আবু জাফর মিয়া
মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন গত ১০ জানুয়ারি ২০২৪ তারিখ সংবাদ সম্মেলন করে ২৫ জন পূর্ণমন্ত্রী এবং ১১ জন প্রতিমন্ত্রীর নাম ঘোষণা করেন। এতে প্রধানমন্ত্রীসহ মন্ত্রিসভার মোট সদস্য হচ্ছেন ৩৭ জন যার মধ্যে ২ জন টেকনোক্রাট মন্ত্রী হয়েছেন।
১১ জানুয়ারি ২০২৪ তারিখ তাদের শপথ অনুষ্ঠান এবং মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের দপ্তর বণ্টন হয়ে গেলো। উল্লেখ্য, বিগত মন্ত্রিসভার ৩০ জন সদস্য নতুন মন্ত্রিসভায় স্থান পাননি। আবার প্রথমবারের মত মন্ত্রিসভায় যুক্ত হয়েছেন এ রকমের রয়েছেন ১৪ জন। মন্ত্রিসভার বাকি ২৩ সদস্যের ইতিপূর্বে কোনো না কোনো মন্ত্রণালয়ে কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে।
সবচেয়ে বড় কথা হলো এই মন্ত্রণালয়ের প্রধানমন্ত্রী যিনি হতে যাচ্ছেন, তিনি টানা চারবারসহ পঞ্চমবারের মত প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করতে যাচ্ছেন। এখন প্রশ্ন হলো নব গঠিত মন্ত্রিসভা কেমন হলো?
নব গঠিত সরকারের মন্ত্রিসভায় যেমন বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে কাজ করার মত অভিজ্ঞ সদস্য রয়েছেন, তেমনি অত্যন্ত সম্ভাবনাময় নতুন সদস্যও রয়েছেন। তারা প্রত্যেকেই তাদের স্ব স্ব দায়িত্ব সুনিপুণভাবে পালন করার ব্যাপারে দৃঢ়ভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আর তাদের উপরে যিনি আছেন, তিনি ইতোমধ্যে টানা চারবারসহ পঞ্চমবারের মত প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করতে যাচ্ছেন।
তারা কি পারবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে দেয়া ইশতেহার বাস্তবায়ন করতে? কিংবা গত তিন মেয়াদে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার কর্তৃক বাস্তবায়িত ব্যাপক উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের ফলে জনগণের মনে সৃষ্ট পাহাড়সম প্রত্যাশা মিটাতে? কিংবা করোনা পরবর্তী ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের ফলে দেশের অস্থিতিশীল অর্থনীতিকে স্থিতিশীল ও কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে উন্নীত করতে?
নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের ক্রমবর্ধমান মূল্য বৃদ্ধিকে জনগণের ক্রয় সীমার মধ্যে রাখতে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে? কিংবা ইউরোপ, আমেরিকাসহ পশ্চিমা দেশগুলোর সাথে কূটনৈতিক প্রচেষ্টার মাধ্যমে সম্পর্কোন্নয়ন করতে? প্রশ্নগুলো দেখেই বোঝা যাচ্ছে, নব নির্বাচিত আওয়ামী লীগকে দেশ পরিচালনা করার বিষয়ে দেশী-বিদেশী ব্যাপক চাপ সামাল দেয়াসহ জনগণের প্রত্যাশা পূরণে ব্যাপক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। সুতরাং নব গঠিত মন্ত্রিসভায় কারা স্থান করে নিলেন এবং তারা এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কতটা সফল হতে পারেন সে বিষয়ে আলোকপাত করা যাক।
আওয়ামী লীগ সরকারের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হবে বাজার নিয়ন্ত্রণ করা এবং অস্থিতিশীল অর্থনীতিকে স্থিতিশীল করা। করোনার কারণে প্রায় ২ বছর মানুষ কাজ করতে পারেনি। ফলে তাদের আয়ের পথ একেবারেই বন্ধ ছিল। সরকারি ও ব্যক্তি পর্যায়ে যে ত্রাণ-সাহায্য ছিন্নমূল মানুষ তখন পেয়েছে, তা দিয়ে তারা কোন রকমের জীবন প্রবাহকে চালিয়ে নিয়েছে। সত্যি বলতে তখন মধ্যবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্ত এবং গরীব মানুষ অত্যন্ত মানবেতর জীবন-যাপন করেছে।
করোনা পরবর্তী মানুষ যখন জীবন প্রবাহকে স্বাভাবিক পর্যায়ে নিয়ে আসার জন্য সংগ্রাম করছিল, তখন ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ হিসেবে আবির্ভাব হয় ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ। এ যুদ্ধের কারণে সারা বিশ্বে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রসহ সব জিনিসের দাম আকাশচুম্বী হয়ে যায়। এতে দেশের বৃহৎ একটি জনগোষ্ঠীর জীবন প্রবাহ স্বাভাবিক রাখতে নাভিশ্বাস উঠে যায়। ফলে সারা বিশ্বেই বাংলাদেশের মত উন্নয়নশীল কিংবা দরিদ্র দেশগুলোর অর্থনীতিতে ব্যাপক অস্থিতিশীলতা দেখা দেয়।
শ্রীলঙ্কা তার জ্বলন্ত প্রমাণ। তবে যে কারণে বাজার ব্যবস্থা ও অর্থনীতিতে অস্থিতিশীলতা দেখা দিয়েছে, তাতে সরকারের কোনো হাত নেই। বরং করোনার মধ্যে যখন উন্নত বিশ্বের অনেক দেশেই অর্থনৈতিক সংকট দেখা দিয়েছিল, সেখানে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ তার অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ ভালোভাবেই মোকাবিলায় সক্ষম হয়েছিল।
মহামারি আর যুদ্ধের ধাক্কার পর গতিহারা অর্থনীতিতে প্রাণ সঞ্চার করাই যখন আওয়ামী লীগের নতুন সরকারের জন্য প্রধান চ্যালেঞ্জ মনে করা হচ্ছে, তখন অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব শেখ হাসিনা তুলে দিলেন দিনাজপুর-৪ আসন থেকে টানা চারবার নির্বাচিত সাংসদ আবুল হাসান মাহমুদ আলীর হাতে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির ছাত্র মাহমুদ আলী রাজনীতিতে আসার আগে ছিলেন পেশাদার কূটনীতিক। ইতোপূর্বে, তিনি অত্যন্ত দক্ষতা ও সফলতার সহিত দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেন।
পরবর্তীতে পাঁচ বছর পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকাকালীন বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কোন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হয়েছিলেন তিনি। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার সমুদ্রসীমা নির্ধারণী মামলার নিষ্পত্তি এবং ছিটমহল সমস্যার সমাধান তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। তাই ঊর্ধ্বগতির ডলারের দর, রিজার্ভ সঙ্কট এবং মূল্যস্ফীতির মত সমস্যা গুলো নিরসনে তিনি সক্ষম হবেন বলে শেখ হাসিনার পাশাপাশি সাধারণ মানুষও দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে।
সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি দ্রব্যমূল্য জনগণের ক্রয়সীমার মধ্যে রাখার ক্ষেত্রে অনেকটাই ব্যর্থ ছিলেন। মহামারি ও যুদ্ধ ছাড়াও দ্রব্যমূল্য বাড়ার আরেকটি কারণ ছিল অসাধু ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট। এই সিন্ডিকেট সমূলে বিনাশ করা কিংবা নিয়ন্ত্রণ করা তার পক্ষে সম্ভব হয়নি।
বিগত কয়েক জন বাণিজ্যমন্ত্রীর সফলতা-ব্যর্থতার খতিয়ান পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, ব্যবসায়ীদেরকে বাণিজ্যমন্ত্রী করা হলে তা সুখকর হয় না। কেননা তিনি জনগণের স্বার্থকে পাশ কাটিয়ে ব্যবসায়ীদের স্বার্থ সংরক্ষণে বেশি তৎপর থাকেন।
বিএনপির ২০০১ আমলে আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, আওয়ামী লীগের ২০০৯ আমলে লেফটেন্যান্ট কর্নেল ফারুক খান, সর্বশেষ টিপু মুনশি বাণিজ্যমন্ত্রী ছিলেন যারা আবার ব্যবসার সাথে জড়িত ছিলেন। তারা বাণিজ্যমন্ত্রী হিসেবে সফল ছিলেন এ কথা বলা যাবে না। পক্ষান্তরে, তোফায়েল আহমেদ (২ মেয়াদে) এর মত বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ বাণিজ্যমন্ত্রী ছিলেন। তিনি অত্যন্ত দক্ষতা ও সফলতার সহিত বাণিজ্য মন্ত্রণালয় চালিয়েছেন। জিনিসপত্রের দাম নিয়ন্ত্রণে প্রায় শতভাগ সফল ছিলেন। বাণিজ্যমন্ত্রী হিসেবে জিএম কাদেরও সফল ছিলেন।
বর্তমানে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী করা হয়েছে টাঙ্গাইল-৬ আসন থেকে নির্বাচিত আহসানুল ইসলাম টিটু-কে। তার সামনে দ্রব্যমূল্যের নিয়ন্ত্রণ ও বাজার ব্যবস্থায় স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার বড় চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে।
আওয়ামী লীগের ইশতেহারে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে এ বিষয়টি কে। বর্তমান প্রতিমন্ত্রী এ বিষয়ে সফল হবেন বলেই সবার প্রত্যাশা। তবে সাধারণ মানুষের মত আমারও প্রত্যাশা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্ব প্রধানমন্ত্রী নিজের হাতে রাখবেন। তাহলে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ অনেকাংশেই সম্ভব হবে।
স্বাস্থ্যসেবা খাত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিসেবে জাহিদ মালেক ছিলেন নানা কারণে আলোচিত-সমালোচিত। সে কারণে এ মন্ত্রণালয়ে মন্ত্রীর পরিবর্তন অবশ্যম্ভাবী ছিল। নতুন সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েছেন শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইন্সটিটিউটের প্রধান সমন্বয়ক অধ্যাপক ডা. সামন্ত লাল সেন। তিনি নতুন সরকারে টেকনোক্র্যাট মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন।
২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে ও পরে তৎকালীন বিরোধী দলের অগ্নি-সন্ত্রাস ও পেট্রোল বোমার কারণে বহু মানুষ অগ্নিদগ্ধ হয়। এদের চিকিৎসার জন্য তার দেয়া আলাদা বার্ন ইউনিট প্রতিষ্ঠার প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইন্সটিটিউট প্রতিষ্ঠা পায়। সেখানে এ ধরনের রোগীদের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করাসহ তার সার্বিক ভূমিকা অত্যন্ত প্রশংসিত হয়। তাই আশা করা যায় স্বাস্থ্যসেবা খাতে তিনি স্মার্ট চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে পারবেন।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েছেন ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। তিনি বয়সে অত্যন্ত তরুণ এবং উচ্চ শিক্ষিত। তিনি বিগত সরকারে অত্যন্ত সফলতার সহিত শিক্ষা উপমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন।
তাই বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে তিনি যুগোপযোগী ও বিশ্বমানের পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারবেন এবং স্মার্ট নাগরিক গঠনে মন্ত্রণালয় সামনে থেকে নেতৃত্ব দিতে সক্ষম হবেন বলেই সাধারণ জনগণসহ শিক্ষা পরিবারের সদস্যরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে।
এছাড়াও, পূর্ণ মন্ত্রীদের মধ্যে আ ক ম মোজাম্মেল হককে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়; ওবায়দুল কাদেরকে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়; আনিসুল হককে আইন মন্ত্রণালয়; নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূনকে শিল্প মন্ত্রণালয়; আসাদুজ্জামান খানকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়; মো. তাজুল ইসলামকে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়; মুহাম্মদ ফারুক খানকে বেসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রণালয়; ডক্টর মোহাম্মদ হাছান মাহমুদকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়; দীপু মনিকে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়; সাধন চন্দ্র মজুমদারকে খাদ্য মন্ত্রণালয়; আবদুস সালামকে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়; মো. ফরিদুল হক খানকে ধর্ম মন্ত্রণালয়; র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরীকে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়; নারায়ণ চন্দ্র চন্দকে ভূমি মন্ত্রণালয়; জাহাঙ্গীর কবির নানককে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়; মো. আবদুর রহমানকে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়; মো. আবদুস শহীদকে কৃষি মন্ত্রণালয়; ইয়াফেস ওসমানকে (টেকনোক্র্যাট) বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়; মো. জিল্লুল হাকিমকে রেলপথ মন্ত্রণালয়; ফরহাদ হোসেনকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়; নাজমুল হাসানকে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়; সাবের হোসেন চৌধুরীকে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। এদের অনেকেই গত মন্ত্রিসভার সদস্য ছিলেন এবং অত্যন্ত সফলতার সহিত দায়িত্ব পালন করেছেন।
এদের মধ্যে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত ওবায়দুল কাদের গত ২ মেয়াদে একই মন্ত্রণালয়ে অত্যন্ত দক্ষতা ও সফলতার সহিত দায়িত্ব পালন করেছেন। স্বপ্নের পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, কর্ণফুলী টানেল, ঢাকা-ভাঙ্গা রেললাইন স্থাপন, ঢাকা-চট্টগ্রাম চার লেনের রাস্তা নির্মাণসহ হাজার হাজার রাস্তা নির্মাণ ও সংস্কার এবং সেতু নির্মাণ তার আমলেই হয়েছে।
সুতরাং সে ধারাবাহিকতা বর্তমান সরকারের মেয়াদে বজায় থাকবে বলে সকলেই বিশ্বাস করে। এছাড়াও আসাদুজ্জামান খান কামাল, আ ক ম মোজাম্মেল হক, মো. তাজুল ইসলাম, ডক্টর মোহাম্মদ হাসান মাহামুদরা গত সরকারে মন্ত্রিসভায় কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছেন।
এ ছাড়া ১১ প্রতিমন্ত্রীর মধ্যে নসরুল হামিদকে বিদ্যুৎ বিভাগ; খালিদ মাহমুদ চৌধুরীকে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়; জুনাইদ আহমেদকে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়; জাহিদ ফারুককে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়; সিমিন হোসেন রিমিকে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়; কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরাকে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়; মহিবুর রহমানকে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়; মোহাম্মদ আলী আরাফাতকে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়; শফিকুর রহমান চৌধুরীকে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং রুমানা আলীকে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
এদের মধ্যে নসরুল হামিদ বিপু, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, জাহিদ ফারুক শামিম, জুনায়েদ আহমেদ পলকরা বিগত সরকারের এক বা এর অধিকবার মন্ত্রী সভায় অত্যন্ত সততা ও সুনামের সহিত দায়িত্ব পালন করেছেন। তারা সেই ধারাবাহিকতা বর্তমান মেয়াদেও অক্ষুণ্ণ রাখতে সক্ষম হবেন বলে সবার প্রত্যাশা।
পূর্ণমন্ত্রীর দায়িত্ব পাওয়া জাহাঙ্গীর কবির নানক অতীতে স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়া তিনি এবং আব্দুর রহমান অত্যন্ত সফলতার সহিত গত ৫ বছর দলকে পরিচালনা করেছেন।
মোহাম্মদ আলী আরাফাত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে গুজবের বস্তুনিষ্ঠ জবাব দেয়া, মিডিয়ায় সরকারের নানা সফলতা তুলে ধরা, হরতাল-অবরোধে বিরোধীদের পরিচালিত আগুন সন্ত্রাস ও নাশকতার সুনির্দিষ্ট তথ্য প্রমাণ নিখুঁতভাবে জনমানুষের সামনে তুলে ধরাসহ নানা কাজ অত্যন্ত দক্ষতার সহিত সামলেছেন। সুতরাং মন্ত্রিসভায় তারাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবেন বলে মনে করি।
সবশেষে বলা যায়, নব গঠিত সরকারের মন্ত্রিসভায় যেমন বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে কাজ করার মত অভিজ্ঞ সদস্য রয়েছেন, তেমনি অত্যন্ত সম্ভাবনাময় নতুন সদস্যও রয়েছেন। তারা প্রত্যেকেই তাদের স্ব স্ব দায়িত্ব সুনিপুণভাবে পালন করার ব্যাপারে দৃঢ়ভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আর তাদের উপরে যিনি আছেন, তিনি ইতোমধ্যে টানা চারবারসহ পঞ্চমবারের মত প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করতে যাচ্ছেন।
তিনি যেমন তার দৃঢ়চেতা ও সাহসী, দূরদর্শী ও স্বপ্নদর্শী নেতৃত্ব দিয়ে বাংলাদেশকে বিশ্বের বুকে অত্যন্ত মর্যাদার আসনে নিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছেন, তেমনি প্রভাবশালী বিশ্ব নেতৃত্বের কাতারে নিজেকে অধিষ্ঠিত করতেও সক্ষম হয়েছেন।
সুতরাং তার দিক-নির্দেশনা ও অন্যান্য মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের যৌথ প্রচেষ্টায় ইনশাআল্লাহ স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ সম্ভব হবে, সেই প্রত্যাশায় রইলাম। শুভ কামনা রইল নব গঠিত মন্ত্রিসভার জন্য।
লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগ, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় এবং সাবেক সাধারণ সম্পাদক, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি।