোগ, যাকে প্রতিরোধ করার কোনো উপায় মানুষের আয়ত্তে নেই। এমনকি এর পূর্বাভাস দেয়াও সম্ভব হয় না। তাই ভূমিকম্পে ক্ষয়ক্ষতি নিয়ন্ত্রণে রাখার পূর্বপ্রস্তুতিই আসল। জাতিসংঘ দুর্যোগ ঝুঁকি সূচকের তথ্যানুযায়ী, ভূমিকম্পপ্রবণ অঞ্চল হিসেবে বিশ্বের ঝুঁকিপূর্ণ ২০টি শহরের মধ্যে দ্বিতীয় স্থানেই রয়েছে ঢাকার নাম। যে কোনো সময় বাংলাদেশের অভ্যন্তরে বড় ধরনের ভূমিকম্পের আশঙ্কা অমূলক নয়। কাজেই এ ধরনের দুর্যোগ মোকাবিলায় আমাদের সরকার বা জনগণ কতটা প্রস্তুত সেটা বিবেচনায় আনা খুবই জরুরি। উদ্বেগের কথা হলো, এ ব্যাপারে সরকারের তরফে তেমন কোনো প্রস্তুতি বা সাধারণের মধ্যেও খুব একটা সচেতনতা দেখা যাচ্ছে না। বুঝতে হবে, অন্যান্য প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মতো ভূমিকম্পের কোনো আগাম পূর্বাভাস পাওয়া যায় না। তাই জনগণকে সম্পৃক্ত করে জনসচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে সীমিত সম্পদ ও ক্ষমতার আওতার মধ্যেই এ দুর্যোগ মোকাবিলার ত্বরিত প্রস্তুতি নেয়া ছাড়া বিকল্প কোনো পথ নেই।
ভূমিকম্প : দুর্যোগ মোকাবিলায় বাংলাদেশ কতটা প্রস্তুত
Previous article
Next article
আরো দেখুন
সংকটে শিল্প
যেকোনো দেশের অর্থনৈতিক উন্নতি নির্ভর করে শিল্প ও ব্যবসা-বাণিজ্যের ওপর। কিন্তু বর্তমান বাস্তবতা হচ্ছে, রাজনৈতিক পটপরিবর্তনে অনেক প্রতিষ্ঠানের ব্যবসা করার সুযোগ সীমিত হয়ে গেছে।...
বিদেশগামী রোগীর সংখ্যা বাড়ছে
দেশের চিকিৎসা বা স্বাস্থ্যসেবার ওপর মানুষের আস্থার যথেষ্ট অভাব রয়েছে। চিকিৎসার মান এবং ব্যয়ের আধিক্য নিয়েও অনেক প্রশ্ন রয়েছে। বিভিন্ন সময়ে জরিপে উঠে এসেছে,...