১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ  । ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ 

মালয়েশিয়ায় ধরপাকড়ের শিকার বাংলাদেশীরা

প্রতিদিনের ডেস্ক:
মালয়েশিয়ায় পাসপোর্টবিহীন বাংলাদেশীসহ বিদেশী শ্রমিকদের বিরুদ্ধে শুরু হয়েছে সাঁড়াশি ধরপাকড় অভিযান। এই অভিযানে ইতোমধ্যে অসংখ্য বাংলাদেশী শ্রমিক ধরা পড়ে দেশটির বিভিন্ন ডিটেনশন ক্যাম্পে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন। অভিযোগ রয়েছে, যেসব বাংলাদেশী কর্মী ডিটেনশন ক্যাম্পে আটকে আছেন তাদের মুক্ত করে দেশে পাঠানোর বিষয়ে বাংলাদেশ হাইকমিশনের লেবার উইংয়ের পক্ষ থেকে তেমন উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে না। মালয়েশিয়ায় প্রবাসী বাংলাদেশী ও বাংলাদেশ হাইকমিশন সংশ্লিষ্টদের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, ২০০৮ সালে অবৈধ শ্রমিকদের বিষয়ে যেভাবে ডিটেনশন ক্যাম্পে খোঁজখবর নিয়ে শ্রমিকদের দেশে ফেরত পাঠানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল এখন সেই নিয়ম মানা হচ্ছে না। যার কারণে অভিযানে ধরা পড়া বাংলাদেশী শ্রমিক ও তাদের দেশে থাকা পরিবারের সদস্যদের প্রতিটি মুহূর্ত কাটাতে হচ্ছে টেনশনের মধ্যে। একই সাথে তারা এ-ও বলছেন, কলিং ভিসায় মালয়েশিয়ায় গিয়ে যাতে কেউ অন্য কোথাও কাজ না করেন। তাহলে নিশ্চিত ওই শ্রমিকদের বিপদে পড়তে হবে। যেতে হতে পারে জেলখানায়ও। জানা গেছে, মালয়েশিয়ার ইমিগ্রেশন বিভাগের বিশেষ দল পুরো দেশে ছড়িয়ে থাকা অবৈধভাবে অবস্থানকারী বিদেশী নাগরিকদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করে বেশ আগেই। তবে সাম্প্রতিককালে এই অভিযানের মাত্রা বেড়েছে আগের তুলনায় অনেক বেশি। এ সময় বিদেশী নাগরিকদের সাথে বাংলাদেশী শ্রমিক ধরা পড়ার সংখ্যাই বেশি বলে প্রবাসীরা জানান। ইমিগ্রেশন ডিপার্টমেন্ট অব মালয়েশিয়ার অফিসিয়াল পোর্টাল ঘেঁটে দেখা গেছে, গতকাল বৃহস্পতিবারও পাসপোর্টবিহীন বিদেশীদের ধরতে সকাল ৭টা ৩০ থেকে বিকেল সাড়ে ৫টা এবং রাত সোয়া ১২টা থেকে রাত পৌনে ৩টা পর্যন্ত সময় উল্লেখ করে রাজধানী কুয়ালালামপুর, পুত্রাজায়া, লাবুয়ান, সিমবিলান, মালেকা, পাহাং, পেরাক পুলাও পেনাং, পার্লিস, সাবা ও সারওয়াকে সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনা করে ইমিগ্রেশন বিভাগ। একই সাথে অভিযান পরিচালিত হয় জহুরবারু, কেদাহ, তেরেঙ্গানুসহ অন্যন্য এলাকাতেও। তবে এসব অভিযানে কী পরিমাণ পাসপোর্ট ছাড়া অবৈধ বিদেশী নাগরিক (শ্রমিক) গ্রেফতার হয়েছে সেই তথ্য দেশটির ইমিগ্রেশন ডিপার্টমেন্টের পোর্টালে খুঁজে মেলেনি।এর আগে অবশ্য নতুন বছরের প্রথম দিনে (১ জানুয়ারি) স্থানীয় সময় বেলা ২টায় জোর উলু চোহ-এর একটি শিল্প এলাকায় ঝটিকা অভিযান চালিয়ে ১২০ বিদেশীকে গ্রেফতার করে ইমিগ্রেশন বিভাগ। এদের মধ্যে ১০৮ জনই বাংলাদেশী। অভিযান প্রসঙ্গে জোহরবারুর ইমিগ্রেশন বিভাগের পরিচালক বাহারউদ্দিন তাহির সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, স্থানীয়দের অভিযোগের ভিত্তিতে প্রধান সড়ক থেকে অনেক দূরে অবস্থিত নির্মাণ শ্রমিকদের একটি ডরমিটরিতে অভিযান চালিয়ে ১৪০ জনকে আটক করা হয়। এখানে মোট ৬০০ জনকে আটক করার পর যাচাই-বাছাই শেষে ১২০ জনকে গ্রেফতার দেখানো হয়। তিনি জানান, গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিদের মধ্যে ১০৮ জন বাংলাদেশী, ৮ জন পাকিস্তানি, দু’জন ভারতের, নেপাল ও ইন্দোনেশিয়ার একজন করে পুরুষ নাগরিক রয়েছেন। গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে অভিবাসন আইন ১৯৫৯/৬৩ এর ধারা ৬(১)(সি) এর অধীনে তদন্ত করা হবে বলে জানান ইমিগ্রেশনের এই কর্মকর্তা। ১৯৫৯/৬৩ সালের ইমিগ্রেশন অ্যাক্টের ১৫(১)(সি) ধারার অধীনে গ্রেফতারকৃত শ্রমিকদের জোহরবারুর ইমিগ্রেশনের ডিটেনশন সেন্টারে নেয়া হয়েছে। এখান থেকে তাদের আদালতে পাঠানো হবে।
এর আগে কুয়ালালামপুরের ব্রিকসফিল্ড এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৬০০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তাদের মধ্যে ২০০ জনই বাংলাদেশী শ্রমিক রয়েছে।গতকাল বৃহস্পতিবার কুয়ালালামপুর থেকে ব্যবসায়ী রাজীব আহমদ নয়া দিগন্তকে মালয়েশিয়ার ইমিগ্রেশনের যৌথ অভিযানের প্রসঙ্গে নয়া দিগন্তকে বলেন, সারা মালয়েশিয়াতে অপারেসন চলছে জোরেশোরে। প্রতিদিন বিদেশী নাগরিকদের সাথে বাংলাদেশীরা ধরা পড়ছেন। যারা ধরা পড়ছেন তাদের নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ডিটেনশন ক্যাম্পে। যতগুলো ক্যাম্প আছে সবগুলো ভরে গেছে। কোনো ক্যাম্প আর খালি নাই। শুনছি অবৈধ শ্রমিকদের রাখার জন্য মালয়েশিয়া সরকার আরো ডিটেনশন ক্যাম্প তৈরি করবে। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ২০০৮ সালে বাংলাদেশের বেকার হয়ে পড়া শ্রমিকদের জন্য সারা মালয়েশিয়াতে ক্যাম্প খোলা হয়েছিল। সেখানে বাংলাদেশ হাইকমিশনের শ্রম বিভাগ উইংয়ের কর্মকর্তা কর্মচারীরা গিয়ে বাংলাদেশী শনাক্ত করে তাদের থাকা-খাওয়া নিশ্চিত করার পাশাপাশি ট্র্যাভেল ডকুমন্টে ও বিমান টিকিটের ব্যবস্থা করে দেশে ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু বর্তমান হাইকমিশনের কার্যক্রম তেমন নেই। ডিটেনশন ক্যাম্পে শ্রমিকরা কি অবস্থায় আছেন কিভাবে তাদের দেশে ফেরত পাঠানো হবে সেটি নিয়ে তাদের মধ্যে কোনো ভাবনা নেই। এমন অভিযোগ করে তিনি নয়া দিগন্তকে আরো বলেন, আগামী মার্চে নতুন কলিং ভিসা চালু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ টিকে সামনে রেখে ধরপাকড় অভিযান আরো জোরদার হবে সামনে। যেসব শ্রমিক বৈধভাবে এ দেশে এসে কাজ না পেয়ে পাসপোর্ট ফেলে অন্যত্র লুকিয়ে কাজ করছেন, এমন এলাকায় বেশি অভিযান চালাচ্ছে ইমিগ্রেশন বিভাগ। তিনি শ্রমিকদের পরামর্শ দিয়ে বলেন, কাজ এবং বেতন নিশ্চিত না হয়ে কেউ যাতে মালয়েশিয়ায় না আসেন। সেটি অবশ্যই আগে নিশ্চিত করতে হবে। নতুবা ওই শ্রমিকদের এখানে আসার পর বিপদে পড়তে হবে। যেতে হবে ডিটেনশন ক্যাম্প থেকে কারাগারে। যারা ইতোমধ্যে ধরা পড়েছেন তাদের বেশির ভাগ এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় গিয়ে কাজ করার অপরাধে ধরা হয়েছে। গতকাল জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি নয়া দিগন্তকে এই প্রসঙ্গে কোনো মন্তব্য করতে অপারগতা প্রকাশ করেন। তবে সচেতন রিক্রুটিং এজেন্সির মালিকরা বলছেন, যেসব এজেন্সির মালিকদের বিরুদ্ধে মালয়েশিয়াতে লোক পাঠাতে অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি হয়ে পড়েছে। তবে অনেক ভালো রিক্রুটিং এজেন্সিরও শ্রমিক দেশটিতে যাচ্ছে। তাদের উৎসাহ দেয়া দরকার বলেও মনে করেন তারা। এক প্রশ্নের উত্তরে তারা বলছেন, মালয়েশিয়ার বাংলাদেশ হাইকমিশনকে ডিটেনশন ক্যাম্পে আটকা অসহায় শ্রমিকদের খোঁজখবর নিয়ে দ্রুত তাদের ব্যাপারে পদক্ষেপ নেয়া জরুরি। এটাই তো হাইকমিশনের কাজ

আরো দেখুন

Advertisment

জনপ্রিয়