২২শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ  । ৭ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ 

সুন্দরবনের বনজীবিদের বিশ্বাস বনবিবি পূজা

উৎপল মণ্ডল,শ্যামনগর
প্রতিবছর শীত মৌসুমী পহেলা মাঘে সমগ্র সুন্দরবন উপকূলীয় এলাকা জুড়ে সুন্দরবন নির্ভরশীল বনজীবী জেলে বাউলিয়া মুলত সুন্দরবনের উপর জীবন জীবিকায় নিরাপত্তায় জন্য তারা বিশ্বাস করে বনবিবি পূজা করে থাকেন।তারই ধারাবাহিকতায় উপকূলীয় কয়েকটি ইউনিয়নে সুন্দরবনের কোল ঘেঁষে কালিঞ্চ,চুনকুড়ি,কূলতলি সহ পৌষসংক্রান্তি থেকে শুরু হয় এবং মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়নে কুলতলী গ্রামে বেশ জাঁকজমক ভাবে মেলা চলে দুই তিনি ধরে।সুন্দরবনের পেশায় জীবন জীবিকা নির্ভরশীল বনজীবীরা বনের রক্ষাকর্তা হিসেবে বনবিবি পূজা তাদের বিশ্বাসের দেবতা।উপকূলের লোকা কাহিনীতে বন বিবির ইতিহাসের কথা জানা যায়।অনেক পুরানো সেই ইতিহাস। এতদ্বকালে সুন্দরবনে সে সময় দ্বন্ডবক্ষ নামে এক রাজা ছিলেন।তিনি ছিলেন প্রজাবৎসল্য সব্যসাচী তার স্ত্রী রায়মনি,তাদের যথেষ্ট আধিপত্য ছিল। প্রজাকুলের দেখভাল করতেন।কথিত আছে জঙ্গলে যত দানব দৈত্য ভূতপ্রেতা ডাকেনি যোগিনী সব তার অনুগত্য ছিল।তার ছিল ৩৭ কোটি সিপাহি লসকার সমুদ্র সৈকতে কোনো একখানে ছিল তার রাজধানী। তাদের ছিল একটি সন্তান নাম দক্ষিণারায়,সে দিনে দিনে দস্তর পরক্রমশালী হয়ে ওঠে।তপস্যা বলে বাঘ মূর্তি ধারণ করে মানুষ ধরে খেত।মানুষ ভীতি সন্ত্রস্ত হয়ে পড়লো।কেউ আর বাদাবনে মধু সংগ্রহ করতে যেতে পারে না।সৃষ্টিকর্তাকে ডাকতে থাকলো মানুষজন।পরম করুনাময় খোদাতালা দুষ্টের দমনের জন্য বনবিবি ও শাহ জঙ্গলিকে দুনিয়ায় পয়দা করলেন।১৮ ভাটিতে যাওয়ার জন্য হুকুম করলেন। বনবিবির পিতৃপরিচয়ে তৎকালীন মক্কর ধর্মভিরু দরিদ্র এবরাহিম ফকিরের দ্বিতীয় স্ত্রী গুলাল বিবির গর্ভে বনবিবি ও শা-জঙ্গুলী নামে জমজ ভাই বোনের তাদের মা বনবাসে থাকাকালীন সুন্দরবনের মধ্যে জন্ম হয়।উল্লেখ্য এবরহিম ফকির তার ১ম স্ত্রী ফুলবিবির সঙ্গে ওয়াদা রক্ষার্থে তার কথামতো পুণ মাসে নিষ্ঠুর ভাবে গুলাল বিবিকে বনবাসে পাঠায়। পরম করুনাময় রাব্বুল আলামীনের অশেষ কৃপায় জঙ্গলে দুই ভাই বোন ফলমূল হরিণদুগ্ধ পানে বড় হতে থাকে।এক পর্যায়ে দুই ভাই বোন মা ও বাবা ইব্রাহিম ফকিরের সঙ্গে জঙ্গলে তাদের মিলন ঘটে। তারা বাবা মায়ের কান্নাকাটি উপেক্ষা করে দুই ভাই বোন আল্লাহর ডাকে মদিনাতে চলে যান।ওখানে নবীজির আওলাদ এক কামেল সাহেবের কাছে মুরিদ হলো।মারফত কালাম বিদ্যায় তালিমও নিল। খোদার দরবারে দুই ভাই বোন মোনাজাত করলো। আল্লাহ পাক সন্তুষ্টিতে তাদের উপর ওহী নাযিল হলো।তোমাদেরকে খেলাফত দান করা হলো।১৮ ভাটিতে চলে যাও।আল্লাহপাক সব সময় তোমাদের সঙ্গে থাকবে।ওখানে ১৮ হাজার জাত( জীব) পয়দা আছে ।তুমি যে ১৮ ভাটিতে সবার মা।বিপদে পড়েছে তোমাকে মা বলে ডাক দিবে তাদের উদ্ধার করবে। সেই থেকে বনবিবি বনের দেবতা, মা বলেই জানেন সবাই।বন বিবির পুথীর ইতিহাসে বলা হয়েছে মায়ের প্রথম পূজা ও তার কীর্তি থেকে বনবিবি ও শা- জঙ্গলী মদিনা থেকে অনেক কষ্ট সহে ভাটির অঞ্চল ১৮ ভাটিতে পৌঁছায়।এবং ভুরকুন্ডে তার শিকড় গাড়েন।এখানে ছিল সেই দুষ্টু শাসক দক্ষিণা রায় তার মা রায় মনিকে যুদ্ধে পরাজিত করে সন্ধি স্থাপন করেন।উল্লেখ্য জঙ্গলে বাদাবনের প্রথম মৌয়াল ধুনাই মৌলে তার বহর নিয়ে জঙ্গলে যায় মধু ভাঙতে। মধু না পেয়ে এক সময় চতুর দক্ষিণা রায়ের সঙ্গে তার দলের পাচক ছোট ছেলে দুখে কে খেতে দিলে তার সপ্তবহর মোম মধু ভরিয়ে দেবে।ফন্দি করে চতুর্থ ধোনাই মৌলে দুখেকে কেঁদো খালি নামক স্থানে কাঠ কাটার জন্য তুলে দেয়। দক্ষিণা রায় বাঘ রূপ ধারণ করে দুখে কি খেতে আসলে তার অশীতিপর বৃদ্ধ মায়ের আদেশ মত বনবিবিকে মা-মা বলে চিৎকার করতে থাকে।মা-সঙ্গে সঙ্গে মক্ষি রূপে ছুটে আসে।আক্রান্ত দুখে কে কোলে তুলে নিয়ে জলের ছিটে দিলে জ্ঞান ফিরে আসে।দুখে কে অনেক ধন দৌলত দিয়ে সেঁকো নামক কুমিরের পিঠপ তুলে দিয়ে বাড়ি পৌঁছে দেন।দুখেকে বাঘে খেয়েছে বলে ধোনাই মৌলের মিথ্যা প্ররোচনায় দুঃখের মা পাগল বেশে ঘুরতে থাকে।দুখেকে পেয়ে তার বৃদ্ধ মা হয়ে মা বনবিবি সন্তুষ্টির জন্য গলায় কুড়াল ঝুলিয়ে সাত সাতগ্রাম মাং( ভিক্ষা)চাল চিনি দুধ দিয়ে রান্না করে বনবিবির পূজায় দেওয়া হল।সেই থেকে যুগ যুগ ধরে অদ্যবধি চলে আসছে মায়ের নামে পুথি পাঠ করে বন বিবি পূজা করা। যেহেতু বন বিবি ইসলাম ধর্মীয় অনুকরণীয় তাই তার পূজায় সকল শ্রেণীর মানুষ সহ বনজীবিরা ক্ষীর রান্না করে মোরগ উড়িয়ে মানত নিবেদন করেন।বনবিবি মা আছেন সুন্দর বনে,থাকুন তিনি অমর হয়ে।

আরো দেখুন

Advertisment

জনপ্রিয়