উৎপল মণ্ডল,শ্যামনগর
সাতক্ষীরার শ্যামনগরে সুন্দরবনের পাশ দিয়ে বয়ে চলা মালঞ্চ নদী থেকে দেদারছে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। উপজেলার মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়নের পুর্ব কালিনগর অংশে সুন্দরবন ও জনবসতিকে পৃথক করা নদীতে ড্রেজার মেশিন স্থাপন করে বালু উত্তোলনের এ মহোৎসব চলছে।সন্ধ্যা থেকে ভোর রাত পর্যন্ত উত্তোলনকৃত বালু কার্গোযোগে উপজেলার দাতিনাখালী, পুর্ব ও পশ্চিম দুর্গাবাটি এবং ঝাঁপালীসহ বিভিন্ন এলাকায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।বালু উত্তোলনে জড়িতরা দাবি করেছে বালু মহাল না হওয়া সত্তেও বুয়েট পরীক্ষায় ঐ অংশের বালুর গুনগত মান ভাল প্রমান পাওয়া গেছে।বাধ্য হয়ে উপকুল রক্ষা বাঁধ মেরামতের মত বৃহৎ স্বার্থে সেখান থেকে বালু সংগ্রহ করা হচ্ছে।সুন্দরবনের পাশের ঐ নদী থেকে বালু উত্তোলনে প্রশাসন তাদের অনুমতি দিয়েছে বলেও দাবি করেন বালু উত্তোলনে জড়িতরা।তবে স্থানীয়রা জানায় এলাকাটি প্রবল ভাঙন কবলিত।জনবসতি থেকে কয়েক শত গজ দুরত্বে সুন্দরবনের অবস্থান হওয়ায় সেখান থেকে বোরিং করে বালু উত্তোলনের ফলে সুন্দরবন ও জনবসতির সমুহ ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে।স্থানীয় জীব ও প্রাণ বৈচিত্র ধ্বংসের পাশাপাশি এলাকাজুড়ে ভাঙনের প্রবল শংকা রয়েছে বলেও দাবি তাদের। সরেজমিন দেখা যায় মুন্সিগঞ্জের সেন্ট্রাল কালিনগর এলাকায় পাশর্স্থ নদীতে অস্থায়ী একটি পল্টুন স্থাপন করা হয়েছে।সুন্দরবনের কয়েকশ গজের মধ্যকার ঐ জায়গায় স্থাপনকৃত পল্টন সংলগ্ন নদীর তলদেশে ড্রেজার মেশিন লাগিয়ে উত্তোলিত বালুতে একে একে পাঁচটি কার্গো ভর্তি করা হচ্ছে।প্রতিটি কার্গো বালু ভর্তি হওয়ার পর সেগুলো নির্দিষ্ট গন্তেব্যের উদ্দেশ্যে যাত্রা করলে অপর কার্গো ভর্তির কাজ শুরু হচ্ছে। এসময় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কোন লোকজনের দেখা না মিললেও পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপসহকারী প্রকৌশলী মাসুদ হোসেনকে বালু উত্তোলনের কাজ তদারকি করতে দেখা যায়।এলাকাবাসীসহ পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে জানা যায়,জাইকার অর্থায়নে র্আরাত কর্পোরেশন নামীয় প্রতিষ্ঠান শ্যামনগরের দুর্গাবাটি,ঝাঁপালী ও বুড়িগোয়ালীনি এলাকার ভাঙন কবলিত বাঁধের সংস্কার কাজ করছে।এসব এলাকায় বাঁধ মেরামতে জিও ব্যাগ ও টিউব ডাম্পিংসহ জিও ব্যাগ প্লেসিং কাজের জন্য প্রয়োজনীয় বালু সুন্দরবন ও জনবসতির মধ্যকার ঐ নদী থেকে সংগ্রহ করা হচ্ছে। স্থানীয়রা জানায়,সরকার ঘোষিত বালু মহালের পরিবর্তে জনবসতির পাশ থেকে বালু উত্তোলনে তারা আপত্তি করলেও বালু উত্তোলনে জড়িতরা সেসব আপত্তিতে কর্নপাত করছে না।উপজেলার বিভিন্ন অংশে র্আরাত কর্পোরেশন প্রায় একশ কোটি টাকার কাজের সমুদয় বালু সেখান থেকে সংগ্রগের খবরে তারা আতংকিত।এসব গ্রামবাসীর দাবি ভাঙনপ্রবণ এলাকা থেকে ড্রেজিং করে লাখ লাখ ঘনফুট বালু উত্তোলনের ঘটনায় জনবসতিসহ পাশের সুন্দরবনেরও ক্ষতির শংকা প্রবল।মুন্সিগঞ্জ কলেজর সহকারী অধ্যাপক স্বপন কুমার মন্ডল বলেন, আইলার পর থেকে প্রতি বছর তাদের বাড়ি সংলগ্ন এলাকার উপকুল রক্ষা বাঁধের বিভিন্ন অংশ ভাঙছে। গত কয়েক বছর অব্যাহত ভাবে পাউবো ভাঙন কবলিত উপকুল রক্ষা বাঁধ সংস্কার কাজও করছে। অথচ সেই পাউবো’র তত্তাবধানে ভাঙন কবলিত এলাকা থেকে বালু উত্তোলনের ঘটনায় তারা বিস্মিত।বালু উত্তোলনস্থলের পাশে বসবাসকারী সংবাদকর্মী বিভাস মন্ডল জানান,নদীর দু’পাশে সুন্দরবন ও জনবসতি।এমন একটি অতি স্পর্শকাতর অংশের ছোট নদী থেকে ড্রেজার লাগিয়ে বোরিং করে বালু উত্তোলনের ফলে জনবসতিসহ সুন্দরবনের জন্য মারাত্বক ঝুঁকি তৈরী হচ্ছে।তিনি অভিযোগ করে বলেন স্থানীয়রা বালু উত্তোলনে আপত্তি করায় পাউবো’র মাসুদ হোসেন প্রশাসনের লিখিত নির্দেশনাপত্র দেখাচ্ছে।মানুষের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিতের দায়িত্বে থাকা কতৃপক্ষের এমন সিদ্ধান্তে তারা যারপর নাই হতাশ। স্থানীয় পরিবেশ কর্মী কামরুজ্জামান বলেন,বোরিং করে বালু উত্তোলনের ফলে অনেক ধরনের ঝুঁকি তৈরী হতে পারে। তাছাড়া নির্দিষ্ট বালু মহালের পরিবর্তে সুন্দরবন ও জনবসতির মধ্যকার নদী থেকে বালু উত্তোলনে স্থানীয় জীব ও প্রান বৈচিত্রের সুমহ ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে। বালু উত্তোলনের বিষয়ে পাউবোর উপ-সহকারী প্রকৌশলী মাসুদ হোসেন বলেন,সরকার ঘোষিত বালু মহালের বালুর গুনগত মান ভাল না।মালঞ্চ নদীর সুন্দরবন সংলগ্ন সেন্ট্রাল কালিনগর এলাকার বালু বুয়েট টেষ্টে ভাল বলে সনদ পাওয়ায় সেখান হতে বালু সংগ্রহে প্রশাসন অনুমতি দিয়েছে।সুন্দরবন ও জনবসতির ক্ষতির শংকার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষন করা হলে তিনি বলেন,জাইকার প্রায় একশ কোটি টাকার কাজ ফেরত যাতে না যায় সেজন্য ঐ এলাকা হতে বালু নিয়ে কাজ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান র্আরাত কর্পোরেশনের স্বত্তাধিকারী সবুজ খান বলেন পরীক্ষা নীরিক্ষা করেই প্রশাসন ঐ অংশ থেকে বালু উত্তোলেনর অনুমতি দিয়েছে। সুন্দরবন ও এলাকার ক্ষতি হলে প্রশাসন আমাকে বালু উত্তোলনের অনুমতি দিতেন না। এবিষয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক কাজী আরিফুজ্জামান বলেন পানি উন্নয়ন বোর্ড তাদের প্রজেক্টের জন্য সুপারিশ করায় হয়তবা সেখান থেকে বালু উত্তোলনের অনুমতি দেয়া হয়।তবে যদি এলাকা ও সুন্দরবনের ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে বিষয়টি নিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে ভাবতে হবে।