রোজা শুরু হতে আরো প্রায় ২ মাস বাকি। এর মধ্যে বাজারে নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে গেছে। নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে রমজানের আগেই খেজুর, চিনি, আটা, ময়দা, ভোজ্যতেল, বেসন, মুড়ি, ছোলাসহ বিভিন্ন পণ্যের দাম বেড়েছে। প্রতি বছর রোজা আসার আগ থেকেই নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম লাগামহীনভাবে বাড়া যেন নিয়মে পরিণত হয়েছে। জানা গেছে, রমজান ঘিরে গত এক মাসে ছোলার দাম কেজিতে ১০ থেকে ১৫ টাকা বেড়ে ১০০ থেকে ১১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মাসখানেক আগেও প্রতি কেজি ছোলার দাম ছিল ৯০-৯৫ টাকা। ছোলার ডাল কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১১০ থেকে ১১৫ টাকা। খুচরায় খেসারির ডাল প্রতি কেজি ১১৫ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা এক মাস আগে ছিল ৯৫ থেকে ১০০ টাকা। ডালের দাম বাড়ায় বেড়েছে বেসনের দাম। এক মাসের ব্যবধানে সবচেয়ে বেশি দাম বেড়েছে মুগ ডালের। এ পণ্যের দাম কেজিতে ২০-২৫ টাকা বেড়ে ১৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দেশে বর্তমানে রেকর্ড দামে চিনি বিক্রি হচ্ছে। খোলা চিনি প্রতি কেজি ১৪৫ ও প্যাকেটজাত ১৪৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। লাল চিনি ১৬০ থেকে ১৭০ টাকা। আমদানিকারক ও পাইকারি ব্যবসায়ীদের দাবি, ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন, এলসি জটিলতাসহ নানা কারণে আমদানি করা এসব পণ্যের দাম বেড়েছে। বড় থেকে ছোট ব্যবসায়ী সবার প্রবণতা এ সময় বেশি লাভ তুলে নেয়ার। তবে এবার এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ডলার সংকট। এই কারণে নিত্যপণ্য আমদানি বিল পরিশোধে দেরি হচ্ছে আর এলসি খোলায় জটিলতাও দেখা দিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে হু হু করে বাড়ছে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম। দেশে এ বছর আমনের রেকর্ড উৎপাদন হয়েছে। বাজারে সরবরাহে ঘাটতি নেই, তার পরও চড়ছে চালের দামও। গত চার-পাঁচ দিনের ব্যবধানে কেজিতে দাম বেড়েছে ৩ থেকে ৫ টাকা। আর ভরা মৌসুমে কমছে না সবজির দাম। রমজানের আগেই এই মূল্যবৃদ্ধি সাধারণ জনগণের জন্য খুবই কষ্টের। গত বছর যে খেজুর ৫০০ টাকা কেজিতে পাওয়া যেত, এখন তা কিনতে হচ্ছে ৮০০-১,০০০ টাকায়। এ ছাড়া রসুন, মসুর ডাল, আটা, ময়দা, ভোজ্যতেল, জিরা, লবঙ্গ ইত্যাদি চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে। বাজার স্থিতিশীল রাখতে সরকার নানামুখী উদ্যোগ নিয়েছে। ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির মাধ্যমে যাতে বাজারকে অস্থিতিশীল করতে না পারে সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। অবশ্য এসব তৎপরতা প্রতি বছরই দেখা যায়। রমজানে বেশি চাহিদাসম্পন্ন পণ্যের পর্যাপ্ত মজুত থাকা এবং যে কোনো মূল্যে পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখার ঘোষণা দেন সংশ্লিষ্টরা। কিন্তু এরপরও রমজানের আগে বাজার অস্থিতিশীল হয়ে ওঠে। বৈশ্বিক মন্দা পরিস্থিতি এবং ডলার সংকটের কারণে এবার সে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সরকারকে আগের তুলনায় বেশি সতর্ক থাকতে হবে। কাজেই রোজা শুরুর আগেই যাতে ব্যবসায়ীরা দাম বাড়ানোর কৌশল বাস্তবায়ন করতে না পারে সেদিকে বিশেষ দৃষ্টি রাখতে হবে এখন থেকেই। রোজায় বাজার নিয়ন্ত্রণে টিসিবির মাধ্যমে খোলাবাজারে পণ্য বিপণন, বাজার মনিটরিং ইত্যাদি যেসব পরিকল্পনা থাকে সেগুলো যেন যথাযথভাবে বাস্তবায়িত হয় তা নিশ্চিত করতে হবে।
এখনই বাজার নিয়ন্ত্রণ জরুরী
Previous article
Next article
আরো দেখুন
মাদক পাচারকারীদের দ্রুত বিচার করতে হবে
দেশে মাদকসেবীর সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। শহরাঞ্চলে তো বটেই, গ্রামে-গঞ্জে, এমনকি প্রত্যন্ত অঞ্চলেও মাদক এখন খুবই সহজলভ্য। তরুণদের পাশাপাশি কিশোর-কিশোরীরাও মাদকাসক্ত হয়ে পড়ছে। তারা পরিবার,...
গার্মেন্টস খাতে অস্থিরতা
গার্মেন্টস বা তৈরি পোশাকশিল্পের শ্রমিক অসন্তোষ থামছেই না। এক মাসেরও বেশি সময় ধরে চলছে এই অস্থিরতা। গার্মেন্টস শ্রমিক, মালিক ও সরকারের প্রতিনিধিদের দফায় দফায়...