৩১শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ  । ১৫ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ 

আঙুলের ছাপ নিয়ে প্রচলিত ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করছে এআইয়ের গবেষণা

প্রতিদিনের ডেস্ক
প্রযুক্তিটি আঙুলের ছাপের আকার ও গঠন নিয়ে কাজ করে ছবি: দ্য ডিকোডার
একজন ব্যক্তির হাতের আঙুলের ছাপ সম্পূর্ণ ভিন্ন। বিজ্ঞানও তাই বলে আসছে। একজনের আঙুলের ছাপের সঙ্গে অন্য কারো ছাপ মিলবে না। তবে এ ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করেছে কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণা। বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা দলটি একটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) টুল ব্যবহার করে ৬০ হাজার আঙুলের ছাপ বিশ্লেষণ করেছে। যেখানে এআই একই ব্যক্তির ভিন্ন আঙুলের ছাপ থেকে নির্দিষ্ট ব্যক্তি শনাক্ত করতে পারে কিনা তা যাচাই করা হয়।
গবেষকদের দাবির বরাতে বিবিসিতে প্রকাশিত খবরে বলা হয়, তাদের এআই প্রযুক্তিটি একজন ব্যক্তির বিভিন্ন আঙুলের ছাপ থেকে তাকে শনাক্ত করতে পারে। তারা আরো দাবি করেন, তাদের প্রযুক্তিটি ৭৫-৯০ শতাংশ পর্যন্ত নির্ভুলতার সঙ্গে আঙুলের ছাপ শনাক্ত করতে সক্ষম। তবে গবেষকরাও নিশ্চিত নন প্রযুক্তিটি প্রকৃত অর্থে কীভাবে কাজ করে।
গবেষণাটির দায়িত্বে থাকা কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটির রোবট বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক হড লিপসন বলেন, ‘আমরা পুরোপুরি জানি না এআই প্রযুক্তিটি কীভাবে এ শনাক্তকরণের কাজটি করছে।’
গবেষকরা বিশ্বাস করেন এআই টুলটি প্রচলিত পদ্ধতির চেয়ে ভিন্নভাবে আঙুলের ছাপ বিশ্লেষণ করে। এটি আঙুলে থাকা সব সূক্ষ্ম দাগ কীভাবে শেষ ও আলাদা হয়েছে সেটির ওপরে নজর না দিয়ে এআই বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে আঙুলের ছাপের মধ্যে থাকা দাগগুলোর আকার ও গঠন নিয়ে কাজ করে। এগুলো মিনুসায় নামে পরিচিত, যার অর্থ কোনো কিছুর ছোট সুনির্দিষ্ট বিবরণ।
অধ্যাপক লিপসন জানান, প্রযুক্তিটি প্রচলিত আঙুলের ছাপ চিহ্নিতকরণের মার্কারগুলোকে ব্যবহার করছে না, যা গত কয়েক দশক ফরেনসিক বিজ্ঞানে ব্যবহার হয়ে আসছে। বরং ধারণা করা হচ্ছে, প্রযুক্তিটি বিশ্লেষণ কার্যের ক্ষেত্রে আঙুলের ছাপের দাগগুলোর আকার, গঠন ও শুরু বা শেষ হওয়ার প্যাটার্নের দিকে ফোকাস করছে।
অধ্যাপক লিপসন ও গবেষণারত স্নাতকের শিক্ষার্থীরাও এআই প্রযুক্তিটির প্রাপ্ত ফলে বিস্মিত হয়েছেন। অধ্যাপক লিপসন আরো বলেন, ‘আমরা প্রথমে ফল নিয়ে খুবই সন্দিহান ছিলাম, যে কারণে আমরা একাধিকবার তা যাচাই করেছি।’
হাল ইউনিভার্সিটির ফরেনসিক বিজ্ঞানের অধ্যাপক গ্রাহাম উইলিয়ামসের মতে, আঙুলের ছাপ প্রতিটি ব্যক্তির জন্য ইউনিক বা আলাদা এ প্রচলিত ধারণাটি কখনই চূড়ান্তভাবে প্রমাণিত হয়নি।
তিনি আরো জানান, প্রত্যেকের আঙুলের ছাপ আলাদা বা ইউনিক এ বিষয়ে কোনো এখন পর্যন্ত কোনো অকাট্য যুক্তি বা প্রমাণ আমাদের কাছে নেই। তবে শুধু এটুকু বলা যেতে পারি আমরা এখন পর্যন্ত দুজন ব্যক্তির একই আঙুলের ছাপ হতে দেখিনি।
কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণার ফলটি বায়োমেট্রিকস ও ফরেনসিক বিজ্ঞানকে প্রভাবিত করতে পারে। যেমন যদি কোনো ক্রাইম সিন ‘‌এ’ থেকে একটি অজ্ঞাত থাম্ব প্রিন্ট বা বৃদ্ধাঙ্গুলির ছাপ পাওয়া যায় এবং ক্রাইম সিন ‘‌বি’-তে একটি অজ্ঞাত কোনো তর্জনি আঙুলের ছাপ পাওয়া যায়। তবে এ দুটি আঙুলের ছাপ বর্তমানে ফিঙ্গারপ্রিন্ট শনাক্তকরণ পদ্ধতি একই ব্যক্তির সঙ্গে মিলানো যাবে না। তবে এআই টুলটি এ শনাক্তকরণের কাজটি করতে পারবে।
কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা দলটি স্বীকার করেছে, এ প্রযুক্তির এখন প্রাথমিক পর্যায়ে। তাই প্রযুক্তিটি আরো উন্নত ও বিকাশিত করার জন্য আরো গবেষণা প্রয়োজন।

আরো দেখুন

Advertisment

জনপ্রিয়