প্রতিদিনের ডেস্ক
২০২৬ সালের মধ্যে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।
মঙ্গলবার (১৬ জানুয়ারি) সচিবালয়ে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের অগ্রগতি, সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে এ কথা বলেন প্রতিমন্ত্রী। গত ১১ জানুয়ারি গঠিত নতুন মন্ত্রিসভায়ও নসরুল হামিদ বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছেন।
নসরুল হামিদ বলেন, ‘আমরা নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহের একটা টাইমলাইন ঠিক করে ফেলেছি। ২০২৬ সালের মধ্যে বাংলাদেশে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সাপ্লাই থাকবে। আমরা যেভাবে বিদ্যুতে করেছি- এত তারিখের মধ্যে শতভাগ বিদ্যুতায়ন হবে। গ্যাসের ব্যাপারেও সেই পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছি।’
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘এখন আমরা মাত্র ২০ শতাংশ গ্যাস বিদেশ থেকে আমদানি করি। আমরা ৮০ শতাংশ নিজস্ব গ্যাস ব্যবহার করছি। আমরা আমদানির গ্যাসের অবস্থাটা খুব বেশি বড় করতে চাই না। আমাদের আমদানির গ্যাস থাকবে। মাঝখানে যে গ্যাপটা থাকবে সেই গ্যাপটা আমদানির গ্যাস দিয়ে পূরণ করতে চাই।’
নসরুল হামিদ বলেন, ‘ভোলায় যে পরিমাণ গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে, নতুন এরিয়াতে যে পরিমাণ গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে, পরবর্তী সময়ে যদি গভীর সমুদ্রে গ্যাস পাওয়া যায়- আমরা মনে করি একটা ভালো অবস্থায় জ্বালানি বিভাগ থাকবে। মনে হচ্ছে, আমরা সুখবর পাচ্ছি, এটা হচ্ছে বড় বিষয়।’
গ্যাসের সমস্যা কাটতে পারে মার্চে
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের অনেক চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে। গ্যাস একটি বড় চ্যালেঞ্জ। বেশ কিছুদিন ধরে গ্যাসের স্বল্পতা দেখা দিয়েছে। কারণ একটি এফএসআরইউ (ফ্লোটিং স্টোরেজ অ্যান্ড রিগ্যাস্টিফিকেশন ইউনিট) নিয়ে আমরা কাজ করছি। এই অসুবিধাটা খুবই সাময়িক আমি মনে করি। প্রচণ্ড শীতের কারণেও গ্যাসের চাপ কিছুটা কমে যায়। (সংস্কারে নেওয়া) এফএসআরইউটা চলে আসছে। আমরা আশাবাদী আগামী দুই-একদিনের মধ্যে এফএসআরইউটা চালু হয়ে যাবে। তার মানে সিস্টেমে আরও ৪০০ এমএমসিএফ গ্যাস প্রবেশ করবে।’
আগামী ১৭/১৮ তারিখে আরেকটি এফএসআরইউ সংস্কারে পাঠানো হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের একটি বড় প্ল্যান হলো আগামী মার্চ থেকে আমরা যাতে (গ্যাস) নিরবচ্ছিন্ন রাখতে পারি। সামনে রোজার মাস আসছে। সেটাকে সামনে রেখে আমরা পরিকল্পনা নিয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘আমরা আরও দুটি এফএসআরইউ আনার পরিকল্পনা নিয়েছি। কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ২০২৬ ও ২০২৭ সালের দিকে দুটি এফএসআরইউ যুক্ত হবে। আমরা মনে করছি ২০২৭ সালে আমাদের গ্যাসের চাহিদা প্রায় ছয় হাজার এমএমসিএফ গিয়ে দাঁড়াবে।’
গ্যাস অনুসন্ধানে মিলতে পারে সুখবর
নসরুল হামিদ বলেন, ‘আমাদের অগ্রাধিকার হলো, আমাদের নিজস্ব গ্যাস আবিষ্কার করা। এরই মধ্যে ভালো সংবাদ যে আমরা যে কয়টি কূপ খনন করেছি, এর অধিকাংশতে গ্যাস আবিষ্কার করেছি। ছোট হলেও ভালো অবস্থা। ভোলা থেকে বরিশালের পাইপলাইনটা হচ্ছে সবচেয়ে বড় প্রায়োরিটি। এটার কার্যক্রম আমরা এ বছরই শুরু করবো। ভোলা থেকে সিএনজি গ্যাস আনা শুরু হয়েছে। এটা আস্তে আস্তে বাড়তে থাকবে। মার্চের মধ্যে এটা পুরোদমে চালু হবে।’
তিনি বলেন, ‘বিবিয়ানা এরিয়ার বিষয়ে আমরা খুবই আশাবাদী সেখানে প্রচুর গ্যাসের সন্ধান আমরা পেতে যাচ্ছি। এ বছরের সবচেয়ে বড় অগ্রাধিকার হচ্ছে নিজেদের গ্যাস আহরণ করা। প্রায় ৪৬টি কূপ এবং পরবর্তী ধাপে আরও ১০০টি কূপ খননের পরিকল্পনা আমরা নিয়েছি। আমরা চাচ্ছি আগামী ২০২৫ সালের মধ্যে ৪৬টি কূপ খনন শেষ করা। পরবর্তী সময়ে এটার সমান্তরালে আরও ১০০ কূপ খনন করা। আমরা আশাবাদী আগামী ২০২৪ ও ২০২৫ সালের মধ্যে আরও ৫০০ এমএমসিএফ গ্যাস নিজস্ব দেশ থেকে যোগান দিতে পারবো।’
‘একটা সুখবর আমরা পেতে যাচ্ছি, এখনো সেটা সম্ভাবনা। সম্ভাবনার দিকটি হলো ১ দশমিক ৬ টিসিএফ গ্যাস নতুন করে সম্ভাবনা দেখা গেছে। বিবিয়ানার ফ্ল্যাঙ্ক এড়িয়াতে। সেখানে শেভরন কাজ করছে। সেখানে আমরা যদি শুরু করি, কমফার্ম করতে পারবো এ বছরের শেষের দিকে।’
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আগামী তিন-চার মাসের মধ্যে আমাদের তেলের ব্যাপারে নিশ্চিত হবো। কী পরিমাণ তেল আমরা পেলাম। আমরা আশাবাদী এ দুটি বছরের শুরুতে সবার জন্য ভালো সুখবর হচ্ছে।’
গ্যাস নিয়ে হবে মাস্টরপ্ল্যান
নসরুল হামিদ বলেন, ‘আগামী ৫০ বছর সামনে রেখে গ্যাস ব্যবস্থাপনা ও বিতরণ মাস্টারপ্ল্যান আমরা পরিকল্পনার মধ্যে আনবো। এ মাস্টারপ্ল্যান পাঁচ বছর অন্তর রিভিউ হবে। এ পরিকল্পনা আছে। আমরা পরামর্শক হায়ার করার চেষ্টা করছি।’
‘বিপিসির ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার হলো চট্টগ্রাম থেকে পাইপলাইনের মাধ্যমে থার্ড টার্মিনালে নিয়ে আসা। এটা দ্রুততার সাথে শেষ করতে হবে।’
এবার গরমের পরিমাণ বাড়তে পারে জানিয়ে তিনি বলেন, এবার গরমে বিদ্যুতের চাহিদা সাড়ে ১৭ হাজার মেগাওয়াটের ওপরে হতে পারে। সেটার প্রস্তুতি আমরা নিচ্ছি। সময়মতো কয়লা, গ্যাস ও তেল জোগান দেওয়ার বিষয়টি যদি আমাদের হাতে থাকে তবে অবশ্যই আমরা নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ দিতে পারবো। কারণ আমাদের সেই পরিমাণ বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রস্তুত আছে।
মধ্যপ্রাচ্যে গোলযোগ সৃষ্টির সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। সেটি আগামী দিনগুলোতে বিদ্যুৎ-জ্বালানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ হতে পারে বলেও জানান প্রতিমন্ত্রী।
তিনি জানান, গ্যাস ও তেলের দাম বাড়ার কারণে বিদ্যুৎ-জ্বালানি ক্ষেত্রে বছরে ১৩ বিলিয়ন বেশি ব্যয় করতে হয়েছে।কৃষিজমি নষ্ট না করে, পরিবেশের ক্ষতি না করে যতটুকু পারা যায় কয়লা উত্তোলনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে নির্দেশনা চাওয়া হবে বলেও জানান নসরুল হামিদ।
আগামী মাসের মধ্যে প্রায় ৪০ মেগাওয়াট হাইড্রো বিদ্যুৎ আমদানির জন্য নেপালের সঙ্গে চুক্তি হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ৫০০ মেগাওয়াট নিয়ে কাজ করছি। সেটাও প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে। আমরা অঙ্গীকার অনুযায়ী ২০৪১ সালের মধ্যে ৪০ শতাংশ ক্লিন এনার্জি নিশ্চিত করবো
মূল্য সমন্বয়ের নতুন পদ্ধতি কবে নাগাদ হবে- জানতে চাইলে বলেন, মার্চের পরবর্তী সময়ে এপ্রিল, মে, জুনের দিকে তেলটা শুরু হবে প্রথম। তারপর আস্তে আস্তে…। পার্শ্ববর্তী দেশ যেটা করে, তারা প্রতিদিন করে। আমরা প্রতি মাসে করব।
বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘যতদ্রুত আমরা প্রযুক্তি নিয়ে আসতে পারি। বিদ্যুতের আবেদন, বিল অনলাইন করতে পারলে সেটি দুর্নীতি বা কারচুপি প্রতিরোধের বিষয়ে বড় জায়গা তৈরি করবে।’